ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রূপগঞ্জ সেনা আবাসন প্রকল্পের বিরুদ্ধে চক্রান্ত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১১
রূপগঞ্জ সেনা আবাসন প্রকল্পের বিরুদ্ধে চক্রান্ত

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেনাবাহিনীর আবাসন প্রকল্পের বাস্তবায়ন আটকে রয়েছে একটি  কুচক্রী মহলের তৎপরতায়।

অভিযোগ রয়েছে প্রকল্পটি যাতে বাস্তবায়িত না হতে পারে সে লক্ষ্যে মহলটি স্থানীয় মানুষকে প্ররোচনা দিয়ে যাচ্ছে।



আর তাতে হুমকির মুখে পড়েছে আর্মি হাউজিং স্কিম (এএইচএস) প্রকল্পটি। অথচ প্রকল্পটির কাজে হাত দেওয়ার আগে সেনাবাহিনী সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সব নিয়ম মেনেই কাজ শুরু করে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অনেক সেনা পরিবার, রাজনৈতিক মহল ও সংশ্লিষ্টরা।
 
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গত বছরের শুরুতে সেনাবাহিনী রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে আর্মি হাউজিং স্কিম (এএইচএস) নামে একটি প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু একই বছর অক্টোবরে প্রকল্পে কাজ চলাকালে একটি কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় এলাকাবাসীর একাংশ প্রকল্পটির বিরুদ্ধে বিুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা তাদের এ প্রকল্প থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।

সংবিধানের ৪২ ধারা অনুযায়ী আবাসন মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও সেনাবাহিনী আজও তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

সূত্র জানায়, নিজস্ব অর্থায়নে সেনাবাহিনী তাদের কর্মকর্তাদের জন্য সরকারের সম্মতি সাপেে প্রকল্পটির উদ্যোগ নেয়। এর পরিপ্রেেিত প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য স্থানীয় কৃষিভূমি কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সড়ক, সেতু, উদ্যান, মার্কেট, শিাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টারের মতো সব নাগরিক সুবিধা রেখে প্রকল্পটির কাজ এগিয়ে নেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল এটিকে একটি বিশ্বমানের স্যাটেলাইট শহর হিসেবে গড়ে তোলা। এটি পরিচালনায় সেনা সদর দফতর একটি কমিটি গঠন করে। প্রকল্পের আওতাভুক্ত সব সদস্য এ উদ্দেশ্যে মোটা অঙ্কের টাকা এএইচএসকে দেন এবং এ জন্য অনেক সেনা সদস্য ব্যাংক থেকে ঋণও নেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্পের শুরু থেকে বাজারমূল্যে জমি কেনার জন্য স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলোচনা চলতে থাকে। জমির মালিকদের প্রচলিত বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দাম প্রস্তাব করা হয়।

উল্লেখ্য, সেনা প্রকল্পটি শুরুর আগে সেখানে জমির মূল্য ছিল বিঘাপ্রতি ১০ লাখ টাকার নিচে। কিন্তু সেনাবাহিনী ১৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম দিয়ে আসছিল। ঘটনার কয়েক মাস আগে থেকে কুচক্রী মহল প্রকল্পটি বিভিন্নভাবে ব্যর্থ করতে উঠেপড়ে লাগে। তারা স্থানীয়দের মনে সেনাবাহিনী এবং তাদের প্রকল্পবিরোধী মানসিকতা তৈরিতে প্ররোচনা দিতে থাকে। তারা স্থানীয়দের উত্তেজিত করে এই বলে যে, সেনাবাহিনী তাদের সম্পত্তি জোর করে নিয়ে নিতে যাচ্ছে। পরে সেখানে ভূমিমালিক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং এএইচএস কর্তৃপরে মধ্যে জমি কেনার বিষয়ে সমঝোতা হয়। প্রকল্প কর্তৃপ স্থানীয়দের সন্দেহ দূর করতে কয়েক দফা আলোচনা চালায়।

কিন্তু তাদের এ প্রক্রিয়া উপো করে কুচক্রী মহলটি স্থানীয় লোকজন নিয়ে এএইচএস প্রকল্প কার্যালয়ের দিকে প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে আসে এবং কার্যালয় ভাঙচুর করে। এ ছাড়া তারা সেনাবাহিনীর লোকজনকে মারধর করে এবং তাদের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা গাছ কেটে, টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। একপর্যায়ে সেখানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

সেনাবাহিনী স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনায় বসলে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ব্যক্তি সেখানকার অস্থায়ী সেনাকাম্পে হামলা চালায়। গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে, ক্যাম্পে কয়েকজন প্রতিবাদীকে আটকে রাখা হয়েছে, যা পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

ওই সময় বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করে বিােভকারীরা। কিছুণের মধ্যে বিােভকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা আহত হলেও উত্তেজিত বিােভকারীরা তাদের চিকিৎসা নিতে দেয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দেয়।

এ ঘটনার পরপর সাধারণ আহত ব্যক্তি ও সেনাবাহিনীর লোকজনকে হেলিকপ্টারে সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়। এ অবস্থায় সেনা কর্তৃপ সেখান থেকে তাদের সব কার্যালয় প্রত্যাহার করে এবং নতুন করে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সেনা কর্মকর্তাদের হাসপাতালে নেওয়ার আগে প্রায় কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। উত্তেজিত জনতা প্রকল্পের পাশে যে ক্যাম্প রয়েছে সেখানে নেমে আসে। বিকেলে সেনাবাহিনী স্থান ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ছেড়ে আসা কার্যালয়গুলো আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা কার্যালয়ের জন্য ব্যবহƒত টিনশেডসহ সেনাদের রেখে আসা আসবাব লুট করে।

ওই ঘটনার পর কুচক্রী মহল আবার গুজব ছড়ায় যে তাদের তিনজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এবং এ জন্য তারা সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করতে থাকে এই বলে যে, তাদের অপহরণ করেছে সেনারা। কিন্তু টেলিভিশনগুলোতে দেখা যায়, সেনাবাহিনী হেলিকপ্টারে স্থান ত্যাগ করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সেনাবাহিনী এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সেনা কর্মকর্তাদেরও অধিকার রয়েছে জমি কেনার, যেন তারা অবসরের সেখানে থাকতে পারেন। আইন সবাইকে মেনে চলতে হবে। সেনা কর্মকর্তারা এ দেশের মাটির সন্তান। এবং তাদের বাড়ি তৈরির সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত হবে না।

বাংলাদেশ সময় ২১১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।