ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছাত্র-এলাকাবাসী সংঘর্ষে রুয়েট ক্যাম্পাস রণত্রে

অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজে আগুন: আহত ১৫, ৪ সাংবাদিক লাঞ্ছিত

রাবি প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১১

রাবি: শহীদ মিনারের বেদীতে পা রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিার্থী, রুয়েট অভ্যন্তরের অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে ত্রিমুখি সংঘর্ষে বুধবার রণেেত্র পরিণত হয় রুয়েট ক্যাম্পাস।

দুপুর থেকে শুরু হয়ে দফায় দফায় চলা এ সংঘর্ষে কমপে ১৫ জন আহত হয়েছেন।

এদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।

রুয়েটের বিুব্ধ ছাত্ররা বুধবার অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্থানীয় সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলা চালানোসহ ওই স্কুলে আগুন লাগিয়ে দেয়। একই সঙ্গে তারা সাংবাদিকদের মারধর করাসহ তাদের ক্যামেরাও ভাঙচুর করে।

এ ঘটনায় উভয়পরে মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রত্যদর্শী, রুয়েট ক্যাম্পাস ও মতিহার থানা সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুর ১টার দিকে রুয়েট ক্যাম্পাসে নবনির্মিত শহীদ মিনারের বেদীতে পা রেখে বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান ও বিপু। এ সময় রুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের তৃতীয়বর্ষের ছাত্র তারেক এবং কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তৃতীয়বর্ষের ছাত্র পাভেল তাদের বেদীতে পা রাখতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে উভয়পরে মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাসানের গালে থাপ্পর মারেন তারেক। এরপর তারা সবাই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যান।

পরে দুপুর ২টায় রুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ছাত্র রাসেল, ইমরান, রিয়াদ, রিপন কবির, সাদি এবং মহসিন রুয়েট পাশ্ববর্তী তালাইমারী এলাকার একটি হোটেলে খাবার খেতে যান। এ সময় অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান স্থানীয় কয়েকজন সন্ত্রাসীকে সঙ্গে নিয়ে ওই হোটেলে গিয়ে রুয়েট ছাত্রদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালালে তারা মারাত্মক আহত হন। তাদের গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে রুয়েট ছাত্রদের মারধরের খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে রুয়েটের ছাত্ররা বিুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় রুয়েট ক্যাম্পাসে অবস্থিত অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলে হোসেন বাদশার উপস্থিতিতে বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। রুয়েটের বিুব্ধ ছাত্ররা ওই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেন। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ফজলে হোসেন বাদশা।

রুয়েটের উত্তেজিত ছাত্ররা এরপর অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালান এবং বেলা দেড়টার দিকে তারা অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।

আগুনে ওই অফিসের চেয়ার-টেবিল, দরজা, জানালাসহ অন্যান্য আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

খবর পেয়ে বেলা আড়াইটার দিকে রাজশাহীর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।

এ ঘটনার জের ধরে স্থানীয় এলাকাবাসী অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে রুয়েটের ছাত্রদের ওপর যৌথ হামলা চালায়। এ সময় উভয়পরে মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও পরস্পরকে ল্য করে ইট-পাটকেলও নিেেপর ঘটনা ঘটে।
 
বিকেল ৩টার দিকে রুয়েটের ছাত্ররা রুয়েট পার্শ্ববর্তী তালাইমারী এলাকায় রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশি বাধায় তারা শেষ পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করতে পারেননি।

এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সাংবাদিকেরা এ সময় ছবি তুলতে গেলে রুয়েটের বিুব্ধ ছাত্ররা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে তারা দৈনিক যুগান্তরের রাজশাহী অফিসের ফটোসাংবাদিক আব্দুল্লাহ ইকবাল, স্থানীয় দৈনিক সানসাইনের ফটোসাংবাদিক আবদুস সামাদ, বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভির ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ রুবেল এবং স্থানীয় দৈনিক উপাচারের সাংবাদিক কাবিলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় তারা আব্দুল্লাহ ইকবালকে অস্ত্র দেখিয়ে জোর করে তার ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং আব্দুস সামাদের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর করেন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ও জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাজশাহীতে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা রুয়েট পার্শ্ববর্তী তালাইমারী এলকায় বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় সেখানে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জোর দাবি জানানো হয়।

পরে সাংবাদিকেরা রাজশাহী জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনারসহ রুয়েট উপাচার্যের সঙ্গে সাাৎ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে তারা ক্যামেরা ভাঙচুরের তি পূরণেরও দাবি জানান।

রুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সিরাজুল করিম চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘শিা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। ’

তিনি বলেন, ‘ ক্যাম্পাস পরিস্থিতি এ মুহূর্তে শান্ত রয়েছে। এ ঘটনার জের ধরে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ’

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ক্যাম্পাস এখন শান্ত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।