ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কুড়িগ্রামে ৫দিনে ১২ জনের মৃত্যু: সূর্যের দেখা নেই ৪ দিন

ফজলে ইলাহী স্বপন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১১
কুড়িগ্রামে ৫দিনে ১২ জনের মৃত্যু: সূর্যের দেখা নেই ৪ দিন

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম জেলায় গত ৫ দিনের ব্যবধানে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে টানা ৪ দিনের শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার জনজীবন।

এছাড়া বোরো বীজতলা এবং আলু ক্ষেতে দেখা দিয়েছে নানা রোগ।

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালসহ ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিনিয়তই বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের ভিড়। কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. হাফিজুর রহমান জানান, তীব্র শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, শুক্রবার এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া আর হাড় কাঁপানো শীতের দাপটে হতদরিদ্র ছিন্নমুল মানুষের দুর্ভোগ উঠেছে চরমে। তীব্র শীতের সঙ্গে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিসহ কাছের হিমালয় থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে পশু-পাখি, গাছপালা আর মানুষ।

এ অবস্থায় শীতবস্ত্রের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার তিন শতাধিক চর এলাকার হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী। গায়ে কামড় বসানো শীত আর ঘন কুয়াশায় কাজে যেতে পারছে না দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো।

শুক্রবার জেলা শহরে জন সমাগম ছিল কম। ঘন কুয়াশায় দিনভর সূর্যের দেখা না মেলায় দিনের বেলাতেই হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। জরুরি কাজকর্ম ছাড়া ঘরের বার হচ্ছে না লোকজন।

এদিকে শুক্রবার কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে শীতজনিত রোগে মিরাজ নামের দেড় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত ৫ দিনের ব্যবধানে মারা গেছে উলিপুর উপজেলার উমানন্দ গ্রামের গোলাপের পুত্র মনি (৩), নওয়াবশ গ্রামের দুদু মিয়ার পুত্র বায়েজিদ (২) ও চান্দের খামার গ্রামের হরিমতি (৪৫)।

শীতজনিত রোগে ভুগে একই সময়ের ব্যবধানে মারা গেছেন রাজীবপুর উপজেলার বন্দবের ইউনিয়নের বড়বেড় গ্রামে আকবর আলী (৫৫) ও বালিয়ামারী নওয়াপাড়া গ্রামের শুকুর আলী (৬৫), উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চর বাগুয়া গ্রামের ইয়াকুব আলী (৭০), নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া ইউনিয়নের বাহুবল মণ্ডলের ভিটা গ্রামের সমশের আলী (৯৭, মাদারগঞ্জ এলাকার আরফান উদ্দিন (৬৫), নায়েকের হাট এলাকার ময়েজ উদ্দিন (৭০), চিলমারীর থানাহাট ইউনিয়নের কুষ্টারি গ্রামের শমশের আলী (৬০), রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের  রাণীগঞ্জ রাজার এলাকার মকবুল (৫৫) ।

এসব মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা।
 
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সাড়ে ৩ শতাধিক রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

স্থানীয় কৃষি দপ্তরের উপ-পরিচালক আকতারুজ্জামান জানান, কিছু কিছু এলাকায় বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরি এবং আলু েেত লেট ব্লাইট রোগের আক্রমণ শুরু হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রোগ প্রতিরোধে নানা ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত দু’দফায় ৭ হাজার ৪৫০টি কম্বল শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে আরও ১০ হাজার কম্বল চেয়ে  ফ্যাক্সবার্তা পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। তবে আজ (শুক্রবার) পর্যন্ত কোন নতুন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

এছাড়া স্থানীয়ভাবে ১ হাজার কম্বল ও ৬ শত পিস সোয়েটার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।