ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

রাজশাহীতে গড়ে উঠছে হিযবুত তাওহীদের জঙ্গি নেটওয়ার্ক

জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১১
রাজশাহীতে গড়ে উঠছে হিযবুত তাওহীদের জঙ্গি নেটওয়ার্ক

রাজশাহী: বাংলা ভাইয়ের উত্থান ও পতনের পর জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাওহীদ নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু থেমে নেই সংগঠনটির কার্যক্রম।

  রাজশাহীতে এবার তারা ‘হিযবুত তাহরীর’ নামে আত্মপ্রকাশ করে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। নাম বদল ছাড়া বিপজ্জনক এই সংগঠনটির সবকিছুই চলছে সেই আগের মতো।

টাঙ্গাইলের বায়েজিদ খান পন্নী তাদের কেন্দ্রীয় নেতা । এছাড়া  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিকও এ সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামে গ্রেপ্তারের পর এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুলিশের কাছে এসব তথ্য দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, গোপনে রাজশাহী মহানগরী ও এর আশপাশের এলাকায় নতুন জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মীরা দীর্ঘ দিন ধরে তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। ধর্মের নামে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার সময় পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে গত এক বছরে শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তারও হয়েছে। তবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করায় এরা অল্প সময়ের মধ্যেই আইনের ফাঁক  গলে আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসছে।

এরপর তারা আবার সাংগঠনিক ভীত মজবুত করার কাজে নেমে পড়ছে বলে জানান তিনি।

এদের অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে র‌্যাব ও পুলিশের গোয়েন্দা সদস্যরা।
 
রাজশাহী মহানগর পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত চার মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা থেকে হিযবুত তাহরীর’র ১৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী সদস্যও রয়েছেন।

জিহাদি বই, জিহাদি অনুষ্ঠানভিত্তিক সিডি ও লিফলেট বিতরণের সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি রাতে রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকায় থেকে বেশ কিছু জিহাদি বই, সিডি ও লিফলেটসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর তারা সংগঠনের তৎপরতা নিয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, টাঙ্গাইলের বায়েজিদ খান পন্নী হিযবুত তাহরীর-এর (হিযবুত তাওহীদ) প্রধান নেতা। এর সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক জড়িত রয়েছেন। এসব শিক্ষকের নির্দেশ ও তত্ত্বাবধানেই তারা সংগঠনের প্রচার চালিয়ে আসছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের বক্তব্য: ইসলামের পথে লোকজনকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্যই তারা এ সংগঠনে যোগ দিয়েছে।

এ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিকের নাম তারা পুলিশকে জানিয়েছে। কিন্তু পুলিশ তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করেনি।

শিক্ষকদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।

রাজশাহী গ্রেপ্তার হিযবুত তাহরীর সদস্যদের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ জানায়, রাজশাহী ও তার আশপাশের জেলাগুলোতেও তাদের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় তাদের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সমাজের নিম্ন আয়ের উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীদের টাকার বিনিময়ে সংগঠনে  ভেড়ানো হচ্ছে। গত ৭/৮ মাস ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে মতিহারের মেহেরচণ্ডি, বুধপাড়া, কাটাখালি, বিনোদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ কাজে তারা মহিলাদেরও ব্যবহার করছে। মহিলারা বোরখা পরে পাড়া মহল্লায় বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের সাংগঠনিক লিফলেট বিলি করে। এছাড়া নামমাত্র মূল্যে তারা জিহাদি বই বিক্রি করেছে। মাঝে মাঝেই এসব এলাকা থেকে র‌্যাব ও পুলিশের হাতে সাংগঠনিক লিফলেট, জিহাদি বই ও সিডিসহ এরা গ্রেপ্তার হয়।

এ ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার এম. ওবায়দুল্লা বলেন, ‘হিযবুত তাহরীর নামের কোনো সংগঠনকে এখনো নিষিদ্ধ করা হয়নি। তবে কিছু বিতর্কিত বই লিফলেট বহন করার কারণে কয়েক মাসে এ সংগঠনের বেশ কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ’

সংগঠনটির কর্মকাণ্ডের ওপর পুলিশের নজর রয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।