ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাবি’র ফারুক হত্যা মামলা

এক বছরেও অভিযোগ পত্র দিতে পারেনি পুলিশ

শরীফ সুমন ও জনাব আলী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১১
এক বছরেও অভিযোগ পত্র দিতে পারেনি পুলিশ

রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চাঞ্চল্যকর ফারুক হত্যাকাণ্ডের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অভিযোগ পত্র (চার্জশিট) দিতে পারেনি পুলিশ। ঠিক কবে নাগাদ চার্জশিট দিতে পারবে তাও স্পষ্ট করে বলতে পারেনি পুলিশ।



এছাড়া একই দিনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রশিবিরের সশস্ত্র হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার দায়ের করা আরো ১৩ টি মামলার কোনটিতেই অভিযোগ পত্র দিতে পারেনি পুলিশ।

২০১০ সালের ৮ জানুয়ারিতে ছাত্রশিবির  নির্যাতন চালিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শেষ বর্ষের শিার্থী ফারুক হোসেনকে। ওই দিন রাতেই তারা ফারুকের লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেয়। এরপর ঘটনাটি নিয়ে  দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

এছাড়া ঐদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। এঘটনায় পুলিশসহ ছাত্রলীগের অর্ধশত নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়।

এ ঘটনার পরপরই ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগে মতিহার থানায় ১৪ টি মামলা দায়ের করা হয়। যার মধ্যে পাঁচ (৫) নম্বর মামলাটি হচ্ছে ফারুক হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত। এছাড়া সন্দেহভাজন হিসেবে এসময় জামায়াতের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 এদিকে হত্যাকান্ডের এক বছর পেরিয়ে গেলেও পুলিশের তদন্ত কাজ শেষ না হওয়ায় ােভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার পরিবারের আত্মীয়-স্বজন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গ।      

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১০ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি রাতে ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনকে হত্যাসহ হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এ পর্যন্ত তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে।

প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় মতিহার থানার উপ-পরিদর্শক শহীদুল ইসলামকে। এরপর তাকে বাদ দিয়ে এসআই আরিফুজ্জামানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে তাকে বাদ দিয়ে দায়িত্ব  দেয়া হয় এসআই সোহেল রানাকে। এরপর গত বছরের নভেম্বর মাসে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন রাজশাহী মহানগর  গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক  তোফাজ্জল  হোসেন খান।

 তোফাজ্জল হোসেন খান বাংলানিউজকে জানান, এ মামলার ৩৫ জন এজাহারভুক্ত আসামির পরিচয় পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, এখনো অনেকের স্যা  নেওয়া বাকী রয়েছে। স্যা নেওয়া শেষ হলেই অভিযোগ পত্র দেওয়া হবে। কিন্তু আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে ফারুক হোসেন মালার অভিযোগ পত্র দাখিল সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি। তবে মামলার অনেক অগ্রগতি হয়েছে। চলতি বছরেই চার্জশিট হবে।
 
তিনি বলেন, মামলাটি অধিকতর স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল থেকেও এ ব্যাপারে তদারকি কার হচ্ছে। রাজশাহীর পুলিশ কমিশনারও সার্বিকভাবে তাকে এ তদন্ত কাজে সহযোগিতা করছেন বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় মোট ১৪টি মামলার মধ্যে ফারুক হত্যাকাণ্ডের মামলা ছাড়াও পুলিশের ওপর হামলার মামলার অনেক অগ্রগতি হয়েছে বলেও জানান তিনি ।

এবিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐ ঘটনায় ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের  নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে পাঁচ (৫) নম্বর মামলাটি হচ্ছে ফারুক হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত। এ মামলার এজাহারে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ২৫ জন সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে জামিন  পেয়েছেন।

তিনি জানান, ওই রাতের ঘটনায় দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি রয়েছে মাত্র পাঁচজন। আসামীরা হচ্ছেন- ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শামসুল আলম ওরফে গোলাপ, নবাব আবদুল লতিফ হল শাখার ছাত্রশিবিরের সভাপতি হাসমত আলী, শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রাইজুল ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র ও শিবির ক্যাডার রুহুল আমিন এবং বাপ্পী।

এছাড়া সন্দেহভাজন হিসেবে আরো ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে আছেন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী ও রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির আতাউর রহমান।

এছাড়া এঘটানয় অভিযুক্ত শাহীন নামের এক আসামী ঘটনার দুই দিন পর র‌্যাবের ক্রস ফায়ারে মারা গেছে বলে জানা গেছে।

আবুল খায়ের জানান, রাবির ঘটনায় মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান  মুহাম্মদ মুজাহিদ ও দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে আগামী ১৪ ফেব্র“য়ারি। রিমান্ড মঞ্জুর হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এদিকে ৮ ফেব্র“য়ারি হলে হলে শিবিরের তাণ্ডবের ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত ওই তদন্ত কমিটি অতি সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কবীর বাংলানিউজকে জানান, তদন্ত শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তবে তদন্তে  কোনো সুপারিশ করা হয়েছে কিনা এ নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৫ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।