ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সংসদ সদস্য পদ ধরে রাখতে কারাগার থেকে উদ্যোগ সাকার

জাকিয়া আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১১
সংসদ সদস্য পদ ধরে রাখতে কারাগার থেকে উদ্যোগ সাকার

ঢাকা: চলতি সংসদ অধিবেশনেই যোগ দিতে চান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সংসদ সদস্যপদ ধরে রাখার জন্য স্পিকারের কাছে অধিবেশনে যোগ দেওয়ার সুযোগ চেয়েছেন তিনি।



স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের কাছে সংসদে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে গত মঙ্গলবার তিনি একটি আবেদন পাঠিয়েছেন।

এদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত সন্দেহে তাকে আগামী ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

আর সংসদীয় রীতি বলছে, আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে সংসদে যোগ না দিলে সদস্যপদ হারাবেন সাকা চৌধুরী।

সংসদ সদস্যপদ ধরে রাখতেই ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর মাধ্যমে গত মঙ্গলবার স্পিকারের কাছে আবেদনপত্র পাঠিয়েছেন তিনি।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং তিনি সংসদ ভবনে স্পিকারের খাস কামরায় গিয়ে সাকা চৌধুরীর লেখা একটি চিঠি হস্তান্তর করেছেন। চিঠিতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আগামী সংসদ অধিবেশনে যোগদানের  আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি সাকা চৌধুরীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তিনি সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানান। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল হাইকোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত  দেওয়ার এখতিয়ার এ ট্রাইব্যুনালের নেই।

নিজের হাতে লেখা চিঠিতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী উল্লেখ করেছেন, যে তিনটি মামলায় (রমনায় ফারুক হত্যা মামলা, চট্রগ্রামের ফটিকছড়িতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন) তিনি কারাগারে আছেন ওই তিনটি মামলার একটিতেও তার বিরুদ্ধে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল হয়নি এবং অভিযোগ (চার্জ) গঠিত হয়নি। কাজেই এ অবস্থায় তিনি আসছে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে চান।

স্পিকার কি বলেছেন জানতে চাইলে ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম বলেন, স্পিকার সাহেব চিঠিটি রেখেছেন। তিনি বলেছেন, এই চিঠি জেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আসা উচিত ছিল। পেয়ে যাবেন বললে, ফখরুল ইসলাম সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, গত ৫ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ কারাগারে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার ওপর হওয়া নির্যাতনের বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে এটি চিঠি কারা কতৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে চান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেটা নিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এসময় জেলার এবং ডেপুটি জেলার উপস্থিত ছিলেন।     

তবে স্পিকারের ব্যবহার সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি স্পিকারকে ধন্যবাদ দিতে চাই। কারণ তিনি খুব আন্তরিক ছিলেন আমাদের সঙ্গে। তিনি আমাদের বলেছেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক আইনজীবী বাংলানিউজকে বলেন, এই সেশনের সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে না পারলে “অটোমেটিক্যালি হি উইল লুজ হিজ মেম্বারশিপ”।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মেম্বারশিপ বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সেশনে খালেদা জিয়াসহ সকল বিএনপি সাংসদের মেম্বারশিপ বাতিল হয়ে যাবে যদি তারা যোগদান না করেন। বিএনপির সাংসদরা হয়তো পদ রাখার জন্য যোগদান করবেন।

কিন্তু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাহলে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এই বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করবো। ফাইল করা হয়ে গেছে। গত সপ্তাহে আমরা শুনানি করতে চাইনি। আরও কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদের এবং কিছু কাগজপত্রও হাতে আসা বাকি আছে। তবে আগামী সপ্তাহে সেটা হয়ে যেতে পারে।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাংসদ পদ নিয়ে কথা বলতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ারের মোবাইলে ফোন করলে তার ব্যক্তিগত সহকারী বশির নামের একজন জানান, স্যার অসুস্থ, তিনি কথা বলতে পারবেন না।

আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, যদি তারা হাইকোর্টে রিট করে তাহলে সেটা দেখার দায়িত্ব অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের। আর যেহেতু সংসদের বিষয় তাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন স্পিকার সাহেব।

তবে স্পিকার আখতার হামিদের মোবাইল ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।  

অপরদিকে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সংসদ সদস্য পদ থাকছে কী থাকছে না, সেটা দেখার সময় এখনো আসেনি। ৯০ দিন হোক, তারপর দেখা যাবে। ’

‘কিন্তু উনিতো কারাগারে আছেন, ইচ্ছে করলেই যোগদান করতে পারবেন না জানালে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেবো। ’

বিএনপির অন্য সাংসদরা যোগদান করবেন কী-না জানতে চাইলে জয়নুল আবদিন ফারুক  বলেন, ‘দলীয় ফোরামে এটা আলোচনা হবে, তারপর দল সিদ্ধান্ত নেবে। ’

‘তাহলে সালাউদ্দিন কাদের এরই মধ্যে যে আবেদন করেছেন সংসদে যোগদানের জন্য সেটা কী দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কী-না’-- জানতে চাইলে, একটু রাগান্বিত হয়েই তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। ’ একথা বলেই তিনি ফোন সংযোগ কেটে দেন।

বাংলাদেশ সময় ২১২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।