ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

স্বাধীন উপার্জনের প্রশিক্ষণ পাচ্ছে গৃহকর্মী মেয়েশিশুরা

আমিরুল মাসুদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১১
স্বাধীন উপার্জনের প্রশিক্ষণ পাচ্ছে গৃহকর্মী মেয়েশিশুরা

ঢাকা: ‘আমার একটা টেইলারের দোকান থাকব। আমি সেখানে কাপড় সেলাই করে নিজেই ট্যাকা রুজি করব।



এভাবেই নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা বাংলানিউজকে জানালো আছিয়া (১৪)।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে মিরপুর ১ নম্বর পাইকপাড়ায় কলোনি মাঠে সুবিধাবঞ্চিত মেয়ে শিশু গৃহকর্মীদের তৈরি সামগ্রী প্রদর্শনীতে আছিয়াও এসেছে অন্যদের মতো।

সে আজিমপুরের এক বাসায় গত তিন বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করছে। এদিন বেসরকারি সংস্থা ফুলকি এ মেলার আয়োজন করায় আছিয়াও এসেছে নিজ হাতে তৈরি খাবার নিয়ে। মেলায় একটি খাবারের স্টল দিয়েছে আছিয়া।

আছিয়া বাংলানিউজকে জানান, চার বোন এক ভাইয়ের সংসারে অনেক অভাব থাকায় তিন বছর আগে নীলফামারি থেকে কাজের জন্য ঢাকায় আসে। তার কৃষক বাবা আব্দুল হামিদই তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এরপর আজিমপুর শাকিরা বেগমের বাসায় কাজ পায় সে।

কিন্তু আছিয়াকে প্রায়ই কাজে ভুল ত্রুটির জন্য গৃহকর্তার গালি শুনতে হতো। তবে কিছুদিন পরই আছিয়াকে তার গৃহকর্তা থাকে ‘ফুলকি’র আজিম পুর কেন্দ্রে ভর্তি করে দেন।

এখানে আছিয়াকে প্রথমেই ঘরের টুকিটাকি কাজ যেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, ঘর সাজানোর পাশাপাশি  টেলিভিশন, ফ্রিজ, ওভেন ইত্যাদির ব্যবহার শেখানো হয়।

পরে হাতের লেখা ও পড়তে পারা, সেলাই, পার্লারের কাজ, খাবার তৈরি, হাতের কাজসহ বিভিন্ন নতুন নতুন সামগ্রি তৈরির কাজ শেখানো হয়। এজন্য প্রতিদিন তাকে ১ থেকে দেড় ঘণ্টা সময় দিতে হয়।

ফুলকি’র এ প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়েই আছিয়া এখন স্বপ্ন দেখছে একজন সফল দর্জি হওয়ার।

শুধু আছিয়াই নয়, এ রকম স্বপ্নের কথা জানালো লিপি, সূচিতা, নাজমাসহ আরও অনেকে। এদের সবাইকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথ তৈরি করে দিচ্ছে ফুলকি।

মেলার আয়োজক এবং ফুলকি’র সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাহানা বেগম বাংলানিউজকে জানান,  গৃহকর্মী মেয়ে শিশুদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের ওপর সহিংসতা বন্ধে ২০০৬ সালে একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প হাতে নেয় ফুলকি। এর অর্থায়ন করছে জাপানি এনজিও শাপলা নীড়।

শাহানা বলেন, ‘এজন্য আমরা প্রথমে ২২ মাসের একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেই। পরে এর সফলতার ওপর ভিত্তি করে মূল প্রকল্পের কাজ শুরু করি। ’

বর্তমানে রাজধানীর কড়াইল বস্তি, পাইকপাড়া সরকারি কলোনি, রূপনগর বেসরকারি আবাসিক এলাকা ও আজিমপুরে চারটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ৩০০ গৃহকর্মী মেয়ে শিশুকে নিয়ে কাজ করছে ফুলকি। এদের বয়স ৮ থেকে ১৮ বছর।

তবে গৃহকর্তাদের অসহযোগিতা এ প্রকল্পের প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করে বলে জানান শাহানা।

তিনি বলেন, সরকারের সহযোগিতা ও পর্যাপ্ত অর্থায়ন সম্ভব হলে শিগগিরই সারা বাংলাদেশে এ কার্যক্রম চালু করা যাবে।

এ দিকে, মেলায় পাঁচ রকমের পিঠাসহ ২০ রকমের সামগ্রী নিয়ে ১০ টি স্টলে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

ভবিষ্যতে এসব সামগ্রী তৈরি ও বিক্রি করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার লক্ষ্যেই এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান শাহানা বেগম।  

ফুলকি’র এ ধরনের কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে গৃহকর্ত্রী আফরোজা আক্তার বলেন,‘এ উদ্যোগ শুধুমাত্র গৃহকর্মীদেরই স্বাধীন উপার্জনের সুযোগ করে দিবে না, পাশপাশি দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০২২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।