ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের মাত্র ১০ শতাংশের দারিদ্র্য বিমোচন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫২ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৪
ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের মাত্র ১০ শতাংশের দারিদ্র্য বিমোচন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ক্ষুদ্র ঋণ দারিদ্র্য বিমোচনে সফল হতে পারছে না বলে নিজেই স্বীকার করলেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউণ্ডেশন (পিকেএসএফ) প্রধান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। ২০১৩ সালে ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীত‍াদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ দারিদ্র্য সীমার উপরে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।



শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে (পিকেএসএফ) ভবনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ‘অতিদরিদ্রদের অবস্থা ও উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভাটি আয়োজন করে পিকেএসএফ ও কৃষি শ্রমিক অধিকার মঞ্চ।
 
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ড.খলীকুজ্জমান আরও বলেন, বাংলাদেশ যে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য বিরাজমান একমাত্রিক ব্যবস্থা দিয়ে তা নিরসণ সম্ভব না।

এ সময় গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, গবেষণায় দেখা গেছে ২০১৩ সালে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশের দারিদ্র্য থেকে উত্তরণ ঘটেছে। ২০০৯ সালে এ হার ছিলো ৯ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০০৭ সালে ছিলো মাত্র ৭ শতাংশ।

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে যারা দারিদ্র্য বিমোচন করেন তারাও স্থায়ীভাবে তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারছেন না। আবার যারা টিকে থাকেন কিছু দিন পর তাদের অবস্থানও নড়বড়ে হয়ে যায়।

খলীকুজ্জমান এ সময় আরও বলেন, পিকেএসএফ দারিদ্র্য বিমোচন কর‍ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু মাঝে পথ হারিয়ে ফেলে এটি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বিষয়টি অনুধাবন করে আমি একটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে দায়িত্ব নিয়েছি। তা হলো কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন। এখন পিকেএসএফ শুধু ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান না। এটি একটি উন্নয়ন সংস্থাও।
 
এ লক্ষ্যে দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের পাশাপাশি ২০১০ সাল থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা, কাজের প্রশিক্ষণ এবং স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান করছে পিকেএসএফ। যা বর্তমানে আগের তুলনায় অনেক ফলপ্রসূ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 
প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষ‍ার হার এখনো কম। তবে প্রাথমিক শিক্ষার হার আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এখন সকলেই ভর্তি হয়। অবশ্য দারিদ্র্যের কষাঘাতে কিছু দিন পরই স্কুল থেকে অনেকে ঝরে পড়ে। পিকেএসএফ এ সমস্যা অনুধাবন করে সমন্বিত উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।
 
তিনি আরও বলেন, সব ধরনের উন্নয়ন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। রাজনীতি ছাড়া কোনো কিছুরই উন্নয়ন সম্ভব না। মানুষ একটি জিনিষ উদ্ভাবন করতে পারে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় না আসে ততক্ষণ তা আলোর মুখ দেখে না। নতুন নতুন বিষয়কে এগিয়ে নিয়ে যায় রাজনীতি।
 
দারিদ্র্য নির্মূল প্রসঙ্গে ড. খলীকুজ্জমান বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে অতি দরিদ্র নির্মূল করতে হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য অতিদরিদ্র গোষ্ঠীর ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের উপরের দিকে তুলে আনতে হবে। তাদের উন্নয়ন ছাড়া অতিদরিদ্র নির্মূলের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
 
আলোচনা অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সরকার ১৯৯০ সালে পিকেএসএফ প্রতিষ্ঠা করে। ২০০২ সাল থেকে ভূমিহীন, ভিক্ষুক, ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মী, ভবঘুরে, আদিবাসী, দলিত, বস্তিবাসী, মৌসুমী শ্রমজীবী, নদীভাঙ্গন এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠী, প্রান্তিক চাষী, অন্যের দয়ার উপর নির্ভরশীল নারী প্রধান পরিবার এবং দৈহিকভাবে প্রতিবন্ধী এমন অতিদরিদ্রদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষায়িত কার্যক্রম গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে পিকেএসএফ এক কোটিরও বেশি পরিবারকে টেকসই কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে।
 
পিকেএসএফ’র সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী, পিকেএসএফ এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের ও  ড. জসীম উদ্দিন প্রমুখ।
 
** জঙ্গিদের নেত্রী খালেদাকে তিরস্কার করুন: ইনু

বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।