ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পুলিশের ব্যর্থতায় কঠোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সাঈদুর রহমান রিমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১১
পুলিশের ব্যর্থতায় কঠোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা: রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে আইন-শৃংখলার অবনতি রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলার অবনতি প্রতিরোধে পুলিশের গা ছাড়া ভাব ও তৎপরতাহীনতায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।


 
‘আইন-শৃংখলা ভাল আছে, নিয়ন্ত্রণে আছে,পুলিশ সাধ্যমতো চেষ্টা করছে’ এমন নানা কথায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী বারবার পুলিশের সাফাই গাইলেও একের পর এক হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি ও বিভিন্ন লোমহর্ষক ঘটনা সরকারের উচ্চ পর্যায়কে দারুণ উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।  
 
শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রকাশ্য-দিবালোকে গুলি করে আওয়ামীলীগ নেতা ফজলু হত্যাকাণ্ডের পর শেরেবাংলানগর থানার ওসি ও সংশ্লিষ্ট এসআই’র গাফিলতি চিহ্নিত হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে তাদের সাময়িক বহিষ্কার (সাসপেন্ড) করার নির্দেশ দেন, প্রত্যাহার করতে বলেন তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারকেও।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে নিজ বাসায় ফিরে রাতেই আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, র‌্যাব মহাপরিচালক, সিআইডি ও এসবি প্রধানদের নিয়ে জরুরি এক বৈঠকে বসেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অপরাধ প্রবণতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে তাদের নির্দেশ দেন বলে একটি সূত্র জানায়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরকারি বাসায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের আরও কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।

বৈঠক সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আইন-শৃংখলা রক্ষার ক্ষেত্রে সরকার সর্বাত্মক  সহায়তা করা সত্ত্বেও কেন পুলিশ প্রায় সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থতা দেখাচ্ছে? কোথাও কোনো রাজনৈতিক চাপ, তদবির বা কাউকে প্রভাবান্বিত করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। ’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতকিছুর পরও আইন-শৃংখলা রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশের কাক্সিত তৎপরতা ও সফলতা দেখা যাচ্ছে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে দায়িত্বে অবহেলাকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের তালিকা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থ কর্মকর্তাদের থানার দায়িত্বে রাখার কোনো কারণ নেই। কাউকে বিশেষ কোনো ‘খাতির’ করা হবে না।

এ সময় আইন-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কয়েকজন কর্মকর্তা কিছু ঘটনার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে মন্ত্রীকে জানান, আগারগাঁও মোড়ে পুলিশের পোশাকে চেকপোস্ট বসানো, বেশ কয়েকটি রোমহর্ষক খুন-খারাবি, অপেক্ষাকৃত স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত মন্দির ও এমপি’র বাসভবন টার্গেট করা হয়েছে। এসবের পেছনে সংঘবদ্ধ অন্য কোনো চক্র জড়িত আছে কি না তা গভীর গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, এসব কথায় মন্ত্রী আরও ুব্ধ হন। তিনি বলেন, জুজুবুড়ির ভয় দেখিয়ে নিজেদের গাফিলতি আড়াল করার সুযোগ আর নেই। আইন-শৃংখলা বাহিনীগুলোর সুযোগ-সুবিধা অনেক বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেই হারে তাদের কাছ থেকে জনগণ সেবা পাচ্ছে না। মন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে যে সফলতা পুলিশ বরাবরই দেখায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বা অন্য কোথাও তাদের এতটা তৎপর দেখা যায় না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে উপস্থিত কর্মকর্তাদের সেসব ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের বিন্দুমাত্র গাফিলতি পেলে শাস্তির ব্যবস্থা করে তা রোববারের মধ্যে স্বরাষ্টমন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য তিনি আইজিপিকে নির্দেশ দেন।

বাংলাদেশ সময় : ২২৫০ ঘন্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।