রাজশাহী: অবশেষে সেনা কর্মকর্তার নির্যাতক স্ত্রীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করলেন নির্যাতিত সোনিয়ার বাবা নবাব আলী। শনিবার সন্ধ্যায় সোনিয়ার বাবা নবাব আলী বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় মেজর আসফাকুর রহমানের স্ত্রী কলি বেগমকে আসামি করা হয়েছে। নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদত হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সোনিয়ার পিতা নবাব আলী থানায় এসে মামলাটি দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয়েছে মেজর আসফাকুর রহমানের স্ত্রী কলি বেগমকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টের করতোয়া বিল্ডিংয়ের চার নম্বর বাসায় গৃহকর্মী হিসাবে থাকার সময় সোনিয়াকে মেজর আসফাকুর রহমানের স্ত্রী কলি বেগম কারণে অকারণে মারধর করতেন। এ সময় নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হলে তাকে জোর করে তা খেতে বাধ্য করতেন। ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হতো না তাকে।
এজাহারে আরও বলা হয়, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে কলি বেগমের কম্বল গায়ে দেওয়ার অভিযোগে সোনিয়াকে রুটির বেলুনি, তরকারির চামচ ও স্যান্ডেল দিয়ে এলোপাতাড়ি চোখ-মুখে তাকে মারপিট করেন। এতে সোনিয়া মেঝেতে পড়ে গেলে দুই হাতের নখ দিয়ে শরীর খামচে তবিত করেন কলি।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, লোহার রড দিয়ে শিশু সোনিয়ার একটি হাত ভেঙে দিয়েছেন কলি। এই অবস্থায় সোনিয়া একদিন মেঝতে পড়ে থাকে। পরের দুই দিন তাকে বাথরুমে আটকে রাখা হয়। দুইদিন পরে বাথরুম থেকে বের করে কিছু পঁচাবাসি খাবার খেতে দেওয়া হয়। গায়ে গরম পানি ঢেলে দেওয়া হয়। এতে সোনিয়ার শরীরে ফোস্কা পড়ে যায়। ১৫ ফেরুয়ারি মেজর আসফাক ঢাকা থেকে বাসায় এসে সোনিয়ার এ অবস্থা দেখে বাড়িতে খবর দেন। সেখান থেকে তাকে নিয়ে এসে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।
মামলা করতে দেরির কারণ হিসাবে বলা হয়েছে যে, মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়কারী গোপেন আচার্য বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার মেয়েটির সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। এছাড়াও তার সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বি কে দামকে সভাপতি করে চার সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এতে শিশু সার্জারি, নিউরো সার্জারি ও শিশু মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন। তারা সোনিয়াকে দেখছেন।
তিনি জানান, তার শরীর থেকে ক্যাথিটার (কৃত্রিমভাবে পস্র্রাব করানোর জন্য লাগানো সরু নল) খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে সে এখনো ব্যথায় চিৎকার ও কান্নাকাটি করছে এবং মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত থাকার কারণে মাঝেমধ্যে প্রলাপ বকছে।
ডা. গোপেন বলেন, ‘তবে উন্নততর চিকিৎসা দেওয়ায় মেয়েটির অবস্থার কিছু উন্নতি হয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১১