ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যানের প্রশ্ন

পাঁচশ টাকার পিপি হতে আইনজীবীরা আইন মন্ত্রণালয়ে ভিড় জমান কেন?

স্টাফ করেসপন্ডেণ্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১১
পাঁচশ টাকার পিপি হতে আইনজীবীরা আইন মন্ত্রণালয়ে ভিড় জমান কেন?

চট্টগ্রাম: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মীজানুর রহমান প্রশ্ন তুলেছেন, মাত্র পাঁচশ’ টাকা বেতনে পিপি, এপিপি (রাষ্ট্র নিযুক্ত আইন কর্মকর্তা) হতে আইনজীবীরা আইন মন্ত্রণালয়ে ভিড় জমান কেন?’
    
রোববার চট্টগ্রামে মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত এক কর্মশালায় জেলা সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট আবুল হাশেমের এক বক্তব্যের জের ধরে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।

কর্মশালায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবুল হাশেম বলেন, একটি মামলা পরিচালনার জন্য পিপিদের মাত্র পাঁচ’শ টাকা দেয় সরকার।

এপিপিদের দেয় দুশ’/তিনশ’ টাকা করে। তাও আবার ছয় মাসে একবার। টাকার পরিমাণ না বাড়ালে আর নিয়মিত না দিলে কোনও দিন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। মামলার জটও কমবে না।

এ সময় ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘মাত্র পাঁচশ টাকার জন্য পিপি-এপিপি হতে আইন মন্ত্রণালয়ে এত তদবির কেন হয়? এত মানুষ পিপি হতে চায় কেন, কী উদ্দেশ্যে?’

জবাবে আবুল হাশেম বলেন, ‘আপনি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। আপনার কাছে জবাবদিহি করা দরকার। তাই বলছি, পিপি-এপিপি হলে অন্যায় লাভের সুযোগ থাকে। আমি নিজেও একেবারে দুর্নীতির উর্ধ্বে নই। পৃথিবীর কোনও মানুষই দুর্নীতির উর্ধ্বে নয়। ’

হাশেম আরও বলেন, আদালতে একটি জামিন আবেদনের শুনানি করতেও পিপি-এপিপিরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পাঁচশ টাকা নেন। অবশ্য আমি এসব ছোটখাট মামলার জন্য কোনও টাকা নিই না। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে আপনি পিপি হয়ে চলেন কীভাবে। আমি হাইকোর্টে মামলা পরিচালনা করলে এক লাখ টাকা করে নিই।

পিপি’র এ স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যে ড. মীজানুর রহমানসহ কর্মশালায় উপস্থিত সবাই হাততালি দিয়ে উপভোগ করেন।

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কর্মকৌশল প্রণয়নের বিষয়ে আয়োজিত এ কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান।

কর্মশালাটি পরিচালনা করেন মানবাধিকার কমিশনের সদস্য শামসুজ্জামান খান।

কর্মশালায় ড. মীজানুর জানান, ১৬টি সুনির্দিষ্ট বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চূড়ান্ত কর্মকৌশল আগামী ৩১ মার্চ রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এর আগে ১৫ মার্চের মধ্যে বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মশালায় পাওয়া সুপারিশের আলোকে চূড়ান্ত করা হবে কর্মকৌশল।

তিনি বলেন, ‘গরীব মানুষের পাশে রাষ্ট্রের যেভাবে দাঁড়ানোর কথা ছিল রাষ্ট্র সেভাবে দাঁড়ায়নি। আমরা তাদের এমনভাবে সচেতন করতে চাই যেন গরীব মানুষ সরকারি হাসপাতালে গিয়ে বলতে পারে তুমি আমাকে বিনামূল্যে এসব ওষুধ দিতে বাধ্য। ডাক্তারকে বলতে পারে তোমাকে সপ্তাহে দু’দিন নয় পাঁচদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা শিার্থীদের এমনভাবে সচেতন করতে চাই যেন তারা শিকদের বলতে পারে আপনি শুধু আমাদের পড়াবেন, আমরা শ্রেণীকে রাজনীতির কথা শুনতে রাজি নই। রাজনীতির কথা আপনি বটতলা, গাছতলায় গিয়ে বলুন। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সবাইকে ভেতর থেকে পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা যতণ সচেতন না হব ততণ রাষ্ট্র আমাদের অধিকার দেবে না। আমাদেরই রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘মানবাধিকারের নামে দেশে অনেক সংগঠন, সংস্থা গড়ে উঠেছে। আইনের আলোকেই হয়ত এক সময় সেসব সংস্থা গঠিত হয়েছিল। কিন্তু মানবাধিকার কমিশন গঠনের পর সেসব সংস্থার কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। ’

সরকার এসব মানবাধিকার সংগঠনের বিষয়ে পদপে নেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সদস্য ড. জাকির হোসাইন বলেন, ‘দেশের নিম্ন আদালতে ২২ লাখ, হাইকোর্টে ৪ লাখ আর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৬-৭ হাজার মামলা বিচারাধীন আছে। এখানেই সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। ’

তিনি রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আমরা সবসময় বলি সমাজে রিফর্ম (সংস্কার) দরকার। আসলে যাদের কাছে আমরা সমাজের রিফর্মের কথা বলি আগে তাদেরকেই রিফর্ম করা দরকার।

দিনব্যাপী কর্মশালায় চট্টগ্রামে বিভিন্ন এনজিও সংগঠনের প্রতিনিধি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের কয়েকজন শিার্থী অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।