ঢাকা: সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিকদের ডাকা ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘটের প্রথম দিন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীবাসী।
জরুরি প্রয়োজনে সাধারণ যাত্রী ও রোগীদের ভোগ করতে হয়েছে সীমাহীন কষ্ট।
মঙ্গলবার সারাদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় যাত্রীরা সিএনজির জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেকক্ষণ পর পর দু’একটি সিএনজি পেলেও দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে গন্তব্যস্থলে যেতে হয় তাদের।
সকাল ১১টা ও বিকালে দু’বার বৃষ্টি নামার পর এ দুর্ভোগ আরো চরম আকার ধারণ করে।
মহাখালী তিতুমীর কলেজের সামনে যাত্রী আব্দুল রশিদ অভিযোগ করেন, অন্যদিন সিএনজি ড্রাইভাররা এসে ডাকাডাকি করলেও আজ দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো সিএনজির দেখা মেলি নি।
তিনি বলেন, মোটরসাইকেলে অ্যাক্সিডেন্ট করার পর আর আমি পাবলিক বাসে চড়তে পারি না। ধর্মঘট ডেকে অহেতুক আমাদের কষ্ট দেওয়া।
দ্বিগুণ ভাড়া আদায়
মহানগরীতে চলাচলকারীর অধিকাংশ সিএনজি মিটারে চলে না। এরপরও মঙ্গলবার যেসব সিএনজি বের হয়েছে বিশেষ করে ঢাকা ‘দ’ সিরিয়ার
(প্রাইভেট সিএনজি) তারাও আদায় করেছে দ্বিগুণ ভাড়া।
শাহবাগ বারডেম হাসপাতাল থেকে অপারেশন হওয়ার পর সদ্য রিলিজ পাওয়া স্ত্রী নিয়ে সিএনজির জন্য অপেক্ষা করছিলেন আজিজুল ইসলাম।
তিনি জানান, তার স্ত্রীর অপারেশন হওয়ায় তাকে নিয়ে পাবলিক বাসে চড়া সম্ভব না। বিকেল ৩টার পর থেকে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করে দু’টি সিএনজির দেখা পেয়েছি। কিন্তু যাত্রাবাড়ী যেতে ভাড়া চায় ৬০০ টাকা। অন্য সময় যেখানে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় যাওয়া যায়।
তিনি বলেন, বাধ্য হয়ে ট্যাক্সিক্যাবের জন্য অপেক্ষা করছি।
ফার্মগেটে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন আওয়াল নামে একজন সিএনজি ড্রাইভার। তিনি ঢাকা দ ১১-১৮৮৬ নম্বার গাড়িটি চালান।
মঙ্গলবার অন্যদিনের চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়া কথা স্বীকার করে বলেন, আজ রোডে কোনো সিএনজি নেই। তাই যাত্রীর চাপ বেশি। এজন্য আজ একটু ভাড়া বেশি নিচ্ছি।
বেশির পরিমাণ কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফার্মগেট থেকে
মিরপুর-১০ অন্যদিন সাধারণত ১৫০-২০০ টাকায় যাই। আজ সেখানে ৩৫০ টাকায় দুইবার আপ-ডাউন করেছি। এটা আবার যাত্রীদের উপর নির্ভর করে। কোনো কোনো যাত্রীর কাছ থেকে ৪০০ টাকাও নিচ্ছি।
জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম খসরু বাংলানিউজকে জানান, যাত্রীদের কষ্টের বিষয়টি আমাদের অনেক কষ্ট দেয়। কিন্তু আমাদের দাবি মেনে নিলে এখনই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেব।
তিনি জানান, এসব দাবিতে আমরা আরও কয়েকবার ধর্মঘট করেছি। কিন্তু সরকার আমাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি। যারা আমাদের ধর্মঘট অমান্য করে রাস্তায় সিএনজি নামিয়েছে তাদের ব্যাপারে সমিতি কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় সিএনজি অটোরিকশার ইকোমিক লাইভ ১৫ বছর করার প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে টানা ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দেয় ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদ।
মালিকপক্ষের দাবি, বিআরটিএর খসড়া সুপারিশ, বুয়েটের সুপারিশ এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ মেনে নিয়ে সিএনজি অটোরিকশার ইকোনোমিক লাইফ ১৫ বছর দিতে হবে। মন্ত্রণালয় বুয়েটের সুপারিশ মেনে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
২০০২ সালে রাজধানী থেকে টু স্ট্রোক থ্রি হুইলার তুলে দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নামানো হয়। তখন অটোরিকশার আয়ুষ্কাল ধরা হয় ৯ বছর। পরে মালিক সমিতির দাবিতে তা আরও ২ বছর বাড়ানো হয়। সে হিসাবে চলতি বছর এসব অটোরিকশার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
এর আগে শনিবার সিএনজি অটোরিকশার মেয়াদ ১৫ বছর করা দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে দাবি মানা না হলে মঙ্গলবার থেকে টানা ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘট পালন করা হবে বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৪