ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চট্টগ্রামে যুবদলের সমাবেশে সংঘর্ষ, আহত ২০

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১১

চট্টগ্রাম : চরম বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে চট্টগ্রামের লালদীঘির মাঠে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহাসমাবেশ শেষ হয়েছে।

কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এই মহাসমাবেশে বিএনপির প্রভাবশালী দুই নেতা নোমান ও খসরু নেতৃত্বাধীন যুবদলের কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এতে কমপক্ষে ২০ নেতা-কর্মী আহত হয়।   মঞ্চ দখল, ম্লোগান, পাল্টা স্লোগান এবং সমাবেশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা জানান।

নোমান অনুসারী চট্টগ্রাম নগর যুবদল সভাপতি আবুল হাশেম বক্কর এবং খসরু অনুসারী যুবদল সাধারণ সম্পাদক কাজী বেলাল উদ্দিনের সমর্থক কর্মীদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
 
আহতদের মধ্যে ১১ জনের মধ্যে নাম জানা গেছে । এরা হচ্ছেন- আলাউদ্দিন (৩৫), আজগর (২৮),ইয়াছিন (২২), সাজ্জাদ হোসেন (২৫),ওয়াসিম (৩২), মিঠু , হাসান, আব্দুল্লাহ, টিটু, মিঠু ও জনি।

এদের মধ্যে প্রথম পাঁচ জন আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়,  অনুষ্ঠান শুরুর আগে দুপুর ২টার দিকে মঞ্চ দখল নিয়ে বক্কর এবং বেলাল গ্রুপের মধ্যে প্রথম ধাক্কা-ধাক্কি এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে বক্করের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর সমাবেশ চলার সময় চার দফায় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিকে সমাবেশ চলার সময় বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ থাকলেও তারা অনেকটা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। এ সময় লালদীঘির ময়দান সংলগ্œ রাস্তায় যান চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
 
এদিকে গত জুনে চট্টগ্রাম সিটিকরপোরেশন নির্বাচনের পর বুধবার এই সমাবেশে প্রথমবারের মতো এক মঞ্চে ওঠেন চট্টগ্রাম বিএনপির পরস্পর বিরোধী দুই নেতা নোমান ও খসরু। কিন্তু সমাবেশ চলার সময়  দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা মঞ্চ দখল, ব্যাপক শোডাউন এবং প্রতিপক্ষের কর্মীদের ঘায়েল করতেই ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় ধারালো ছুরি ও কিরিচ নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে অনেক কর্মীকে। চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ির সময় হুড়োহুড়ির সুযোগে বেশ কয়েকজন কর্মীকে ছুরিকাঘাত করে প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মীরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো সমাবেশে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে।
 
মূলত যুবদলের এই মহাসমাবেশের মধ্যে দিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা ও শক্তি প্রদর্শনের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন নোমান ও খসরু নেতৃত্বাধীন যুবদলের দুই নেতা।

সমাবেশে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থকদের সমাগম ঘটলেও কর্মীদের ওপর নেতাদের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।

সংঘর্ষের কারণে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ খুব সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন।

সরকার যুবদলের সমাবেশ বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এমপি শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।

যুবসমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশারফ হোসেন।   সমাবেশ উদ্বোধন করেন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।   প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব। যুবদল সভাপতি আবুল হাশেম বক্করের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ-আল-নোমান। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমির খসর মাহমুদ চৌধুরী ও মীর মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, উত্তর জেলা বিএনপি সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, দণি জেলা বিএনপি সভাপতি জাফরল ইসলাম চৌধুরী এমপি, উত্তর জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরী যুবদল, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কেএমআই খলিল।
 
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘এই মহাসমাবেশের মধ্যে দিয়ে জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামবাসী অনাস্থা প্রকাশ করেছে। এই সরকার যেসব ওয়াদা করেছিল তার একটিও পূরণ করতে পারেনি । এই সরকার মানুষের  নিরাপত্তা দিতে পারছে না, বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও দাম বাড়িয়েছে। কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর লাশ ঝুললেও তার প্রতিবাদ করতে পারেনি সরকার। ভারতকে খুশি করার জন্য দেশের স্বার্থ পদদলিত করেছে, তাদের হাতে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়। ’

