ঢাকা: আমরা পাঁচ জন করে টিউটোরিয়াল ক্লাস করতাম। তিনজন ছেলে আর দুই জন মেয়ে।
শুক্রবার বিকেলে ঢাবির সিনেটভবনে ঢাবি ইংরেজি বিভাগ এলামনাই এসোসিয়েসনের আয়োজিত এই মহামিলন মেলায় শুধু রামেন্দ্র মজুমদারই নয় ইংরেজি বিভাগে অধ্যায়নকালীন সময়ে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্তের স্মৃতি রোমন্থন করে বার বার অতীতে ফিরে যাচ্ছিলেন অনেকে। যাদের মধ্যে ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরি, অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, কণ্ঠশিল্পী মেহরিনসহ আরও অনেকে।
অর্থমন্ত্রী অনুষ্ঠানের প্রধান অথিতির বক্তব্যে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এদেশের ষাটের দশকের শিক্ষাব্যবস্থা আলোকে ঢাবি ইংরেজি বিভাগের অবস্থা তুলে ধরেন।
তৎকালীন পাকিস্থান সরকারের আমলে ইংরেজি সাহিত্য অধ্যায়নকে এতোবেশি মূল্যায়ন না করা হলেও এতে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা সংখ্যা ও কৃতিত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগ থেকে কম ছিল না বলেও তিনি এসময় বলেন।
এ অনুষ্ঠানে এসে নিজের বিভাগের অনেক পরিচিতদের দেখতে পারায় তিনি আনন্দ প্রকাশ করে এর আয়োজকদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ বক্তব্যের পর পরই সবাই মেতে ওঠেন পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর পরিচিতদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে।
এসময় পুরো সিনেট ভবন পরিণিত হয় এক যুগৎপত ইংরেজি বিভাগে। এসময় চা, কফি, পিঠা আর কেক খাওয়ার তালে তালে উপস্থিত এলামনাইরা ফিরে গিয়ে ছিলেন তাদের সেই পুরোনো ক্যাম্পাস জীবনে।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ৪২ বছর ধরে ইংরেজি বিভাগের সঙ্গে থাকা স্বনামধন্য অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে দেখা যায় পুরোনো বন্ধু ব্যাংকার শামসুল হোসাইন, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ারুল হক আর আমেরিকা প্রবাসী আব্দুল করিমের সঙ্গে সরসে ভর্তা, কালীজিরার ভর্তা আর ধনিয়া পাতার ভর্তার সঙ্গে চিতই পিঠা খাওয়ার আনন্দে মেতে উঠতে।
অন্যদিকে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে ১ টাকায় ভাত আর ৫ টাকায় বিরায়ানী খাওয়ার স্মৃতি মনে করে হাসতে দেখা যাচ্ছিল পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকারকে।
অনেকের মত শত ব্যস্থতার মধ্যেও অনুষ্ঠানে আসা লাবনী, এলিনা, মোস্তাক, আর স্বপনের সঙ্গে আড্ডারত কণ্ঠশিল্পী মেহরীন এসময় বাংলানিউজকে বলেন ‘আমি কখনও কোনো অনুষ্ঠানের জন্য আমার কোনো শো মিস করি না, অথচ আজকের এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য আমি আমার সিলেটের একটি শো ক্যান্সেল করেছি।
ইংরেজি বিভাগ থেকে ২০০৭ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করা আসিফ ইকবাল নিজেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সর্ব কনিষ্ঠ এলামনাই হিসেবে উল্লেখ করে বলেন ‘ আমি এ অনুষ্ঠানে না আসলে বুঝতেও পারতাম না যে আমাদের এ বিভাগ জন্ম দিয়েছে এ দেশের এতসব কৃতি সন্তান। এ অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করতে পারায় নিজেকে ধণ্য মনে করছেন বলেও জানান তিনি।
এছাড়াও আজকের এই মিলনমেলায় একটু খুঁজলেই ভিরের ভিতর দেখা গিয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বড় বড় আমলা আর কর্তা ব্যক্তিদের।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আনন্দ হিসেবে ছিল বিভাগের কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান। বিভিন্ন পুরস্কারের মধ্যে তাসলিমা আইরিন আইভি ও আঞ্জুমান আরা লাভ করেন এম এ সামাদ গোল্ড মেডেল আর প্রতিতি শিরিন লাভ করেন প্রিন্সিপাল জালাল উদ্দিন গোল্ড মেডেল।
অনুষ্ঠান পরিচালনা ও ব্যাবস্থাপনার মূল দায়িত্বে ছিলেন ইংরেজি বিভাগ এলামনাই এসোসিয়েসনের সভাপতি অধ্যাপক ড. আহসানুল হক, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা,ও কোষাধ্যক্ষ রেবেকা হকসহ অনুষ্ঠান কমিটির সদস্যরা।
পুরো অনুষ্ঠান জুড়েই ছিল স্মৃতিচারণ, গল্প-আড্ডা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর ইংরেজী বিভাগ এলামনাই এসোসিয়েসনের পরবর্তী কমিটি নির্বাচন।
তবে আজকের এই মিলন মেলায় একের পর এক অতীত আনন্দ অনুভূতি ব্যক্ত আর একেঅপরের খোঁজ-খবর নেওয়ার ভেতর দিয়ে যখন কেটে যাচ্ছিল সময় তখন আবার অনেককেই দেখা যায় ক্যাম্পাসে শেষ দেখা হওয়া প্রিয় মানুষটির কথা স্মরণ করে বেদনায় কাতরাতে।
স্বত:স্ফূর্ত আনন্দের মধ্যে জীবনকে অতিক্রম আর পরবর্তী প্রজন্মকে সত্যিকার অর্থে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে দেওয়ার শপথের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় এ মহামিলন মেলা।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৩, জানুয়ারি ২৮, ২০১১