ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বেঁচে থাকতে চিকিৎসা মেলেনি, মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার!

আসিফ ইকবাল কাজল, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১১
বেঁচে থাকতে চিকিৎসা মেলেনি, মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার!

ঝিনাইদহ: চিকিৎসা খরচ চালাতে শেষ সম্বল ভিটে বাড়িটিও বিক্রি করতে হয়েছিল তাঁকে। দারিদ্রের নির্মম কষাঘাতে ক্ষত-বিক্ষত চরম অসহায় অবস্থায় প্রিয়তমা স্ত্রী হাসিনা বেগমও নিঃসন্তান এই মুক্তিযোদ্ধাকে ছেড়ে চলে যান।



রণাঙ্গণের সহযোদ্ধারা তার খোঁজখবর খুব একটা করেননি।

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের হামিরহাটি গ্রামের মৃত বিলাত আলী বিশ্বাসের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ছরোয়ার (৫৯) পাঘাতে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গু অবস্থায় ছিলেন টানা ২০ বছর।

তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়েছে শুক্রবার বাদ আসর। রাজকীয় এই সম্মান নেওয়ার জন্য অবশ্য তিনি কোনও মঞ্চে উপবেশন করেননি, শুয়েছিলেন খাটিয়ায়- শ্বেত-শুভ্র কাফনে শোভিত হয়ে।

বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন ছোট ভাই মিজানুর রহমানের বাড়িতে।

বাদ আসর হামিরহাটি গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এ সময় হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, হরিণাকুণ্ডু থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মহিউদ্দীন উপস্থিত ছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ারের ভাই কপিল বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সারোয়ার মৌলভীবাজারের কামালপুর, যশোর ও ময়মনসিংহের রণাঙ্গণে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘জীবিত অবস্থায় আমরা তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারিনি, এটা দুঃখজনক। ’

তবে তিনি মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সারোয়ারকে কোনও সাহায্য করেছেন কি না প্রশ্ন করলে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মহিউদ্দিন জানান, প্রায়ই তাঁকে তিনি অর্থ সাহায্য করতেন।

তিনি বলেন, ‘সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মুখে যেটা বলে, কাজে সেটা করে না।   মুক্তিযোদ্ধঅ সারোয়ার ঢাকার বঙ্গবন্ধু চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (পিজি) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কয়েকবার। কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে দৌড়াদৌড়ি করলে ২/৩হাজার করে টাকা দিত। কিন্তু ওই টাকা ঢাকায় যাওয়া আসার খরচেই শেষ হয়ে যেত।

কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সারোয়ার সরকারের কাছ থেকে যে মাসে সাড়ে ৭হাজার টাকা করে ভাতা পেতেন তা দিয়ে তো তার চিকিৎসা চলতে পারতো?

এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ছিল অনেক টাকা। এই টাকায় তা সম্ভব ছিল না। এছাড়া শোনা যায়, ওই টাকা তার ভাইয়েরা নিয়ে নিতেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হান্নানের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘কোনও সরকারই তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। ’

তবে এই ইউপি সদস্য তাকে কোনও সাহায্য করেছিলেন কি না প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভিজিডিপি (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) এবং ভিজিএফ’র (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) চাল দেওয়া হতো। এ ছাড়া সরকারি সব ধরনের সাহায্যও তাঁকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হতো।

তবে এত সব সাহায্য-সহযোগিতার  পরও মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সারোয়ারের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু কেন হল- এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এখন তিনি বেঁচে উঠলে এ প্রশ্নের উত্তর হয় তো জানা যেত।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।