ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘হি ইজ ও্যনলি দ্য সার্ভেন্ট অব দ্য গভর্নমেন্ট’

মাদারীপুরের পুলিশ সুপারকে সারাদিন আদালতে দাঁড় করিয়ে রাখলেন হাইকোর্ট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১১
মাদারীপুরের পুলিশ সুপারকে সারাদিন আদালতে দাঁড় করিয়ে রাখলেন হাইকোর্ট

ঢাকা: ‘সে এমন কিছু হয়ে যায়নি। দেশটা তার বাবার সম্পত্তিও না... আর সে কোনো হরিদাস পালও না।

হি ইজ ও্যনলি দ্য সার্ভেন্ট অব দ্য গভর্নমেন্ট। ’

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সরদার তমিজ উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে উচ্চ আদালতের এজলাসে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। তার ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের বেঞ্চে একটি নারী নির্যাতনের মামলায় হাজির হয়েছিলেন সরদার তমিজ উদ্দিন।

মাদারীপুরে শিলা মল্লিক নামের এক গৃহবধূকে শারীরিক নির্যাতন করার মামলা ছিল এটি।

তমিজ উদ্দিন প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, হাইকোর্টের বিচারপতি শামসুল হুদা সম্প্রতি মাদারীপুর গেলে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পুলিশ সুপারের কাছে তার জন্য প্রোটোকল চাইলে পুলিশ সুপার সরদার তমিজ উদ্দিন তাকে বলেন, ‘তুমি কেন প্রোটোকলের কথা বলছো, বিচারপতি নিজেই কেনো তা  চাইছেন না। আর বিচারপতিদের আবার প্রোটোকল কিসের?’।

আর এ কারণেই তমিজ উদ্দিনকে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী এ ভৎর্সনা করেন।

বিচারপতি আরও বলেন, ‘ভাগ্যিস সেখানে আমি ছিলাম না, আমি থাকলেতো তার ইউনিফর্ম খুলে তাকে জেলে পাঠাতাম। ’

তিনি বলেন, একজন পুলিশ কর্মকর্তা যেখানে হাইকোর্টের একজন বিচারপতির উদ্দেশ্যে এ সব কথা বলতে পারে, এমন অবজ্ঞা করতে পারে সেখানে একজন নারীতো তার কাছে নস্যি!’

মাদারীপুরের আড়–য়াকান্দির বাসিন্দা শীলা মল্লিককে নির্যাতন করার অভিযোগে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার ও জেলার রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান আদালতে হাজির হলে তাদের তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করেন আদালত।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল প্রায় বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত তাদের আদালতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, ‘আইন সচিবকে আগামী রোববার হাজির হতে হবে। আশা করি, আইন সচিব এমন কিছু করবেন না, যাতে আমরা বাধ্য হই তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে। ’
 
উল্লেখ্য, গত ৯ জানুয়ারি মাদারীপুর জেলার পুলিশ সুপার, রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

শিলা মল্লিক নামের এক গৃহবধূকে শারীরিক নির্যাতন করেছেন পুলিশ সুপার এমন প্রতিবেদন গত ১৮ অক্টোবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে ৯ জানুয়ারি জিয়াউল হক জিয়া নামের এক আইনজীবী বিষয়টি আদালতের গোচরে আনেন। সেদিনই আদালত ওই পুলিশ সুপার এবং রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে না জানতে চেয়ে ৩ সপ্তাহের রুল জারি করেন।
 
আদালতে নির্যাতিত শিলা মল্লিক এবং তার স্বামী ভূপেন্দ্র নাথ মল্লিকও উপস্থিত ছিলেন।
 
পুলিশ সুপারের আইনজীবী সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতীন খসরুকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব যেমন মানুষের অধিকার রক্ষা করা, তেমনি একজন সংসদ সদস্য হিসেবে আপনার উপরেও সে দায়িত্ব বর্তায়। ’

আব্দুল মতীন খসরু পুলিশ সুপারের হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে বিচারক এ কথা বলেন।

আব্দুল মতীন খসরু বলেন, ‘কাল যখন সব পত্রিকায় সংবাদ হবে মাদারীপুরের পুলিশ সুপারকে সারাদিন আদালত দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে, এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কী হতে পারে। আমি তার হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ’
 
এ সময় আদালত শিলা মল্লিক এবং তার স্বামী ভূপেন্দ্র নাথ মল্লিকের কাছে ঘটনা শোনেন।

আদালত শুনানি শেষে আগামি ১৩ ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে পুলিশ সুপারকে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে স্বত্বন্ত্র একটি বিচারিক কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন। ওই কমিটি ঘটনাটি তদন্ত করে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে।
 
আদেশ ঘোষণার পর শিলা মল্লিক কান্নাজড়িত কন্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমারতো এখন এলাকায় যাইতেই ডর লাগতাছে। এসপিতো এখন এলাকার মানুষরে আমার বিরুদ্ধে কতা কইতে কইবো। আর হের ডরে সবাই তাই করবো। আমি এই সব এহন ক্যামনে সামাল দেবো। ’
 
উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট শিলা মল্লিকের স্বামী ভূপেন্দ্র নাথ মল্লিককে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তার ভাই, ভগ্নিপতিরা মারধোর করেন। ১৮ আগস্ট শিলা মল্লিক এ বিষয়ে মাদারীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করেন। মামলা তুলে নেয়ার জন্য ভয় দেখালে টাকা খেয়ে গত ৫ অক্টোবর পুলিশ সুপার শিলা মল্লিককে বেদম প্রহার করেন।

বাংলাদেশ সময় ২০৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।