ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দেয়াল পত্রিকায় সৃষ্টি চর্চা

আমিরুল মাসুদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১১
দেয়াল পত্রিকায় সৃষ্টি চর্চা

ঢাকা: আমি থাকি বিশ্বময়, জ্ঞানী গুনীর বক্ষময়... ..ভাঙ্গা আমার দেহখানি, তৃষ্ণা মেটায় কালো পানি... এভাবেই নিজের বুকের কথাগুলো দেয়াল পত্রিকার বুকে ফুটিয়ে তুলেছে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী মারিয়া খাতুন। ৪র্থ জাতীয় দেওয়াল পত্রিকা উৎসবে অংশগ্রহণ করতে এসেছে পাবনা ফজলুল হক পৌর উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী মারিয়া।



শুধু মারিয়াই নয় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এরকম চারশরও বেশি সৃষ্টিশীল শিশুকিশোররা দেয়াল পত্রিকার উপর তাদের নিজেস্ব সৃষ্টি কর্ম নিয়ে উপস্থিত হয়েছে বাংলাদেশ দেয়াল পত্রিকা পরিষদের আয়োজিত উৎসব ও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে।

বাহারি রংয়ের দেয়াল পত্রিকার গায়ে কবিতা, গল্প, ছড়া, প্রবন্ধ, ধাঁধা, আর কৌতুকের মাধ্যমে তারা ফুটিয়ে তুলেছে মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা সপ্ন, আনন্দ, দুঃখ, কষ্ট, চিন্তা আর চাওয়া পাওয়ার হিসাব নিকাশ।

দেশের বিভিন্ন জেলার ১০০ টিরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে বাংলা একাডেমীর চত্ত্বরে আয়োজিত এ দেয়াল পত্রিকা উৎসবটি চলবে জানুয়ারি মাসের  ১৪,১৫, ১৬ জানুয়ারি এ তিন দিন।
 
শুক্রবার রং তুলির উদ্যোগে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সহযোগিতায় আয়োজিত এ উৎসবের উদ্ভোধন করেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও শিশু একাডেমির চেয়ারপারসন মুস্তফা মনোয়ার।

এসময় তিনি উপস্থিত শিশু কিশোরদের উদ্দেশ্যে বলেন ‘স্কুল মানেই লেখাপড়া শেখা, আর লেখাপড়া মানেই নিজস্ব মত তৈরি করা। আর মত প্রকাশ করার জন্য যে মাধ্যম দরকার তার অন্যতম একটি দেয়াল পত্রিকা। ’

তিনি এ মত প্রকাশের সময় বিষয়বস্তু ও প্রকাশভঙ্গির সমন্বয় রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন ‘মত প্রকাশটি যেন হয় মানুষের জন্য, মানুষকে ভালবাসার জন্য। ’

এসময় তিনি দেয়াল পত্রিকাকে শিশু কিশোরদের জন্য সাহিত্য ও মননের চর্চার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করে এ ধরনের একটি উৎসব আয়োজন করার জন্য বাংলাদেশ দেওয়াল পত্রিকা পরিষদকে ধন্যবাদ জানান।

এসময় উপস্থিত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দেয়াল পত্রিকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন ‘দেয়াল আমাদের কাছে যেমন একটি আশ্রয়স্থল ঠিক একইভাবে একটি বাধাও। ’

তিনি এ বাধার স্বরূপ বিশ্লেষণ করে বলেন ‘স্কুল কলেজের অনেক নিয়মকানুন আমাদের ইচ্ছার বিকাশ হতে দেয় না। এসব নিষেধাজ্ঞা আর শাসন আমাদের সৃষ্টিশীলতাকে ধংস করে ফেলে। আর এ ধংসাত্মক বাধার দেওয়ালকে ভাঙ্গার মাধ্যমই হচ্ছে দেয়াল পাত্রিকা।

আমাদের মধ্যকার বিচ্ছিন্নতা দূর করে একত্রিত হওয়া, সৃষ্টিকর্মের বিকাশ এবং আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য দেয়াল পত্রিকা একটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম সারা বাংলাদেশে দেয়াল পত্রিকা আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানান।

এসময় উৎসবটির আয়োজক দেয়াল পত্রিকা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার আকন্দ বাংলানিউজকে জানান, যান্ত্রিক জীবনে আমাদের শিশু কিশোরদের সৃষ্টিশীলতার চর্চা এবং মেধা ও মননের বিকাশের উদ্দেশ্যেই এ দেওয়াল পত্রিকা উৎসবের  আয়োজন।

তিনি বলেন ‘দেয়াল পত্রিকা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর সংস্কৃতি ও পড়ালেখার একটি অংশ হলেও এর চর্চা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। ’

আর এ উৎসব সারা বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ ও চর্চার ক্ষেতে একটু হলেও উৎসাহ সৃষ্টি করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন ।

৪র্থ জাতীয় দেওয়াল পত্রিকা উৎসব ও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, মাত্র ৩০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে ২০০৮ সালে প্রথম এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এরইর ধারাবাহিকতায় এ উৎসবের আয়োজন।

আর এতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে আগামীতে বাংলা একাডেমী চত্বরের পরিবর্তে আরও বড়ও কোন জায়গার পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানান তিনি।

তবে এ উৎসবকে সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলায় জেলায় আয়োজন করার ইচ্ছা তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনায় রয়েছে বলেও জানান তিনি ।

তবে এর জন্য প্রয়োজন সকলের ইচ্ছা, সরকারের সহযোগিতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিবাচক মনোভাব, এবং সর্বোপরি একটি অনূকূল পরিবেশ।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৪, জানুয়ারি ১৪ , ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।