ঢাকা: রওশন আলী। বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপায়।
কৃষিকাজ করে যে আয় হতো তাতে সংসার চলতো না। তাই বিকল্প আয়ের পথ খুঁজতে থাকেন। লোকজনের কাছে জানতে পারেন, কোরিয়ায় লোক নিয়োগের কথা। কিন্তু ভাষা শিখতে হবে।
ভর্তি হন একটি কোচিং সেন্টারে। প্রায় বছর খানেক পর ২০০৮ সালের অক্টোবরে পরীক্ষা দেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। স্বপ্ন দেখতে থাকেন। সেই থেকে সংসার ছেড়ে দৌড়াচ্ছেন।
সবশেষ গত নম্বেভরে বোয়েসেল থেকে বলা হয়, কলিং চলে এসেছে। কিন্তু পাসপোর্টের মেয়াদ কম। তাই বলা হয় ৭ দিনের মধ্যে নতুন পাসপোর্ট জমা দিতে। নানা ধকল পেরিয়ে পাসপোর্ট করে জমাও দেন সময় মতো।
কিন্তু তার কয়েক দিন পরই জানানো হয় ৪৯৩ জনের ভিসা হবে না। সে তালিকায় তার নিজের নামও রয়েছে। তিন বছরের স্বপ্ন যেন নিমিষেই ভেঙ্গে যায়।
এ কথা বলতে বলতে তার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। কথাও বলতে পারছিলেন না।
শুধু বলেন, আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। বাবা-মাকে কি বলে সান্তনা দিবো। আবারও কেঁদে ফেলে।
রওশনের মতো ঢাকার সুমনের চোখের পানিও দেখার যেন কেউ নেই।
সুমন বলছিলেন, ছোট একটি মুদি দোকান ছিলো তার। বাবা নেই। সংসার মোটামুটি ভালোই চলছিল। স্বপ্ন দেখেন কোরিয়া যাওয়ার। ভাষা শিখাসহ নানা ধাপ পেরিয়ে প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে তিনি জানতে পারেন তারও পাসপোর্টের মেয়াদ এক বছরের কম। তাই নতুন পাসপোর্ট জমা দিতে বলা হয়।
এদিকে ব্যবসাও বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের কারণে। হাতে টাকা পয়সা নেই। কিন্তু যেমন করে হোক পাসপোর্ট তো করতেই হবে। মা বললেন, তার কানের দুল বিক্রি করে পাসপোর্ট করতে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধার দেনাও করে করেন। সুমনের পাসপোর্ট হয়েছে। কিন্তু তার কোরিয়া যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
রওশন ও সুমনের মতো ৪৯৩ তরুণ আজ একই অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। তাদের স্বপ্ন যেন ভেঙ্গে যেতে বসেছে। তাদের চোখে-মুখে যেন হতাশার ছাপ। কি হবে জীবনে। কি করে চলবে বাকি জীবনটা। মা-বাবা কেই বা কিভাবে সান্তনা দেবেন।
সবাই মিলে সোমবার মুক্তাঙ্গনে শুরু করেছেন ৭২ ঘণ্টার অনশন কর্মসূচী। বেরিয়ে এসেছেন বাড়ির বাইরে। দাবি আদায়ের আগে ঘরে ফিরবেন না। ঘরে ফিরে গিয়ে কি বলবেন।
তারা বলছে, শুধু মাত্র বোয়েসেলের ভুলের কারণেই তাদের এই পরিণতি। নিশ্চয়ই তারা কোন ভুল করেছে। তা না হলে এমনটি হওয়ার তো কোনো কারণ নেই। তাই কাফনের কাপড় বেঁধে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১১