ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কর্নেল তাহের হত্যা মামলায় শওকত আলীকে হাইকোর্টে তলব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১১

ঢাকা: কর্নেল তাহেরের গোপন বিচারের সময় ঢাকার তৎকালীন  জেলাপ্রশাসক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম এম শওকত আলীকে আগামী ১৮ জানুয়ারি সকাল ১০ টা ৩০ মিনিটে হাইকোর্টে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী এবং বিচারপতি শেখ মো জাকির হোসেনের সম্বন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।



অপরদিকে আদালতের নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হন কর্নেল তাহেরের গোপন বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের ম্যজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী।

তিনি আদালতকে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘আমাকে যখন ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন আমি সেখানে যেতে চাইনি। তখন এম এম শওকত আলী আমাকে বলেছিলেন, তুমি যাও, এখানে যেমন রায় লিখতে হয়, তেমনি সেখানেও রায়ই লিখতে হবে। ’

মোহাম্মদ আলীর বক্তব্যের এক পর্যায়ে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী তাকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনার সঙ্গে কী জিয়াউর রহমানের কোনো সম্পর্ক অথবা যোগাযোগ ছিল?’

জবাবে তিনি বলেন, তার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের কোনো যোগাযোগ বা সর্ম্পক ছিল না।
 
মোহাম্মদ আলী তার বক্তব্যে আরও বলেন, ১৯৭৬ সালের ১৫ জুন সামরিক আদালতে এই গোপন বিচার শুরু হয়।

তিনি বলেন, ‘আমি যতোদূর শুনেছি, ট্রাইব্যুনালের বাকী ৪ জনই মারা গিয়েছেন। এটা ছিল সংক্ষিপ্ত বিচার। আর বিচারে আমি মৌখিকভাবে দ্বিমত পোষণ করলেও লিখিতভাবে সবার সঙ্গে একমত হয়েছিলাম। ’

মোহাম্মদ আলী দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে শুরু করে ১ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বক্তব্য রাখেন। বিরতির পর দুপুর ২ টা ১৫ মিনিটে আবার বক্তব্যে মোহাম্মদ আলী দাবি করেন তিনি পদত্যাগপত্র লিখে রাখলেও তা পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

ট্রাইব্যুনালে ৫ জন সদস্য থাকলেও চেয়ারম্যানই সবকিছু করতেন উল্লেখ করে মোহাম্মদ আলী আরও বলেন,  ‘ট্রাইব্যুনালে আমাদের ভ’মিকা ছিলো অত্যন্ত গৌণ। ’

আদালত শেষ হলে ওই গোপন বিচারের সাজাপ্রাপ্ত হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের জানান, আগামী সোমবার এ ঘটনায় পৃথক একটি রিট দাযের করা হবে।

সাজাপ্রাপ্ত অন্যরাও আদালতে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।     
 
এর আগে বুধবার হাইকোর্ট কর্র্নেল তাহেরের গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের আদেশ দেন। আদেশে ১৯৭৫ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত সেনাবাহিনীর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যেসব সেনা কর্মকর্তা ছিলেন তাদের নামের তালিকা আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
একই সঙ্গে আদালত কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল সেই ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য উইং কমান্ডার আব্দুর রশীদ এবং বিমান বাহিনীর তৎকালীন অ্যাক্টিং কমান্ডার সিদ্দীক আহমেদ,  দুই ম্যজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী ও হাসান মোরশেদের অবস্থান জানানোর জন্য সংস্থাপন সচিব ও প্রতিরক্ষা সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ১৯৭৬ সালের ৪ জুন মোহাম্মদপুর থানায় কর্নেল তাহেরের বিরুদ্ধে যে এজাহার হয়েছিল অনুসন্ধান করে সেই এজাহারের কপি জমা দিতেও আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।

কর্নেল তাহেরের গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তার ভাই ড. এম আনোয়ার হোসেন, তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের ও সামরিক আদালতের বিচারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আরেক ভাই প্রয়াত ফাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ গত আগস্টে রিট আবেদন দায়ের করেছিলেন।
 
এ নিয়ে ২৩ আগস্ট  হাইকোর্ট রুল জারি করে। রুলে তাহেরের গোপন বিচারের জন্য ১৯৭৬ সালের ১৬ নম্বর সামরিক ফরমানের  আওতায় আদালত গঠন, এর আওতায় গোপন বিচার এবং তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময় ১৫০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।