ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ত্রিশালে দুই শিশুর হত্যাকারী মিন্টু মিয়া (৩৪) পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
মিন্টুকে স্থানীয় এলাকার অনেকেই মানসিক রোগী বললেও আসলে সে বেপরোয়া প্রকৃতির একজন নেশাখোর বলে জানা গেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ত্রিশাল থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান। আবুল কালাম বলেন, ‘পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মিন্টু জোড়া শিশু হত্যার স্বীকারোক্তির পাশাপাশি অকপটে স্বীকার করেছেন যে সে নেশাখোর। ’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ত্রিশাল পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাড়ার কসাইবাড়ি এলাকার দুই চাচাতো ভাই-বোন তানিয়া (৮) ও লতিফকে (৭) কোদাল দিয়ে মাথা ও শরীরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে একই এলাকার মিন্টু মিয়া (৩৪)। এ ঘটনা দেখে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসা এনামুল হক মিন্টুকে নিবৃত্ত করতে এগিয়ে গেলে তাকেও কোপানো শুরু করে সে।
মারাত্মক আহত এনামুল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনার পরপর স্থানীয়রা মিন্টুকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। ঘটনার রাতেই নিহত তানিয়ার বাবা জামাল কসাই বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ত্রিশাল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঘাতক মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আজ শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহের আদালতে হাজিরা শেষে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে শিশু দুটিকে হত্যার ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। ’
শনিবার সরেজমিনে ত্রিশালের কসাইবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নিষ্পাপ দুই শিশুকে হারিয়ে স্বজনদের আর্তনাদ আর আহাজারি এখনো থামছে না। তাদের হাহাকারে এখনো করুণ অবস্থা বিরাজ করছে এলাকায়।
নিহত তানিয়ার বাকরুদ্ধ বাবা জামাল কসাই বলেন, ‘আমার মেয়ে ও ভাতিজা হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ’
ত্রিশাল থানা পুলিশ সূত্র জানায়, ত্রিশাল পৌর এলাকার ৩নম্বর ওয়ার্ডের কসাইবাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন মিন্টু। নিজের বাড়িঘর না থাকায় সে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতো। নেশা করতো নিয়মিত। নেশার টাকা সংগ্রহ করতে কখনো এলাকার বিভিন্ন চা-স্টলে কাজ করতো। কোনও কোনও সময় মজুরের কাজও করতো।
পারিবারিক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ওই নির্মম হত্যাকাণ্ডের আগে মিন্টু কসাইবাড়ি এলাকায় কোদাল দিয়ে ওই বাড়ির মহিলাদের ভয়ও দেখিয়েছিলো।
নিহত তানিয়ার চাচা হেলাল কসাই বলেন, ‘মিন্টু এক সময় বেবি ট্যাক্সি ড্রাইভার ছিল। ও আসলে পাগল না, পাক্কা নেশাখোর। ’
চরপাড়া এলাকার ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, ‘মিন্টুর কোন বাড়ি-ঘর নেই। এ বাড়ি ওই বাড়িতে কাজ করে সে জীবিকা নির্বাহ করতো। কসাই বাড়িতেই সে বেশি থাকতো। ওই বাড়িতে খেয়ে পড়ে কেন ওই বাড়ির শিশুদের হত্যা করলো, সেই রহস্য বুঝতে পারছি না। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১১