ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিশ্ব ইজতেমা: ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পুরো এলাকা জুড়ে

মহিউদ্দীন জুয়েল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১১
বিশ্ব ইজতেমা: ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পুরো এলাকা জুড়ে

টঙ্গী (গাজীপুর) থেকে ফিরে: সকাল থেকেই দলে দলে আসছিলেন লোকজন। নদীর পাড়ে খোলা মাঠ।

মাঠেই টাঙ্গানো হয়েছে অসংখ্য তাবু। তাবুতে অনেকখানি গাদাগাদি। একদিকে চলছে রান্নার আয়োজন। কেরোসিনের চুলায় ধোঁয়া (স্টভ) উড়ছে। তরকারি কাটতে ব্যস্ত কেউ কেউ। পানি আনছেন দলবেধে। ধোয়া মোছা তো আছেই। অন্যদিকে তাবুতে চলছে ধর্মীয় বয়ান। বক্তা একজন। বাকিরা সবাই শ্রোতা। মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। চারিদিকে সুনসান নীরবতা।

শুক্রবার তুরাগ নদীর পাড়ে গিয়ে দেখাগেছে এমনি চিত্র। পরিবেশটা ছিলো একটু অন্যরকম। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পুরো এলাকা জুড়ে। লোকে লোকারণ্য। এখানে শুরু হয়েছে মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ ‘বিশ্ব ইজতেমা’।

প্রথমবারের মতো দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের ৪৬তম এ ধর্মীয় মহাসমাবেশটি। ইজতেমায় শরিক হতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে তুরাগ ময়দানে জমায়েত হচ্ছেন লাখো লোকজন। আসছেন বিদেশি মেহমানরাও। তবে তাদের সবার পরিচয় একটাই- ‘ধর্মপ্রাণ মুসল্লি’।

এদের বয়স কারো ষাট পেরিয়েছে। কারো সত্তর। বার্ধক্য অনেকখানি কাবু করেছে। তবুও ইজতেমায় শরিক হতে পেরে তাদের জীবনের আখেরি তৃপ্তি। আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর। একনাগাড়ে বলেই চলেছিলেন সবাই।

‘আপনার শরীর তো অসুস্থ। এ অসুস্থ শরীর নিয়ে ইজতেমায় এসেছেন?’- প্রশ্ন করতেই ধর্মীয় মনোনিবেশ থেকে মাথা তুলে তাকালেন আব্দুল গফুর (৬৫)। বাড়ি জয়পুরহাট। জবাব দিতেই বুকের শক্ত কাশিটা ঝাকুনি দিয়ে উঠল। ‘তো কি হইছে। আল্লার রাস্তায় এসেছি। অসুখ সারা বছর থাকে। ইজতেমা তো বাবা সবসময় থাকে না। ’

বেলা বাড়ার সঙ্গে ইজতেমার ভিড় বাড়ছিলো। ভিড় ঠেলে একটু সামনে এগুতেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লি মমতাজ আকবরের সঙ্গে কথা হলো। তিনি এ সময় পাটি বিছাতে ব্যস্ত ছিলেন। এই নিয়ে ক’বার এলেন ইজতেমায়?- জানতে চাইলে বলেন,‘তা তো বাবা ২০ বারের মতো হবেই। বছরের এ সময়টার জন্যই যত অপেক্ষা। কত লোক আসে। সবার লক্ষ্য একটাই একটু আল্লার কাছে মাফ চাওয়া। ইহকালের সব গুনাহ যেনো আর না বাড়ে’- বলেই কেমন আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলেন তিনি।

সুদূর মালয়শিয়া থেকে এসেছেন আব্দুর রাহীম। ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় ইংরেজিতে তিনি বলেন, ‘এখানেই সব শান্তি। দুনিয়ার সব মুসলমানদের এককাতারে মিল হতে হবে। আল্লার রাস্তায় সবাইকে আহ্বান করতে হবে। দুই দিনের গর্ব বেশি দিন টিকে না। ’

ইজতেমা ঘুরে দেখা যায়, ১৮টি প্রবেশদ্বার দিয়ে লোকজন ময়দানে আসছেন। ধর্মীয় এ মহাসমাবেশের আয়োজক তাবলীগ জামাত ইতোমধ্যে নিয়েছে সেবামূলক ব্যাপক প্রস্তুতি। এ ছাড়া  ডেসকো, তিতাশ, ওয়াসাসহ সরকারের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো  মুসল্লিদের নিজ উদ্যোগে নানা সেবা দিচ্ছে। রয়েছে ১০০ শয্যার অস্থায়ী হাসপাতাল, ৪০টি মেডিকেল টিম, ১২ ডি অ্যাম্বুলেন্স, শৌচাগার ও র‌্যাবের কড়া নিরাপত্তা।

ইজতেমায় তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত আয়োজক তাবলীগ জামাত কমিটির অন্যতম সংগঠক আব্দুল কুদ্দুস মুঠোফোনে বলেন, ‘হজের পর এটাই বিশ্বে মুসল্লিদের দ্বিতীয় ধর্মীয় মহাসমাবেশ। সমাবেশে কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত সবাই অংশ নিচ্ছেন। এতে দেশ বিদেশের খ্যাতনামা মাওলানারা বয়ান করবেন। শুক্রবার থেকে তিনদিনের এ বয়ান শুরু হয়েছে। শুরু হবে আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয়  পর্বের ইজতেমা। এতে দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রীর মনোজাতে অংশ গ্রহণ করার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।