ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গোপালগঞ্জে ধর্ষিতার সন্তানের দায়িত্ব নিলো রাষ্ট্র

জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১০

গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে ধর্ষিত কিশোরীর শিশু সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ধরনের দায়িত্ব নেওয়ার ঘটনা দেশে এটাই প্রথম বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন।



তিনি বৃহস্পতিবার শিশুটির মায়ের হাতে তার তিন বছরের ভরণপোষণের অর্থ বাবদ ২৭ হাজার টাকার চেক তুলে দেন।

চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ সুপার মো. আব্দুল কুদ্দুছ আমীন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার মনোনীত প্রতিনিধি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খান আবু মিয়া, পৌর মেয়র হাসমত আলী সিকদার চুন্নু, মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের গোপালগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী হাবিবুর রহমান মল্লিকসহ প্রশাসনের পদস্থ কমকর্তা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের গোপালগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী হাবিবুর রহমান মল্লিক জানান, বিগত ২০০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর কাশিয়ানী উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের রাজিবুল শেখ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবেশী ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করলে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে এবং একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়।

রাজিবুল ও তার পরিবার বিষয়টি অস্বীকার করলে কিশোরী বাদি হয়ে ২০০৫ সালের ১৯ মার্চ মাদারীপুর লিগ্যাল এইডের সহায়তায় গোপালগঞ্জের প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্র্রেট আদালতে ধর্ষককে আসামি করে মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাশিয়ানী থানার এসআই মো. জহিরুল ইসলাম তদন্ত শেষে রাজিবুলকে অভিযুক্ত করে ওই বছরের ১৪ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

২০০৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মো. মাহবুবুল ইসলাম স্যাগ্রহণ শেষে আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও আনাদায়ে আরও ছয় মাস সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন।

আদালতের রায়ে আরও বলা হয়, ধর্ষিত কিশোরীর শিশু সন্তান মায়ের হেফাজতে থাকবে। সে তার বাবা-মায়ের নাম ব্যবহার করতে পারবে। ২১ বছর পর্যন্ত রাষ্ট্র ওই শিশুর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে এবং ২১ বছরের মধ্যে বিয়ে না হলে রাষ্ট্র তার বিয়ের ব্যবস্থা করবে।

জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হয়। মন্ত্রিপরিষদ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয় ২১ বছর পর্যন্ত শিশুটির ভরণপোষণের সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রণালয় প্রথম ৩ বছরের ভরণপোষণ বাবদ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। দ্বিতীয় বছর থেকে ভরণপোষণের টাকা প্রতি বছর ১০% হারে বাড়িয়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। সে হিসাবে ২১ বছরে ওই শিশুকে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ২৫২ টাকা দেবে রাষ্ট্র।

জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ঘটনার পর সন্তান নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ওই কিশোরীকে সামাজিকভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে। রাষ্ট্র ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ায় এ সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।