ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নো কমেন্টস!

আসাদুল হক খোকন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১১
নো কমেন্টস!

গ্রামে গেলে সবাই ভীড় করে, বলে ঢাকার তাজা খবর বলেন। গ্রাম এখন আর গ্রাম নেই।

বাড়ি বাড়ি ডিশের লাইনে ১০০টা চ্যানেল, বাজারে চায়ের দোকানগুলোতে কালার টেলিভিশন, দু’একটা সংবাদপত্রও আছে কোনও কোনও ঘরে, কাঁচা ধুলোধুসরিত কখনো কর্দমাক্ত এবরোথেবরো রাস্তা এখন কার্পেটেড হয়েছে আর মোবাইল ফোন তো আছেই।

তবুও তারা আমার মুখ থেকে ঢাকার তাজা খবর শোনার উপর আস্থা রাখে।   এবার যেতেই সেই সনাতন প্রশ্ন আবার- আজকের তাজা খবর কী?

শেয়ার বাজারের পৌনঃপুনিক দড়পতন ছাপিয়ে তাজা হটকেক খবর বলতে তো এখন মার্কেটে ড. মোহাম্মদ ইউনূস আর ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে মাত্র ৫৮ রানে বাংলাদেশ দলের লজ্জাজনক পরাজয় আলো (মতান্তরে অন্ধকার) ছড়িয়ে যাচ্ছে।

আমি কিছু বলার আগেই কে যেন একজন মন্তব্য করলো- টাইগাররা বিলাই হইয়া গেছে। খালি বড় বড় বুলি, কালকের খেলা দেইখা মনে হইলো যেন তামাসা করতে মাঠে নামছে।

যেন আগুনে ঘৃতাহুতি হল। আসরের মুরুব্বি ইন্তাজ আলী তার স্বভাবসুলভ গাম্ভীর্য্য ত্যাগ করে চরম ক্ষোভ নিয়ে বলে উঠলৈন, ‘যে খেলা খেলছে কাইলকা তাতে ওগোর জার্সি খুইলা কাচা কঞ্চি দিয়া পিঠের মধ্যে পিটানোর কাম আছিলো!’

আর একজনের মন্তব্য আরো একটু সরস- খেলায় ভাল করলে পুরষ্কার আর খারাপ করলে জরিমানার নিয়ম  করা উচিত। তাইলে আর দেশের লগে ফাইজলামি করতে পারতো না। অপরিচিত লোকটির এই মন্তব্য উপস্থিত সবাই এক বাক্যে সমর্থন করলো। আমি নিজেও এমনটাই ভাবি। না ভাববার কি কোনও কারণ আছে?

ইন্টার পাশ ভাতিজি ঊর্মিটা বললো- মাঠে রয়েল বেঙ্গল র‌্যাটদের দেইখা মনে হইছে অরা অ্যাদ্দিন টেলিভিশনে খেলা দেখছে। আইজকাই পরথম ব্যাট হাতে খেলতে নামছে!

আমি কোনও কথা বলারই সুযোগ পাই না। বোঝা গেল জাতির ওপর মহাখাপ্পা এখন এই জাতি নিজেই! বাকি আল্লাহ ভরসা।

ভাবনায় আবারও চলে আসে ক্রিকেট!

দেশে একসময়ের জনপ্রিয় ফুটবল খেলা এখন ক্রিকেটের জোয়াড়ের তোড়ে ভেসে যাবার উপক্রম হয়েছে। সারা বিশ্বে হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র দেশে ক্রিকেটের দাপাদাপি। বাকি অনেক দেশেই এর প্রচলন এমন কি টিভি স্ক্রিনেও খেলা দেখায় আগ্রহের মাত্রা খুবই নিচে। কিন্তু বাংলাদেশে আগ্রহের কোনও কমতি নেই। সপ্তাহে দরকার হলে দু’চারদিন না খেয়ে থাকতেও রাজি আমরা। এমনকি চালের কেজি ১০০ টাকা হলেও আমদের কোনও আপত্তি নেই। আগামী গ্রীষ্মে টানা এক সপ্তাহ বিদ্যুৎ না থাকলেও কোনও সমস্যা নেই, প্রয়োজনে বিবরবাসী হব, অন্ধকারেই হবে আমাদের ডিজিটাল বসবাস। কিন্তু ক্রিকেট, ক্রিকেট ছাড়া আমাদের চলবে না। এ যেন আমাদের বাপদাদা চৌদ্দগুষ্টির ভিটে মাটি, তাকে ছেড়ে আমাদের চলবেই না।   বিশ্বের যে সব দেশে ক্রিকেট নেই তাদের চলছে কী করে?
   
নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস নিজে এবার একটা তাজা খবর হয়েছেন। একটি দৈনিকে তাকে নিয়ে ড. মোহাম্মদ জাফর ইকবাল একটা বড়সড় উপসম্পাদকীয় লিখেছেন। তাতে সার কথা হলো, গ্রামীণ ব্যাংক এবং ইউনূসকে নিয়ে নানা বিতর্ক থাকতেই পারে। সেসবের সত্যতা সরকারকের স্বচ্ছভাবে তুলে ধরতে হবে। আর নোবেল পুরস্কার জাতির জন্য বিরাট একটি পাওনা বিশেষ করে প্রবাসি বাঙালিরা ইউনূসের পরিচয়ে কিছু সুবিধা পেতে পারেন। হঠাৎ টর্নেডো গতিতে তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে সরকার নিজেই বিতর্কে জড়িয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের সাধ্যমত সংবাদ মাধ্যম ও জনসাধারণকে বুঝিয়েছেন যে, এটা সঠিক এবং আইনের সব নিয়ম মেনেই তা করা হয়েছে। কিন্তু; সংবাদ মাধ্যম এবং জনসাধারণ কি তাদের সে সব ‘গড় নির্ণয়’ বিশ্বাস করেছেন?

গড় নির্ণয়ের একটা গল্প বলি-

অংক শাস্ত্র নিয়ে বিলেত থেকে পড়াশোনা শেষে ডক্টরেট নিয়ে দেশে ফিরছেন এক ভদ্রলোক। বাড়ি যেতে ছোটখাট একটি নদী পাড়ি দিতে হবে। সিদ্ধান্ত নিলেন ঘোড়ার গাড়িতে চেপে নদী পাড়ি দেবেন। কোচওয়ান বললো - স্যার, দু’এক জায়গায় পানি বেশি তাই গাড়িতে পাড় হওয়া যাবে না। ডক্টরেট বললেন- এক কাজ কর, নেমে গিয়ে কোথায় কতটুকু পানি তার মাপ আমাকে বল। তার কথামত কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমড় পানি, কোথাও গলা পানি আবার কোথাও আরও গভীর পানি পাওয়া গেল। ডক্টরেট এবার সবগুলোর গড় করে পেলেন কোমড় পানি।
 
কোচওয়ানকে বললেন- চালাও গাড়ি। গাড়ি চললো । হাঁটু পানি, কোমড় পানি এবং গলা পানিতে বেঁচে গেলেও সাঁতার না জানা অংক শাস্ত্রবীদ অথৈ পানিতে ডুবে নাকানি-চুবানি খেয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে পাড়ে  উঠে কোচোয়ানকে জিজ্ঞেস করলেন- এমন হলো কেন?

কোচোয়ান বললো - স্যার, সব জায়গায় গড় নির্ণয় চলে না।  
পাঠক কি বলেন, চলে?

বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad