ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পথে পথে আহজারি

শিশু আটকে মাকে পেটানোর হুমকি

সাঈদুর রহমান রিমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১১
শিশু আটকে মাকে পেটানোর হুমকি

ঢাকা: চাঁদের মতো ফুটফুটে শিশুসন্তান হারিয়ে বুকফাটা আহাজারি করছেন এক মা। রাজধানীর পথে পথে ঘুরছেন তিনি, যাকে সামনে পাচ্ছেন তার কাছেই চাইছেন সন্তান উদ্ধারে সহযোগিতা।

র‌্যাব কার্যালয় থেকে থানাপুলিশ পর্যন্ত ছোটাছুটি করে শিশুটির মা রোজিনা বেগম ওরফে নূপুর (৩০) এখন কান্ত। রাস্তা-ফুটপাতে বসে হাত-পা ছড়িয়ে তার অঝোর কান্নায় পথচারীদের চোখও ভিজে ওঠে।

র‌্যাব-১০ এর এক কর্মকর্তা বাচ্চা উদ্ধারে রোজিনাকে থানার সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু থানা পুলিশ বলছে- প্রমাণ নিয়ে আসুন মামলা দায়ের করা হবে। কি প্রমাণ সংগ্রহ করবে, কিভাবে মামলা হবে- সেসবের কিছুই রোজিনা বুঝতে পারছেন না। এমনকি তার সন্তান মিঠু নামে যে ব্যক্তি  আটকে রেখেছেন নিজেকে তিনি মানবাধিকার কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে হম্বিতম্বি করছেন ভীষণ।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালেও তার দম্ভ ও বেপরোয়া আচরণ ফুটে ওঠে। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘বাচ্চা বিক্রি করে এখন আমার দুর্নাম ছড়াচ্ছে-সামনে পাইলে ওই মহিলাকে কুত্তার মতো পেটাবো। ’

রোজিনার স্বামী মনির হোসেন একটি মামলার আসামি হিসেবে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছেন। তার সঙ্গে দেখা করার জন্য গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর এলাকা থেকে সন্তানকে বুকে নিয়ে রোজিনা এসেছিলেন রাজধানীতে। রাস্তাঘাট কিছুই চেনা নেই তার। এ কারণে স্বামী মনির হোসেনের বন্ধু জনৈক মিঠু’র যাত্রাবাড়ীস্থ শহীদ ফারুক রোডের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। মিঠুর স্ত্রীর কাছে নিজের ৬ মাস বয়সের শিশু ছেলে রিজুকে রেখে রোজিনা জেলগেটে যান, সেখান থেকে ফিরে আর সন্তানকে বুকে নিতে পারেননি তিনি।

রোজিনা বাংলানিউজকে জানান, প্রথমদিকে মিঠু মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা রোজিনাকে জানান, কে বা কারা তার সন্তানকে চুরি করে নিয়ে গেছে। এতে কান্নাকাটি জুড়ে দিলে মিঠু মিয়া জানান, তার দূর সম্পর্কের এক বোন শিশুটিকে নিয়ে গেছে। দু’ চার দিন পরই ফিরিয়ে দিয়ে যাবে। এরপর থেকেই দফায় দফায় টালবাহানা করে একটি মাস পার করে এখন মিঠু বলছেন, ‘তিন লাখ টাকায় কিনে রেখেছি- টাকা দাও, বাচ্চা ফিরে পাবে। ’ এ কথা শুনে রোজিনার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। এবার মা মমতাজ বেগমকে নিয়ে রোজিনা মিঠুর বাসায় যেতেই চড়-থাপ্পড় দিয়ে আর ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রোজিনা।

রোজিনা বেগম ওরফে নূপুরের পিতার নাম হলেক মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার মাঝিগাড়া গ্রামে তাদের বাড়ি। আরও চার বছর আগে একই থানার ধনিয়াবাদ গ্রামের মনির হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মোটর পার্টস ব্যবসায়ী মনির হোসেন প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখেই রোজিনাকে নিজের ঘরে তুলে নেন। ৬ মাস আগে জন্ম নেয় রিজু। এরই মধ্যে প্রথম স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় রোজিনার স্বামী মনির হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায়। তাকে দেখার জন্যই রোজিনা নবীনগরস্থ গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় এসেছিলেন।

এ ব্যাপারে রোজিনা বেগম বৃহস্পতিবার র‌্যাব-১০ কার্যালয়ে হাজির হলে কর্তব্যরত কর্মকর্তা তাকে থানায় মামলা করার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী, রোজিনা ও তার মা মমতাজ বেগম বিকেলে যাত্রাবাড়ী থানায় গেলে কর্তব্যরত কর্মকর্তা বলেছেন, এ সংক্রান্ত প্রমাণাদি নিয়ে নবীনগর থানায় (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) মামলা করতে হবে। এরপর আরও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রোজিনা বেগম।

বিষয়টি জানার জন্য যাত্রাবাড়ী থানার অপারেশন অফিসার মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, শিশু উদ্ধারের দাবি নিয়ে কোনো মহিলার থানায় যাওয়ার কথা তার জানা নেই।

মিঠুর বক্তব্য

যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক রোডের বাসিন্দা মিঠু ৬ মাসের শিশু রিজুকে রোজিনার কাছ থেকে রেখে দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ওই মহিলা টাকার বিনিময়ে বাচ্চাটাকে আমার কাছে বিক্রি করে গেছে। এখন আবার ফেরত চায়। ’

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘রোজিনা বেগম হচ্ছে খারাপ মহিলা, রাস্তায় রাস্তায় থাকে। আমি একজন ব্যবসায়ী- সে নানা কৌশলে আমার থেকে ৮৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাচ্চাটাকে আমার কাছে বিক্রি করেছে। এটা লিখিতভাবে স্ট্যাম্প করা আছে-প্রমাণপত্র করে রেখেছি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন মানবাধিকারকর্মী। কাঁচা কাজ করবো কেন? র‌্যাব-থানা সব জায়গায় জানিয়েও আমার কিচ্ছু করতে পারবে না। বাচ্চা কেনার প্রমাণপত্র আছে। তদন্তে কিছুই হবে না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।