কুড়িগ্রাম: ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে নিহত ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেছেন, ‘মেয়ে হারানোর কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে এখন দেশের মাটিতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে চাই। ’
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘দু’মুঠো অন্নের জন্য দেশ ছেড়েছিলাম।
সোমবার রাত ৯টার দিকে ফেলানীর নানাবাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম রামখানার বানারভিটায় তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন ফেলানীর শোকাতুর মা।
ফেলানীর নানাবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশে ফিরে মেয়ের শোকে পাথর হয়ে গেছেন ফেলানীর মা জাহানারা বেগম। সাংবাদিক এসেছে জানতে পেরে তাদের সঙ্গে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করলেন তিনি। পরে অনেক কৌশলে তাদের ছবি তোলা ও দু’একটা কথা বলার অনুমতি মেলে। এছাড়া আর কিছুই বলতে রাজি হননি তিনি।
ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে ফেলানী মর্মান্তিকভাবে নিহত হওয়ার ৪০ দিন পর বিএসএফ সোমবার বিকেল ৫টার দিকে অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্যে বিজিবি-র কাছে ফেলানীর মা ও ভাই-বোনদের হস্তান্তর করে ।
বিজিবি ২৭ ব্যাটালিয়ন নিñিদ্র গোপনীয়তা অবলম্বন করে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফেলানীর মা ও তার ৫ ভাই-বোনকে নাগশ্বেরীর পশ্চিম রামখানার বানারভিটায় পৌঁছে দেয়। সাংবাদিকরা অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাত ৯টার দিকে ফেলানীর নানারবাড়ি বানারভিটায় তাদের আবিষ্কার করেন।
এ সময় বানারভিটায় মায়ের বাড়িতে ফেলানীর মা জাহানারা বেগম সাংবাদিকদের জানান, তারা গত ১৫ দিন থেকে ভারতের আসাম রাজ্যের নওগান জেলার লঙ্কা থানার পোয়াতের পাড় গ্রামে তার ভাগিনা মিনহাজুল ইসলামের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ভারতীয় পুলিশের সহযোগিতায় তাদের সেখান থেকে নাখরাজ সীমান্তে নিয়ে আসে বিএসএফ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও স্থানীয় প্রত্যদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম রামখানা নাখরাজ সীমান্তের ৯৪৮নং আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের ৫/৬ সাব-পিলারের কাছে বিএসএফ নিহত ফেলানীর মা জাহানারা বেগম (৩৪), ভাই জাহাঙ্গীর আলম (১০), আফান আলী (৭), আক্কাস আলী (৫), বোন মালেকা খাতুন (১২) ও কাজলী খাতুনকে (৩) সন্ধ্যার কিছু আগে বাংলাদেশ বর্ডারগার্ড (বিজিবি)র কাছে হস্তান্তর করে।
এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ২৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল রাজ্জাক তরফদার এবং ভারতের পে ছিলেন ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক রামব্রিজ রায়।
এদিকে সোমবার সকাল ১০টা থেকে নিহত ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম নুরু ও নানী হাজেরা বেওয়া সীমান্তে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপো করতে থাকেন। কিন্তু ফেলানীর মা ও ভাই-বোনদের দেখা পাননি তারা। অবশেষে ফেলানীর মা ও ৫ ভাইবোনকে অতি গোপনে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ফেলানীর পরিবারকে দেখতে সাংবাদিকসহ হাজার হাজার মানুষ সীমান্তে অপো করলেও কাউকে দেখতে দেওয়া তো দূরের কথা, প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যূহ। ফলে কারো পক্ষেই ফেলানীর মা ও ভাই-বোনকে দেখার সুযোগ ঘটেনি।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি ভারত থেকে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম নুরু ও কিশোরী ফেলানী ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে নিজ বাড়িতে আসার সময় কাঁটাতারের বেড়া পার হতে গিয়ে বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত হয় ফেলানী।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১১