ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ঝিনাইদহে ট্রেন-বাস সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১

রুপক আইচ, মিলন রহমান, হাসান অনিক ও ঝিনাইদহ ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৪
ঝিনাইদহে ট্রেন-বাস সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের বারোবাজারে বরযাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। বাসের ৭০ জনেরও বেশি বরযাত্রী আহত হয়েছেন।

 

শুক্রবার ভোরে বারোবাজার রেলক্রসিংয়ে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে ৯ জন নিহত হন। অন্য একজন আহতকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। পরে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে আরো একজন মারা যান। এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে।  

নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ ঘটনার সাড়ে আট ঘণ্টা পর দুপুর ১২টায় দুর্ঘটনা কবলিত বাসটিকে রেললাইন থেকে অপসারণ করায় ওই পথে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
 
নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের ৩ জনসহ ৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- শৈলকূপা উপজেলার ফুলহরি কাজীপাড়া গ্রামের সুধীর কুমার (৪০), বিপ্লব (২৫), শোভন কুমার (২), কৌশিক (৮), সুজয় (৩০), কৃষ্ণা (৩০), বন্যা (৩৫), সঞ্জয় (৩৪), সঞ্জিত কুমার (৩২) ও উজ্জল দাস (২৫)। আহতদের মধ্যে ৩০ জনকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ৪ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ও বাকিদের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দুর্ঘটনা কবলিত সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি সৈয়দপুর থেকে খুলনার দিকে যাচ্ছিল।

ট্রেনের অ্যাটেনডেন্ট আব্দুল হান্নান জানান, ভোর সাড়ে ৩টার দিকে সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি বারোবাজার স্টেশন পার হয়। এর ৫ মিনিট পরেই বিকট শব্দ শুনে দুর্ঘটনার বিষয়টি টের পান তারা। বারোবাজার রেলক্রসিংয়ে একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ট্রেনটি বাসটিকে প্রায় দেড় কিলোমিটার ঠেলে নিয়ে যায়। এ সময় আশপাশে ছিটকে পড়তে থাকেন বাসযাত্রীরা। প্রায় দেড় কিলোমিটার পার হয়ে ট্রেনটি থামানো হয়।

আহত বাসযাত্রীরা জানান, তারা ঝিনাইদহের শৈলকূপার ফুলহরি গ্রাম থেকে সনাতন ধর্মের একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে বরযাত্রী হিসেবে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সাঁকো গ্রামে যান। বাসটিতে ৭০ জনের বেশি বরযাত্রী ছিলেন। ফেরার পথে ভোর তারা দুর্ঘটনা কবলিত হন।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার সাঁকো মথনপুর গ্রামের সুবল বিশ্বাসের মেয়ের বিয়ে শেষে বরযাত্রীবাহী বাস বারোবাজার রেললাইন ক্রসিং অতিক্রম করছিল।

তিনি আরো জানান, এ সময়  সৈয়দপুর থেকে খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেন বাসটিকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের ৩ জনসহ ৯ জন নিহত হন। ফরিদপুর যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন সঞ্জিত নামে একজন এবং কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরো এক বরযাত্রী।

বারোবাজার হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকিমুর রহমান জানান, দুর্ঘটনার পর হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি এলাকাবাসীও উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেন। পরে খবর পেয়ে ঝিনাইদহ, যশোর, কোটচাঁদপুর ও কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে আহত ও নিহতদের উদ্ধার করেন।

এখনো উদ্ধার অভিযান চলছে। এখনও ট্রেনের নিচে ও দুর্ঘটনার দেড় কিলোমিটারের মধ্যে নিহত ও আহতদের কেউ পড়ে আছেন কিনা তা খুঁজে দেখা হচ্ছে।

কোটচাদপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৯টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজনের লাশ ফরিদপুর থেকে ঝিনাইদহে আনা হচ্ছে। অপর লাশটি কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান জানান, উদ্ধারকৃত লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম জানান,  দুর্ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩ দিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক আরো জানান, দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটি রেললাইনের ওপরে থাকায় খুলনার সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এদিকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, যশোরে ভর্তি ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান ও রেলের কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

খবর পেয়ে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারের (ডিআরএম) নেতৃত্বে ৫ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি দল পাকশী থেকে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন।

বারোবাজারের বাসিন্দা আজাদ হোসেন অভিযোগ করেন, রেলক্রসিংয়ে ২ জন গেটম্যান মমিন ও হুমায়ূনের ডিউটি ছিল। কিন্তু  শুক্রবার দুর্ঘটনার সময় তারা সেখানে ডিউটিরত ছিলেন না। ফলে এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার রেল লাইনের উপর থেকে দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি সরিয়ে নেওয়ার পর ওই পথে পুনরায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্বদানকারী রেলওয়ের রাজশাহী জোনের জিএম আব্দুল আওয়াল বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা থেকে রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজ শুরু করলে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উদ্ধার অভিযান শেষ হয়।

এরপর দুপুর ১২টা থেকে ওই পথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

তিনি আরো জানান, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য রেলওয়ের কর্মীরা দ্রুত বাসটি অপসারণ করে। দুপুর ১২টার পর থেকে সিডিউল অনুযায়ী এখন ট্রেন চলাচল করছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৪/আপডেট: ০৯৫৭ ঘণ্টা

**ঝিনাইদহে ট্রেন-বাস সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০
** ঝিনাইদহে ট্রেন-বাস সংঘর্ষে ৯ জন নিহত (ভিডিওসহ)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।