ঢাকা: শরীর একটু খারাপ হলে প্রত্যেকেরই মনে উৎকণ্ঠা জাগে। স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা হয় কি রোগ হলো তা নিয়ে।
আর ইন্টারনেটে তথ্যের বড় ও বিশ্বস্ত ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিতি উইকিপিডিয়া। কিন্তু উইকির সব তথ্য কি সত্য?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এটাকে খুবই খারাপ প্রবণতা বলেছেন গবেষকরা। কেননা গবেষণায় উঠে এসেছে, ১০টি সাধারণ অসুখ সম্বন্ধীয় মেডিকেল ব্যাখ্যার মধ্যে নয়টিতেই ভুল তথ্য রয়েছে উইকিপিডিয়ায়।
জার্নাল অব দ্য আমেরিকান ওসটিওপ্যাথিক অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিতে এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী গুগল থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে ভুল চিকিৎসার শিকার হন।
কারণ এ জনপ্রিয় ওয়েবসাইটটি সাধারণ ব্যবহারকারীর তৈরি। পাশাপাশি সুযোগ রয়েছে যেকোনো ব্যবহারকারীর তথ্য সম্পাদনা, সংযোজন এবং বিয়োজন করার। ফলে ভুল তথ্য বাড়ার ঝুঁকি স্বাভাবিকভাবে বেশেই থেকে যাচ্ছে।
২০০১ সালে শুরু হওয়ার পরপরই ইন্টারনেটে সাধারণ তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে উইকিপিডিয়া খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২৮৫টি ভাষায় ৩১ মিলিয়নের বেশি বিষয়ে এদের কলাম অন্তর্ভুক্ত করা রয়েছে। যার মধ্যে কমপক্ষে ২০ হাজার স্বাস্থ্য বিষয়ক।
জার্নালে বলা হয়, ডায়াবেটিস, ফুসফুস ক্যান্সার এবং মেরুদণ্ডে ব্যাথা সংক্রান্ত চিকিৎসায় উইকিপিডিয়ার তথ্য ব্যবহার করা হলে রোগ নিরাময়ে দেরির পাশাপাশি কখনও কখনও নতুন রোগেরও জন্ম হতে পারে।
‘বিষণ্নতায় ব্যবহৃত ওষুধ শিশুদের জন্য কার্যকর নয়’ এ ধরনের ভুল তথ্য সন্তানদের চিকিৎসায় অভিভাবকদের অনাগ্রহ জন্মাতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন গবেষক দল।
গবেষকদের পাশাপাশি, ওষুধ কোম্পানিগুলোও সাধারণ ব্যবহারকারীদের মেডিকেল বিষয়ক কলাম সম্পাদনা, সংযোজন এবং বিয়োজনের সুযোগ রাখার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পবেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রবার্ট হাসটি বলেন, গবেষকদের কখনই উইকিপিডিয়াকে তথ্য প্রাপ্তির প্রধান উৎস হিসেবে বেছে নেওয়া উচিত নয়।
কারণ, যে প্রক্রিয়ায় মেডিকেল জার্নালগুলো প্রস্তুত করা হয়, উইকিপিডিয়ায় থাকা কলামগুলো সে প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় না।
গবেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো মাধ্যম নির্ধারিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা। কারণ তিনি রোগীর অতীতে হয়ে যাওয়া অসুখ সম্পর্কে জানেন এবং নির্দিষ্ট সমস্যার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়গুলো বিবেচনা করে চিকিৎসা পরামর্শ দেন।
কেবল রোগীরা নন, অতীতের একটি গবেষণায় দেখা গেছে ৭০ ভাগ চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থী রেফারেন্স হিসেবে উইকিপিডিয়া ব্যবহার করেন। এখনও চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থী যারা ভুল তথ্য ভরা উইকিপিডিয়াকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করছেন তাদের সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানানো হয় জার্নালে।
উইকিপিডিয়ার তথ্যগুলো নির্ভুল করতে ফেলো চিকিৎসকদের সম্পাদনায় যুক্ত করা উচিত বলেও মন্তব্যও করা হয় জার্নালে।
সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে ২০১২ সালের এক জরিপে। দেখা গেছে প্রায় এক হাজার নারী ইন্টারনেট থেকে ভুল চিকিৎসা নেওয়ার ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৪