ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

নন্দন পার্কে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ: লাঠিচার্জে আহত অর্ধশতাধিক

জাহিদুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১১
নন্দন পার্কে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ: লাঠিচার্জে আহত অর্ধশতাধিক

ঢাকা: সাভারে নন্দন পার্কে পুলিশ-দর্শনার্থী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। ক্ষুব্ধ দর্শনার্থীরা ভাংচুর করেছে ৫/৬ টি বাস।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আতংকে নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। সড়কের দু’পাশে আটকা পড়ে কয়েকশ’ যানবাহন। এর ফলে নৈশকোচের যাত্রীরা পড়েছেন মারাত্মক বিপাকে।

শুক্রবার রাতে আশুলিয়ার বাড়ইপাড়ায় নন্দন পার্কে এ ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষের ঘটনায় শেষ মূহূর্তে পণ্ড হয়ে যায় টেলিভিশন রিপোর্টার্স ইউনিটি অব বাংলাদেশ (ট্রাব) আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও আইনপ্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তাদের কেউ সেখানে যাননি।

এক পর্যায়ে বিকেল থেকে নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পুরস্কার বিতরণ কার্যক্রম। চলচ্চিত্র নাট্যাঙ্গনের শিল্পী ও কলাকুশলীদের অনেকের নাম পুরস্কারের জন্যে ঘোষণা করা হলেও তাদের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত সেখানে যাননি।

কিন্তু অনুষ্ঠানের আগে খ্যাতিমান তারকাদের ছবি যুক্ত করে প্রচারণা চালায় সংগঠনটি।

সন্ধ্যা গড়িয়ে যাওয়ার পরও পোস্টারে থাকা জনপ্রিয় মুখদের অনেককে অনুপস্থিত দেখে ক্ষোভে ফুঁস ওঠে দর্শনার্থীরা।

সুরাইয়া আফরোজা নামের কলাবাগান থেকে আসা এক গৃহবধূ জানান, বিকেল থেকেই অধৈর্য্য হয়ে পড়েন দর্শনার্থীরা।

সন্ধ্যার দিকে পেছন থেকে দর্শনার্থীরা একযোগে বোতল ছুঁড়ে মারলে অনুষ্ঠানের উপস্থাপক  ইসমাঈল হোসেন পেছনে গ্রীনরুমে গিয়ে আশ্রয় নেন।

এক পর্যায়ে দর্শনার্থীদের অনেকে মিনারেল ওয়াটারের বোতলে মানবমূত্র ভরে তা উচ্চ গতিতে ছুঁড়ে মারেন মঞ্চ ছাড়াও সামনের সারিতে থাকা ভিআইপি দর্শনার্থীদের উদ্দেশে। মানবমূত্রের কারণে ভিআইপি আসনের দিকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আতংকে অনেকে ওই স্থান ত্যাগ করার প্রস্তুতি নেন।

রাত সাড়ে আটটার দিকে ঢাকাই চলচ্চিত্রের হার্টথ্রব সাকিব খান না পৌঁছানোর প্রতিবাদে বেপরোয়া হয়ে পড়েন দর্শনার্থীরা।

তারা এক যোগে হৈ চৈ করে চেয়ার ভাংচুর করলে পুলিশ গিয়ে তাদের লাঠিচার্জ শুরু করে। এর পর উভয়পরে মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ।

এ পর্যায়ে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে গেলে গ্রীনরুমে থাকা শিল্পী ও আয়োজকদের অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটোছুটি শুরু করেন।

পুলিশের লাঠিচার্জ ও সংঘর্ষে আহত হয় অর্ধশতাধিক।

দর্শনার্থীদের অনেকে এ সময় বাইরে অপেমান ৫/৬ টি সুপার বাসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করলে নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়কে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।

পরে ক্ষুব্ধ দর্শনার্থীদের একাংশ ওই সড়কে অবস্থান নিলে উভয় দিকে আটকে পড়ে কয়েক হাজার যানবাহন।

দর্শনার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করার কথা স্বীকার করে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান জানান, তারা যখন একের পর এক বাসে হামলা ও ভাংচুর শুরু করে তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য হয়েই পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
তিনি জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে গাজীপুর থেকে অতিরিক্ত আমর্ড পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়।

আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, পোস্টারে নামীদামী তারকার ছবি দেখে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি নিজেও অনুষ্ঠান উপভোগ করতে গিয়েছিলেন। তবে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত নামী তারকাদের কাউকে না দেখে ও পেছন থেকে উপর্যুপরি বোতল নিক্ষেপের কারণে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে নিরাপদে পার্ক ত্যাগ করেন।

সংঘর্ষের বিষয়টি স্বীকার করে নন্দন গ্রুপের হেড অব অপারেশন মেজর অবসরপ্রাপ্ত মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান সাকেব জানান, চলচ্চিত্র নায়ক সময়মতো না আসায় দর্শনার্থীরা অধৈর্য হয়ে চেয়ার ভাংচুর ও গাড়িতে হামলা চালায়।

এ ঘটনায় দুই দর্শনার্থীকে আটক  করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সাকেব জানান, আয়োজকরা কেবল তাদের পার্কে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলো মাত্র। তারকাদের আনা নেওয়ার দায়-দায়িত্ব আয়োজক সংগঠনের।

ট্রাব সভাপতি সালাম জানান, সাকিব খান সময়মতো না আসায় দর্শনার্থীদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়তে হয় তাদের।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।