গাজীপুর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যখনই দায়িত্ব পাই, শাসক নয়, জনগণের সেবক হিসেবেই কাজ করি। এবারও মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরের টেপরিবাড়ি এলাকায় শুক্রবার সকাল ১১টায় শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে দেশে স্বর্ণযুগের সূচনা হয়েছিল। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্পসহ সর্বক্ষেত্রে আমরা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলাম। ওই সময় দেশে খাদ্যঘাটতি ছিল না। মুদ্রাস্ফীতি ১ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছিল। কিন্তু এবার আমাদের সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা আর জঞ্জাল দূর করে করে এগুতে হচ্ছে। তবে এবারও আমরা সরকার পরিচালনায় সফল হবো।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অংশীদারিত্বে (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্পের আওতায়) কাশিমপুরের সারাব মৌজায় ৬ দশমিক ১৩ একর জমিতে ওই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হচ্ছে। এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা। এর শতকরা ৭৯ ভাগ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং শতকরা ২১ভাগ ব্যয় নির্বাহ করবে ওই মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। ২০১২ সালের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত মেয়াদে আমরা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ১৮ হাজার কমিউনিটি কিনিক চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলাম। বিএনপি-জামাত জোট সরকার এসে কিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। দেশকে খাদ্যঘাটতির দেশে পরিণত করে। ৫ বছরে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তারা উৎপাদন করেনি। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। আমরা এরই মধ্যে ১১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ করেছি। ২ হাজার ৯৪১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর ১০ হাজার কমিউনিটি কিনিক চালু করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া সাড়ে ২৬ হাজার ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারি এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের ৬টি বড় হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ খোলা হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে পাঁচটি জেলায় প্রতিবন্ধীসেবা ও সাহায্যকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিবন্ধী ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন ও প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা মাতৃত্বকালীন ছুটি চার মাস থেকে ছয় মাসে উন্নীত করেছি। দেশের সকল জেলায় শিশুবিকাশ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ৬টি শিশু বিকাশকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ধানমন্ডির ৩২নং-এর বাড়ি কোনো সাধারণ বাড়ি নয়। বাঙ্গালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে এ বাড়িটি ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। সেজন্য আমরা দুই বোন শেখ রেহানা এবং আমি ১৯৯৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠন করে ওই বাড়িটি ট্রাস্টের হাতে তুলে দেই। বাড়িটিকে একটি জাতীয় ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে সংরক্ষণ, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর গবেষণা, শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সার্বিক কল্যাণে এ ট্রাস্ট কাজ করে যাচ্ছে।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা।
এছাড়া অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন্নেসা খানম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এইচ টি ইমাম, মহিউদ্দিন খান আলমগীর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্যসচিব শেখ হাফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১১