ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বার্লিনের পথে পথে

মারিয়া সালাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১১
বার্লিনের পথে পথে

বার্লিন: সোমবার সকালে কেনাকাটা করে সেই যে রুমে ফিরলাম, তারপর থেকে শহরটা ঘুরে দেখার তেমন সুযোগ আর হল না। সকাল হলেই ট্রেনিং শুরু হয়, শেষ হয় যখন, তখন সন্ধ্যা।

আমার মতো নতুনদের জন্য এ শহর বেশ একঘেঁয়ে।

অনেকটা নিরানন্দেই পাঁচ-ছয়টা দিন পার হয়ে গেল। শুক্রবার ফোনে পরিচয় হল এক বাংলাদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীর সঙ্গে, তার পরিচয় এখন দেব না। তাকে নিয়ে আমার অন্য গল্প আছে। একদিন সেটাও লিখে ফেলব।

সেই বন্ধুর আশ্বাসেই শনিবার দুপুরে বের হলাম বার্লিন দেখব বলে। প্রথমেই গেলাম আলেকজান্দ্রা প্লাৎসে। শনিবার এখানে বসে হাজার মানুষের মিলনমেলা। এলাকাটা অনেক উন্নত; বড় বড় শপিংমল আর গুরুত্বপূর্ণ সব অফিস, হোটেল, কনফারেন্স সেন্টার রয়েছে এ এলাকায়। তবে, এখানকার আমেজটা কিন্তু ঠিক আমাদের গাউসিয়া-নিউমার্কেটের মতোই। কখনো কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরের মতো দৃশ্যও ফুটে ওঠে। জীবিকা আর সভ্যতার কি অদ্ভুত এক মেলবন্ধন!

এই প্রথম এই শহরটাকে ভালো লেগে গেল। আর প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে গেলাম। এতো সুন্দর শহর! ভাবতেই মনটা ভরে যায়। রাস্তার দু’ধারেই বড় বড় সব অট্টালিকা। বাইরে থেকে দেখেই বোঝা যায় এগুলো অনেক পুরনো। কোনো কোনটাতো ২০০ বছর আগে নির্মিত। কিন্তু ভেতরে দেখে এর বয়স  বোঝার উপায় নেই। ভেতরে সবকিছুই অত্যাধুনিক। পরে জানলাম এরা পুরনো কোনো দালান ভাঙে না। বরং নিজেদের ঐতিহ্য যত্ন করে সংরক্ষণ করে।

পথের পাশে রয়েছে বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ আর বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য। অনেক পথের পাশে বার্লিন প্রাচীরের কিছু কিছু ভগ্নাংশও অতি যত্ন করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মূল প্রাচীরের ভিত্তি-চিহ্ন এখনো রেখে দেওয়া হয়েছে দুই জার্মানির বিচ্ছেদ-মিলনের কথা আগামী প্রজন্মকে মনে করিয়ে দিতে।     

প্রত্যেকটি বাড়ির নিচের তলায় রয়েছে বিভিন্ন পণ্যের দোকান। পথে পথে রয়েছে ছোট ছোট কফিশপ থেকে পাঁচতারা হোটেল। আমাদের দেশের মত ফুটপাথের দোকানও আছে। এসব দোকানের মালিকদের বেশিরভাগই পাকিস্তানি।

ফুটপাথের একপাশে মোটা সাদা দাগে আলাদা করা আছে সাইকেলে চলার রাস্তা। সাইকেল আরোহীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে ফুটপাথে চলা পথচারীরা বেশ সাবধানী। ৩/৪ বছরের ছোট শিশুরাও মা-বাবার সাথে পথে বের হলে সাইকেল নিয়ে বের হয়। নির্ভয়ে চালিয়ে যায় সাইকেল।

ঢাকার মতো বার্লিনের পথেও দেখা মিলল ভিক্ষুকের। তবে তারা কাউকে বিরক্ত করে না, আর অন্যরাও তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে না। ভিক্ষুকদের মধ্যে রোমানীয় মহিলারাই বেশি। মাঝে মাঝে তাদের কোলে শিশুও থাকে। দুটি পয়সার লোভে কিশোর রোমানীয়রা পথের পাশে দাঁড়িয়ে গাড়ি পরিস্কার করে। তারা ট্রেনের মধ্যে বা পথের পাশে বসে নানা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েও ভিক্ষা করে।

আলেকজান্দ্রা প্লাৎসে দেখলাম এক রেড ইন্ডিয়ান ভিক্ষুক। নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেই সে পথের পাশে দাঁড়িয়ে একটানা বাজিয়ে চলছে অদ্ভুত এক সুর।

ঠিক তার উল্টোদিকেই তরুণরা রকিং মিউজিকের তালে উদ্দাম নৃত্যে মেতেছে। রেল স্টেশনে এবং শহরের ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মীরও দেখা মেলে। উদ্ভট সাজপোশাক আর উৎকট প্রসাধনী দেখেই তাদের চেনা যায়।

সবচেয়ে স্বস্তির বিষয় হলো এখানে কোন যানজট নেই। সবাই সতর্ক হয়ে পথ চলে। বাস বা ট্রেন যাই হোক না কেন কোনো অনিয়ম নেই। আর জার্মানরাতো সবচেয়ে সুশৃঙ্খল জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত।
 
এখানে একটা অদ্ভুত যানও দেখলাম, ঠিক আমাদের রিকশার মতো। তবে তা পথে চলার জন্য নয়, শুধু কিছুক্ষণ মজা করার জন্য। পর্যটকদের আনন্দদানের জন্য রয়েছে কিছু ছোট ছোট গাড়ি। এগুলোকে বলে  টোবি কার।

দেশি হোক আর বিদেশিই হোক এখানে সবাই নির্ভয়ে পথ চলতে পারে। পথে কারও বিপদে পড়ার কোনো ভয় নেই বললেই চলে। পথচারী বা ভিনদেশি অতিথিদের সবাই আন্তরিকতার সঙ্গেই সাহায্য করে। একটি জাতি কতোটা সভ্য তা বোঝার জন্য এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে! তবে সমস্যা একটা রয়েছে: জার্মানদের মধ্যে ইংরেজি-জানা লোকের সংখ্যা নেহায়েৎই কম।     

বার্লিন স্থানীয় সময়: ১১:০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১১.

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।