ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নৌ কর্মকর্তা (অব:) হত্যা মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার আবেদন খারিজ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১১

ঢাকা: রাজনৈতিক বিবেচনায় নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সৈয়দ মঈন উদ্দিন আহমদ ( অব : ) হত্যা মামলা হতে দু’ আসামির নাম প্রত্যাহার করার সরকারের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।   একই সঙ্গে আদালত সব আসামির বিরুদ্ধেই মামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।



গত ১৭ জানুয়ারি মামলার প্রধান আসামি গার্মেন্টস মালিক আনোয়ার কবির আজমিরী চিশতী ও অপর আসামি বাহাউদ্দিন আহমদ বাবুলের নাম রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। আবেদনটি করেন রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ সরকারী কৌশুলি অ্যাডভোকেট  সৈয়দ শামসুল হক বাদল।

মামলাটি ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। কিন্তু দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের নিয়মিত বিচারক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো.রেজাউল ইসলাম ৭ ফেব্রুয়ারি শুনানী শেষে রোববার এ আদেশ দেন।

নাম প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা দু’ আসামি একজন আওয়ামী লীগের ও একজন জাতীয় পার্টির। আদালত তার মৌখিক আদেশে বলেন, ‘আসামিরা রাজনৈতিক ব্যক্তি তাতে কোন সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যেমন মিথ্যা মামলার স্বীকার হন, আবার তারা ক্ষমতার দাপটে অনেক কিছুই করেন। আসামিরা রাজনৈতিক ব্যক্তি হলেও মামলার মোটিভ মোটেও রাজনৈতিক ছিল না। গত ৭ ফেব্রুয়ারি প্রত্যাহার আবেদনের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের সরকারী কৌশুলী  সৈয়দ শামসুল হক বাদল বলেছিলেন, প্রত্যাহার আবেদন করা আসামি দুজন একজন আওয়ামী লীগের ও একজন জাতীয় পার্টির। সরকার তাদের পক্ষে মামলার প্রসিকিউশন না চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তিনি তাদের নাম বাদ দিয়ে বাকী আসামিদের নামে প্রসিকিউশন চালানোরও আবেদন করেছিলেন।
 
রাষ্ট্রপক্ষের দাবীর তীব্র বিরোধিতা করেন বাদীর আইনজীবী সুপ্রীমকোর্টের অ্যাডভোকেট খুরশেদ আলম।   শুনানিতে তিনি বলেন, মামলাটি মোটেও রাজনৈতিক মামলা নয়। ভিকটিম কিংবা আসামিরা কেউই রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। নিহত সৈয়দ মঈন উদ্দিন আহমদ একজন অবসরপ্রাপ্ত নৌ বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার। তার ছেলে মেজর মুজাক্কির একজন আর্মী অফিসার। তাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই। এলাকায় গার্মেন্টেসের ঝুটের ট্রাক চলাচল নিয়ে বিরোধে নিহতের ঘরের জানালার গ্রীল কেটে হত্যাকারীরা তার শয়ন কক্ষে ঢুকে হাত-পাঁ-মুখ বেধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার ভিকটিম কিংবা আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় লিপিবদ্ধ করেননি।

তিনি আরও বলেন, আসামি আব্দুল মজিদ গ্রেপ্তার হবার পর ২০০৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হত্যার দায় স্বীকার করে ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। হত্যা মিশনে আর কে কে জড়িত ছিলো তাও জবানবন্দীতে প্রকাশ করেন। হত্যার মোটিভ তার জবানবন্দীতে বের হয়ে এসেছে। তিনি রাষ্ট্রপক্ষের নাম প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর না করার আবেদন করেছিলেন।

মামলার এজাহার হতে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১৯ আগষ্ট দিবাগত রাতে নিজ বাসায় খুন হন মেজর সৈয়দ মুজাক্কির আহমদের বাবা নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডার সৈয়দ মঈন উদ্দিন আহমদ। জানালার গ্রীল কেটে হত্যাকারীরা তার শয়ন কক্ষে ঢুকে হাত - পাঁ - মুখ বেধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাসায় নিজ বাড়িতে বাস করতেন নিহত মঈন উদ্দিন।   তিনি উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সহ সভাপতি ছিলেন। আসামি আনোয়ার কবির আজমিরী চিশতী  গার্মেন্টসের মালিক।   ঐ রোডে আসামিদের  প্রতিদিন ১০/১২ টি করে ঝুট বোঝাই  ট্রাক ঐ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতো।

নিহত মঈন উদ্দিন এলাকাবাসীর পক্ষে ট্রাক চলাচলে বাধা দেওয়ায় আনোয়ার চিশতীর সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

ঘটনাটি তদন্ত করেন পুলিশের তিনজন কর্মকর্তা। তারা হলেন, উত্তরা থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক গিয়াস উদ্দিন, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফজলুল হক ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের  পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। ঘটনা তদন্ত করে ২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

আসামিরা হলেন  আনোয়ার কবির আজমিরী চিশতী, আব্দুল মজিদ, মোজাম্মেল হোসেন, মনির হোসেন মোল্লা, রাসেল ওরফে শাহিদ হোসেন, শাহজাহান, আফছু ওরফে আফসার উদ্দিন খান, অলি মিয়া, আমজাদ হোসেন ও বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল।
২০ আগষ্ট নিহতের ছেলে মেজর সৈয়দ মুজাক্কির আহমদ বাদী হয়ে উত্তরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মহানগর প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আবুল বাসার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

উল্লেখ্য, গত ২৮ ডিসেম্বর উত্তরার প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ হত্যা মামলাকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা হিসেবে চিহ্নিত করে এ মামলার পাঁচ আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক কানিজ আক্তার নাসরিনা খানম। এর মধ্যে পলাতক দুই আসামিও ছিলেন। এ নিয়ে মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে প্রত্যাহারের একদিন পর ২৯ ডিসেম্বর ওই পাঁচ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৩ জানুয়ারি রাজনৈতিক বিবেচনায় ৫ আসামিকে খালাস দেওয়া সংক্রান্ত নিজের দেয়া আদেশ প্রত্যাহার করে সব আসামির বিরুদ্ধে মামলা চালানোর নির্দেশ দেন আদালত।

বাংলাদেশ সময় ১৫০০ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad