ঢাকা, বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে নিজেও লাঞ্ছিত ম্যাজিস্ট্রেট!

সানি সরকার, দিনাজপুর ও মোস্তাফিজুর রহমান বকুল, পার্বতীপুর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১১
শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে নিজেও লাঞ্ছিত ম্যাজিস্ট্রেট!

দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময়  লোকজনকে অমর্যাদাকর শাস্তি দেওয়ার এক পর্যায়ে নিজেই ক্ষুব্ধ জনতার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এসি ল্যান্ড) জন কেনেডি জাম্বিল ।

বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার পার্বতীপুর-ঢাকা মোড় এলাকায় এক কলেজশিক্ষসহ বেশ ক’জন মোটরসাইকেল চালককে জনসমক্ষে কান ধরে উঠ-বস করানো ও রাস্তায় শুয়ে গড়াগড়ি দিতে বাধ্য করার জের ধরে ম্যাজিস্ট্রেট এক পর্যায়ে জনরোষের শিকার ও লাঞ্ছিত হন।



জানা গেছে, পার্বতীপুর পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে ২৫তারিখ দিবাগত রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য শহরে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করে প্রশাসন।

উপজেলা প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সহকারী কমিশনার,ভূমি) জন কেনেডি জাম্বিল একদল বর্ডার গার্ড ও পুলিশ নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।

প্রায় আড়াই ঘণ্টায় তিনি শহরের থানা-মোড়, পুরাতন বাজার, নতুন বাজার ও ঢাকা-মোড় এলাকায় কলেজশিক্ষক, এনজিও ও ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ১০/১৫জন মোটরসাইকেল চালককে আটক করেন। এরপর তাদের প্রত্যেককে শত শত লোকের সামনে কান ধরে ওঠ-বস করান এবং রাস্তায় শুয়ে ৫০ বার গড়াগড়ি দিতে দিতে বাধ্য করেন। এহেন অমর্যাদাকর শাস্তির হাত থেকে কলেজশিক্ষক মিজানুর রহমানও রেহাই পাননি।

বেলা দেড়টার দিকে শহরের ঢাকা মোড়ে উপজেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের বড় ভাই খোলাহাটি ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক মিজানুর রহমানসহ কয়েকজনকে আটক করে একইভাবে রাস্তায় গড়াগড়ি দিতে বাধ্য করানোর সময় শহরের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা এহেন বর্বর আচরণের প্রতিবাদ করতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট জন কেনেডির ওপর চড়াও হয়ে তাকে মারধর শুরু করেন। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়। জনতার হাতে লাঞ্ছিত ম্যাজিস্ট্রেট পরে পুলিশ ও বিজিবি প্রহরায় দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

শাস্তির নামে গণহারে রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিকদের অপদস্থ করা এবং মর্যাদা হানিকর, গ্লানিকর বেআইনি সাজা প্রদান প্রসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জন কেনেডি জাম্বিলের সঙ্গে কথা বললে তিনি বাংলানিউজকে দম্ভভরে বলেন, ‘একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তার বিবেচনা অনুযায়ী যে কাউকে যে কোনও সাজা দিতে পারেন। ’

এ ব্যাপারে সাবেক মহানগর পিপি ঢাকা বারের সিনিয়র আইনজীবী ও ফৌজদারী অপরাধ বিশেষজ্ঞ এহসানুল হক সমাজী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার জানা মতে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি কিংবা অন্য কোনও আইনে এ ধরনের শাস্তির কোনও বিধান নেই। ’

তিনি আরও বলেন, ‘শাস্তি হিসেবে একসময়ে বেত্রাঘাত করার আইন ছিল। কিন্তু  বর্তমান সভ্য যুগে তা অনেক আগেই বাতিল হয়ে গেছে। ’  


বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।