ঢাকা: বিভিন্ন বয়েসের নারী-পুরুষ। রাস্তায় কেউ শুয়ে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন, কেউ মগ্ন গভীর রাতের খোশগল্পে, কেউ বা মনের সুখে সিগারেট ফুঁকছে।
গভীর রাতে রাজধানীর শাহবাগের হাইকোর্ট মাজারের গেটে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এখানে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ নেই। সবাই ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। তবে জায়গা নিয়ে কারো সঙ্গে কোনো সমস্যা নেই। যেন সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই একই পরিবারের সদস্য! একে অপরের নাড়ি ছেঁড়া ধন।
পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই শুয়ে-বসে থাকা সবাই নড়ে-চড়ে বসলেন। একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। পাশেই দেখা গেল টহলরত একটি পুলিশের গাড়ি।
কথা বলতে চাইলে আতঙ্কিত কণ্ঠে বললেন, বাবা আপনারা কারা? কেন এসেছেন? কি জানতে চান? আপনাদের কাছে ক্যামেরা কেন? এক সঙ্গে অনেক প্রশ্নের ঢালী?
নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ায় কিছুক্ষণের জন্য সবাই নিরব হয়ে গেল। নিজেদের যা আছে তা বাড়িয়ে দিলেন বসার জন্য।
পাশে বসলে আনন্দিত হয়ে হাসেম আলী (৬৫) জানালেন, তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ। তিন সন্তান রয়েছে তার। সন্তানদের সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। পারিবারিক কোনো পিছুটান নেই তাই মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়ান।
তিনি বলেন, ২০/২৫ বছর ধরে দেশের মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়াই। বাড়িতে ভালো লাগে না তাই এখানে এসে থাকি। পাইলে খাই না পাইলে খাই না। আমরা কারো কোনো ক্ষতি করি না।
তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে আরেক বৃদ্ধ আরশাদ আলী (৬০) বলেন, এখন আগের মত মাজারে লোকজন আসে না। এক সময় দিন-রাত সব সময় বিভিন্ন বয়সের লোকজন আসতো।
তারা জানান, হাইকোর্ট মাজারে বৃহস্পতিবারে লোক সমাগম বেশি হয়। এছাড়া ওরস ও শবে বরাতেও লোকসমাগম বাড়ে।
কেন আসেন? জানতে চাইলে-আরশাদ আলী বলেন, মাজারে এলে মনটা ভরে যায়। ক্ষুধা লাগে না আর মাজারের আশপাশে আমাদের থাকতে কোনো সমস্যা হয় না। যে কোনো লোক এসে থাকতে পারে। শুধু বৃষ্টি আসলে একটু সমস্যা হয়।
একই চিত্র রাজধানীর গুলিস্তানের গোলাপ শাহের মাজারে। সেখানে কথা হয় বাদামতলী এলাকার সেন্টু মিয়ার (৩৮) সঙ্গে।
তিনি পেশায় ট্রাক চালক। তিনি বলেন, ঢাকার মধ্যে যতগুলো মাজার আছে এরমধ্যে এটা খু্বই ‘গরম’ মাজার। আমার স্ত্রী প্রায়ই আসেন আজ আমাকে নিয়ে এসেছেন।
এসময় গোলাপ শাহ মাজারের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ দীর্ঘ দিনেও শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন ভক্তরা।
অবিলম্বে এই ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে ভক্ত-আশেকানরা দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৯ ঘণ্টা, মে০৪, ২০১৪