ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ব্যবসায়িক স্বার্থে ড. ইউনূস ’৯৬ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ব্যবহার করেছিলেন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১১
ব্যবসায়িক স্বার্থে ড. ইউনূস ’৯৬ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ব্যবহার করেছিলেন

ঢাকা: বিচারপতি হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ড. মুহম্মদ ইউনূস দেশের স্বার্থ বিকিয়ে জাপানি কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।  

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনের মাত্র ৬দিন আগে তৎকালীণ চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর (পরে এম এ হান্নান এবং বর্তমানে হযরত শাহ আমানত) নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করানো হয়।



যার ব্যয় ধরা হয় এর আগে নির্বাচিত সরকার প্রধান অনুমোদিত ২৩৫ কোটি টাকার স্থলে ১৩০ শতাংশ বাড়িয়ে ৫৪০ কোটি টাকা।

অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, জাতীয় স্বার্থের নাম করে এধরনের লোকসানী প্রকল্প অনুমোদন ঐ সরকারের রুটিন কাজের মধ্যে ছিলো না। বিষয়টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়েরও আওতাধীন নয়। এ বিষয়ে কোন উপদেষ্টা (কাউন্সিল) কমিটি গঠন না করায় তার ভূমিকা পালনের কোনো সুযোগও ছিল না। ফলে সংবিধান ও উপদেষ্টার শপথ ভঙ্গ করেই গ্রামীণফোন কনসোর্টিয়ামে গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী জাপানি ঠিকাদার মারুবেনী কর্পোরেশনের স্বার্থে দেশের স্বার্থ ুন্ন করেছিলেন।

এ ব্যাপারে জাপান সরকারের চাপও থাকলেও একনেক সভার মাত্র ৬দিন পর নির্বাচিত নতুন সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য বিষয়টি রেখে দেয়া যেত। সার্বভৌম বাংলাদেশের ওপর জাপান সরকারের অনৈতিক চাপ দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিলনা।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য ১৯৮৯ সালে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) সমীা চালায়। ১৯৯০ সালে জাপানকে অর্থায়নের জন্য অনুরোধ করা হয়। এজন্য ১৯৯১ সালে ২৩৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প সারপত্র (পিসিপি) একনেকে অনুমোদিত হলেও জাপান অর্থায়ন করেনি। এ পর্যায়ে এর সাথে ওভারসিজ ইকোনমিক কো-অপারেশন ফান্ড (ওইসিএফ) যুক্ত হয়ে ৩০ কোটি ৩০ লাখ ইয়েন ব্যয়ে নিজস্ব পরামর্শকের মাধ্যমে প্রকৌশল সমীা চালায়। এর ভিত্তিতে ৬১১ কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়ে পিসিপি প্রণীত হলে তা সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এতে প্রকল্পটিকে আর্থিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে অলাভজনক বলে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে সার-সংপে উপস্থাপন করা হলে তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন যুক্তিযুক্ত নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি ২৩৫ কোটি টাকায় ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পে মত প্রকাশ করলে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯৫ সালের ২৮ জুন তা অনুমোদন করেন। তবে বিষয়টি নিয়ে ওইসিএফের সাথে আলোচনা চূড়ান্ত হবার আগেই সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠিত হয়। অন্য ৯ জনের সাথে ড. ইউনুস এর উপদেষ্টা হন। এর পর জাপানী ঠিকাদাররা তৎপর হয়ে ওঠে। ওইসিএফ মিশন ১৫ থেকে ২২ এপ্রিল বাংলাদেশ সফরে করে। পরে নানা পর্যায়ে আলোচনা ও তদবিরে বিভিন্ন ফর্মূলায় গণপূর্তের দরের ওপর ব্যয় বাড়িয়ে ৩২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। তবে এটা ওইসিএফের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
সুষ্ঠুভাবে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সরকারের ব্যস্ততার মধ্যেও এসময় ইআরডি সচিব লুৎফুল্লাহিল মজিদ (পরবর্তীতে গ্রামীণ ব্যাংকে চাকুরি গ্রহনকারী) এ প্রকল্পের জন্য জাপানি ঋণ গ্রহণে তৎপর হন। ২৭ এপ্রিল অর্থ উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সংশ্লিষ্ট বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা সৈয়দ মনজুর ইলাহী উপস্থিত ছিলেন। তবে সেদিন অপ্রাসঙ্গিকভাবে বিজ্ঞান উপদেষ্টা ড. ইউনুসও ওই বৈঠকে হাজির হন। এতে অর্থ সচিব আকবর আলী খান, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য কাজী সামসুল আলম, বিমান সচিব ইসমাঈল হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

ড. ইউনুস ওই বৈঠকে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার প্রকল্পটি গ্রহন করা সমীচীন বলে মত দেন। জাপানের সাথে বাংলাদেশের ভবিষ্যত অর্থনৈতিক সম্পর্ক, সে সঙ্গে চট্টগ্রামে জাপানী বিনিয়োগে বিবিধ শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার কথা বিবেচনা করে দেখতে হবে এমন যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক সুসম্পর্কের ধারা বজায় থাকে। অর্থ সচিব অবশ্য বেশি অর্থ যাতে খরচ না হয় সেদিকেও ল্য রাখার কথা বলেন। সভায় একনেকের জন্য পিসিপি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।

১৫ মে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ফজলুর রহমান পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (ভৌত অবকাঠামো) ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীরকে পাঠানো এক নোটে এ প্রকল্পে জাপানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং চট্টগ্রামের শিল্পায়ন উপকৃত হবে বলে উল্লেখ করেন।

এর পর ৫৪০ কোটি টাকায় প্রকল্পের যে পিসিপি তৈরি করা হয় তাতে বলা হয়, বছরে ১৭ কোটি অবচয় (ডেপ্রিসিয়েশন) বাদ দিয়েই ২০২৬ সাল পর্যন্ত বিমান বন্দরটি মোট ৫৩২ কোটি টাকা লোকসান দেবে। একনেক সভায় উপস্থাপিত কার্যপত্রেও মহীউদ্দিন খান আলমগীর এটা স্বীকার করে বলেন, বছরের ১৭ কোটি অবচয় অন্তর্ভূক্ত করা হলে লোকসানের পরিমান আরো বাড়বে বলে প্রতীয়মান হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চুক্তি অনুযায়ী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরামর্শক নিয়োগ না করে প্রধানমন্ত্রীর সচিব ড. আলমগীর বাস্তবায়ন সময় সংেেপর কথা বলে দরপত্র ছাড়াই পিসিআইকে পরামর্শক নিয়োগ করেন।

এর পর পিসিআই অ-জাপানী সব দরপত্র কারিগরি কারন দেখিয়ে বাদ দিয়ে প্রতিযোগতাহীন পাতানো দরপত্রে সিমুজু-মারুবেনীকে বিমান বন্দর নির্মানের কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।   সরকার এটা অনুমোদন করে। তবে দ্বিগুনেরও বেশি ব্যয়ে চট্টগ্রাম বিমান বন্দর নির্মাণ করেও ড. ইউনুসসহ সকলের ঘোষণা মত চট্টগ্রামে জাপানী বিনিয়োগে বিবিধ শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়নি। বিমান বন্দরটিও কাঙ্খিত সফলতা পায়নি। ল্যমাত্রার চেয়ে বেশি লোকসান হওয়ায় সরকারকে ঋণ শোধে বেশি ভর্তূকি দিতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময় ১১৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১১
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।