ঢাকা: রাজনৈতিক অস্থিরতায় উত্তপ্ত লিবিয়া থেকে জীবনরায় গ্রিসে নিয়ে যাওয়ার সময় জাহাজ থেকে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়লে তিন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাতের ওই ঘটনায় আরও ১৪ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার সন্ধ্যায় এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানায়, ‘গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের হানিয়া বন্দরে ভিড়লে জাহাজ থেকে ৪৭ জন বাংলাদেশি পানিতে লাফিয়ে পড়েছিলেন। ’
‘ওই ঘটনায় তিন জনের লাশ পাওয়া গেছে এবং ১৮ জন হাসপাতালে আছেন’ বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান।
তবে ওই ঘটনায় কতজন নিখোঁজ আছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
হানিয়া বন্দরের ওই ঘটনার বিষয়ে রোববার রাত সোয়া নয়টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলে, ‘গ্রিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আজিজুল হক সেখানে রয়েছেন এবং তিনি স্থানীয় কর্তৃপরে সঙ্গে কাজ করছেন। ’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দাইয়ু ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন কোম্পানির ২ হাজার ৪২ জন বাংলাদেশি কর্মী নিয়ে দুইটি জাহাজ ক্রিট দ্বীপের হানিয়া বন্দরে যায়।
গ্রিস কর্তৃপরে বরাত দিয়ে দেশটি থেকে একাধিক বার্তা সংস্থার পরিবেশিত খবরে বলা হয়, ওই বাংলাদেশিরা জাহাজ থেকে দড়ি বেয়ে নিচে নেমে পানিতে লাফিয়ে পড়ে।
ঘটনার কিছু সময় পড়েই দুই জনের লাশ পাওয়া যায় এবং তীরে ওঠার পর শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় অন্য একজনের মৃত্যু হয়। এখনো অনেকে নিখোঁজ থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে এদের অনেকে হয়তো তীরে উঠতে সম হয়েছেন।
যাত্রীবাহী যে ছোট আকারের জাহাজটি থেকে ওই বাংলাদেশিরা পানিতে নেমেছিল তার নাম ‘আয়োনিয়ান কিং’। জাহাজটি সাইপ্রাসের পতাকাবাহী একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী জাহাজ।
বাংলাদেশের পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ওই ঘটনায় ১৮ জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তারা কেন এভাবে পানিতে লাফিয়ে নেমেছিলেন সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে।
তবে গ্রিক কর্তৃপ বলছে, ‘অবৈধভাবে গ্রিসে প্রবেশের আশায় হয়তো তারা লাফিয়ে পানিতে নেমেছিলেন। ’
এর আগে গত শুক্রবারও গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে কয়েকজন বাংলাদেশির পালিয়ে যাওয়ার খবর জানা গেছে।
পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস শনিবার এ ধরনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘এর ফলে আটকে পড়া অন্যদের সেসব দেশে আশ্রয় দেওয়ার কাজটি কঠিন হয়ে পড়ে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘মানবিক আশ্রয়দাতা ওই দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশ সরকার বন্ড দিয়েছে। ফলে এর দায় বাংলাদেশকেই বহন করতে হবে। ’
ইউরোপের এই দেশটিতে অবৈধ বাংলাদেশির সংখ্যা একবারেই নগন্য নয় বলেও বিভিন্ন সূত্র জানায়।
উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে এভাবে আফ্রিকা, দণি ও দণি-পূর্ব এশিয়ার অনেক নাগরিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপের স্পেন, ইতালি, গ্রিসসহ ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোতে অভিবাসনের চেষ্টা চালায়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১১