তিনি বলেন, ‘জনগণ এই সরকার চায় না। সরকার বুঝতে পেরেছে তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই নিজেদের ব্যর্থতাকে ধামাচাপা দিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। ’
 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন, শেয়ার বাজারে নিয়ন্ত্রণ করছে বিএনপি। সরকারে আছেন তারা অথচ দ্রব্যমূল্য এবং শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বিএনপি, জনগণ তার এই বক্তব্য শুনে হেসেছে। ’
 
মোশারফ হোসেন বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষা এবং বিশ্বকাপের কারণে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় বিএনপি কোনো কর্মসূচি দেয়নি। ’

চট্টগ্রাম সিটিকরপোরেশন নির্বাচনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পৌরসভা নির্বাচনেও জনগণ সরকারকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জুলুমবাজ, দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটাতে হবে। ’

এ জন্য জনগণকে আন্দোলন-সংগ্রামে আহবান জানাতে সমাবেশে যুবদলের কর্মীদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
 
বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুক জাতীয় সংসদের স্পিকাররের প্রতি অবিলম্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মুক্তি দিয়ে সংসদে আসার সুযোগ করে দেওয়ার আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি  বলেন, ‘শেখ হাসিনা ওয়াজেদ দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে আপনাকে শ্রদ্ধা করতে পারি না। কারণ, আপনি মঈন-ফখরউদ্দিনকে নিয়ে পালার্মেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনেছেন। দেশের জনগণের তা জানা আছে। ’

ফারুক বলেন, ‘আজ লিবিয়ায় হাজার হাজার বাংলাদেশির জীবন বিপন্ন, ‘আর আপনার দীপু মনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী ) হাস্যজ্জে¦াল মুখে বলছেন চেষ্টা করব। হাইকোর্ট সাতটি সংশোধনী আনার নির্দেশ দিলেও আপনি ৫৪টির বেশি সংশোধনী এনে সংবিধান পুনর্মুদ্রন করেছেন, যা আজ পর্যন্ত সংসদকে অবহিত করেননি। আপনি সংসদকে অপমান করছেন। সংসদকে অকার্যকর করে রেখেছেন। ’

তিনি বলেন, ‘সংসদে দাঁড়িয়ে আমরা সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে ফেলানী হত্যার কথা বলতে পারি না, আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কথা বলতে পারি না। খালেদা জিয়া সংসদে যেতে পারেন না। ’
 
খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া এবং আরাফাত রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত বিএনপি সংসদে যাবে না বলেও তিনি ঘোষনা দেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং নগর বিএনপির সভাপতি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী অবিলম্বে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মুক্তি দাবি করে বলেন, ‘এই সরকার প্রহসনমূলক বিচার করছে, যা এরই মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে বাতিল হয়ে গেছে। এই বিচার হতে পারবে না। ‘
 
আওয়ামী লীগ সরকার জাতিকে অন্ধের হাতে তুলে দিচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে বাকশালীদের পতন হবে। প্রথমবারে মতো বিএনপি চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করেছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ১৫টি আসনে আওয়ামী লীগকে হারাবে। ‘
 
উত্তর জেলা সভাপতি গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশ ও বিচারবিভাগ বিশ্বের দরবারে আজ প্রশ্নবিদ্ধ । দুই বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী অনেক সাফল্যের কথা বললেও এই দুই বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে একটি কথাও বলেননি। তাদের শিকার হয়েছি আমি  ও আমার পরিবার। পুলিশের গোয়েন্দা বাহিনী  আমার ভাইকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে রক্তাক্ত করে কোর্টে পাঠিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে এক হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। বিশ্বকাপের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানকে বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠান বলেও তিনি কটাক্ষ করেন।  
 
বাংলাদেশ সময় : ২২২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।