ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পঞ্চগড়ে দিনেদুপুরে রাতের আঁধার, শিলাবৃষ্টি ও ঝড়

মাহমুদ মেনন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১১
পঞ্চগড়ে দিনেদুপুরে রাতের আঁধার, শিলাবৃষ্টি ও ঝড়

ঢাকা: ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল তিনটা। হঠাৎ রাতের আঁধার নেমে এলো পঞ্চগড় শহরে।

প্রায় দেড় মিনিট স্থায়ী ছিলো সে আঁধার। হতবাক শহরবাসীর কিছু বুঝে ওঠার আগেই আঁধার মিলিয়ে আবার দিনের আলো আলো ফিরে এলো ঠিকই, কিন্তু পরপরই বলা নেই কওয়া নেই শুরু হলো তুমুল শিলাবৃষ্টি আর ঝড়। গাছপালার ডাল ভেঙ্গে পড়লো, উড়ে গেলো কাঁচা ঘরবাড়ির চাল। বৃষ্টিতে পানি জমলো শহরের রাস্তায়।

ঠিক এভাবেই বাংলানিউজের কাছে পুরো ঘটনাটির বর্ণনা দিচ্ছিলেন জেলা প্রশাসক বনমালি ভৌমিক।

তিনি বলেন, বিষয়টি বিস্ময়ের ও সেইসঙ্গে আতঙ্কেরও।

ঝড়-বৃষ্টির আগে পঞ্চগড়ের আকাশে এতটুকু আভাসও পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। বললেন, ‘আবহাওয়া দপ্তর থেকেও দেওয়া হয়নি কোনো পূর্বাভাস। ’

তিনি বলেন, ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ওজনের একেকটি শিলা আকাশ থেকে আছড়ে পড়ছিলো পঞ্চগড়ের বুকে। এভাবে চলতে থাকে প্রায় ১৫ মিনিট।

ঝড়ের পর ক্ষয়ক্ষতি নিজ চোখে দেখতে গাড়ি করে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন বনমালি ভৌমিক। তিনি বলেন, পঞ্চগড়ে এখনো শীত চলছে। এ অবস্থায় বুধবার দিনটিতে উজ্জ্বল দিনের আলো (ব্রাইট ডে লাইট) না থাকলেও কিছুটা কুয়াশা ছাড়া মেঘের কোনো আনাগোনাও  দেখা মেলেনি আকাশে। কিন্তু বিকেল তিনটায় ঘটলো সেই আচানক ঘটনা! হঠাৎই আকাশ ছেয়ে গেল ঘন কালো মেঘে। মেঘে মেঘে আঁধার আকাশে শুরু হলো শিলা-ঝড় ও বৃষ্টি । আর সে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ও ঝড়ের তাণ্ডব পুরো পঞ্চগড়কে নিমেষে এলোমেলো করে দিয়ে গেলো। এই অবাক করা ঘটনা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।  

আবহাওয়া দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বিস্ময়ের প্রাথমিক ঘোর কাটিয়ে উঠে ক্ষয়ক্ষতি দেখতে বের হয়েছি। অফিসে ফিরেই যোগাযোগ করবো। ’

এদিকে ঢাকায় আবহাওয়া দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটি স্বাভাবিক একটি ঘটনা। কালবৈশাখী ঝড়ের সময় সমাগত। এমন শিলাঝড় অস্বাভাবিক নয়। ’

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন কোনো পরিস্থিতির কথা জানা ছিলো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা রাজশাহী বিভাগের কোথাও কোথাও বজ্রবৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলাম। ’

হঠাৎ অন্ধকার নেমে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বজ্রমেঘ পঞ্চগড় শহরের ওপরে সূর্যকে ঢেকে ফেলায় তা পুরো শহরকে আঁধারে ঢেকে দেয়। এতেও আতঙ্কের কিছু নেই। ’  

পঞ্চগড় থেকে বাংলানিউজের সংবাদদাতা সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ প্রত্যদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের অনেকেই  ঘটনাকে ২০০৯ সালের ২২ জুলাইয়ের সূর্যগ্রহণের সঙ্গে তুলনা করে কোন মহাজাগতিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন। প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, এমন ঘটনা তারা অতীতে দেখেননি।

ব্যবসায়ী নাসিরুল কাদের বলেন, ‘দিনের বেলা ঝড় বৃষ্টি হয়েছে কিন্তু এমন কালো অন্ধকারে ছেয়ে যায়নি। এ ঘটনাকে সূর্যগ্রহণের সঙ্গে তুলনা করা যায়। ’

একই কথা বলেন, পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র মো. তৌহিদুল ইসলাম।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ-এর কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড.এমজি নিয়োগী বলেন, ‘প্রতিনিয়ত জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটছে। হিমালয় থেকে জলরাশি উচ্চতায় উঠে অতিরিক্ত ঠান্ডায় জমে গিয়ে সূর্য়ের আলোক রশিকে ঢেকে ফেলে, ফলে অন্ধকার নেমে আসতে পারে। ’

গৃহবধূ নাজমা আকতার বলেন, এমন পরিস্থিতিতে ছেলে সন্তদানদের নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।

তবে বৃষ্টিতে কিছুটা খুশিই প্রকাশ করলেন জেলা প্রশাসক বনমালি ভৌমিক। তিনি বলেন এমন বৃষ্টি আলুর কিছুটা ক্ষতি করবে বটে।   তবে ধান ও গমের জন্য এটা উপকারই বয়ে আনবে।  

বাংলাদেশ সময় ১৬০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।