ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করুন।
সোমবার বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিরোধী দলীয় নেতার বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ ৯৬-তে ক্ষমতায় এসে আমরা যে চালের দাম ১০ টাকায় রেখে গিয়েছিলাম ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে আপনারা সেটা ২৫/২৬ টাকায় নিয়ে গেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আরও বেড়ে ৪০-৪৫ টাকায় দাঁড়ায়। ’
এ সময় চার দলীয় জোট ক্ষমতায় থাকলে চালের দাম ১শ’ টাকা হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৯৬-তে আমরা ক্ষমতায় এসে তাদের রেখে যাওয়া ১৮ টাকা কেজি চাল ১০ টাকায় নামিয়ে আনি। তেলের দাম ৫৬ টাকা থেকে নামিয়ে ২৮ টাকায় নিয়ে আসি। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উনার (খালেদা জিয়া) কাছে জবাব চাই, উনি এতো কিছু করেছেন দাবি করেন তাহলে ১০ টাকা থেকে চালের দাম কমিয়ে ৫ টাকায় আনতে পারলেন না কেন? আমরা যে কমিয়েছিলাম আপনারা সেটা কমাতে পারলেন না কেন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে খাদ্য দ্রব্যের দাম সবচেয়ে বেশি। বিশ্ব খাদ্য সংস্থাও দাম বৃদ্ধির কথা বলেছে। সেটা তো উনার চোখে পড়া উচিত ছিল।
বিশ্বমন্দার মধ্যেও আমরা চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। দাম কমিয়ে ১৮ টাকায় নিয়ে আসি। কিন্তু কৃষকের কথা চিন্তা করে কিছুটা বাড়াতে হয়েছে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বেতন-ভাতা বাড়িয়েছি, এত কেউ বাড়ায়নি। ২ বছরে আমরা ২ লাখ মানুষের চাকরি দিয়েছি। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের কথা চিন্তা করে ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। আর যাতে না বাড়ে সে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আপনারা বাড়ান আর আমরা কমাই। বিএনপি-জামায়াত ৪ দলীয় জোটের রেকর্ড নেই কমানোর। আজ ৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় থাকলে ১শ’ টাকা কেজি চাল খেতে হতো।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘উনি (খালেদা) বলেছেন আমাদের সময় কোনও উন্নতি হয়নি। আসলে আমরা উনার মতো উন্নতি করতে পারিনি। উনি যে কী উন্নতি করেছিলেন তা উনার বেডরুম, বাথরুমের দামি জিনিসপত্র দেখেই বোঝা যায়। উনি কালো টাকা সাদা করেছেন। এ কালো টাকা কোথা থেকে পেলেন? যারা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) এর ট্যাক্স নিয়েছেন তারা কি হিসাব নিয়েছিলেন?
তিনি বলেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি, যে জঙ্গিবাদ তারই (বিরোধী দলীয় নেতা) হাতে সৃষ্টি। ’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তরা থানায় মামলা দিতে পারতো না। থানা মামলা নিতো না। আমরা যেখানে যে ঘটনা ঘটেছে সঙ্গে সঙ্গে ব্যব্স্থা নিয়েছি। মানুষ যাতে বিচার পায়, ্আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দলের নেতা সংসদকে কার্যকর করতে চায় বলেছেন। সংসদের ১৭৪ কার্য দিবসে উনার দল ৪৪ দিন সংসদে ছিল। আর উনি ছিলেন মাত্র ৫ দিন। মানুষকে এত বোকা পেয়েছেন!
তিনি আরও বলেন, সংসদে এক দিন তিনি (খালেদা) পৌনে ২ দুই ঘণ্টা বক্তব্য দিয়েছেন। স্পিাকার তাকে বক্তব্য থামতে বলেননি, মাইকও বন্ধ করেননি। অথচ আমি যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখন উনার ইশারায় স্পিকার মাইক বন্ধ করে দিতেন, তার দলের এমপিরা মনে হতো আমাদের দলের এমপিদের আক্রমণ করে বসবে।
দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যেটুকু কমিয়ে গিয়েছিলাম এবার ক্ষমতায় এসে তাও পানি। আমরা ঘাটতি পূরণে পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করছি আর তিনি বলেছেন এতে নাকি লুটপাট হবে। আসলে যারা লুটপাট করে তারা সব জায়গায়ই লুটপাট দেখে। ’
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উনার মতো উন্নতি করিনি। উনারা চিন্তা করেছেন কীভাবে কালো টাকা কামাবেন, ভোগ বিলাসে জীবন যাপন করবেন। আমরা জনগণের উন্নতি করেছি। আমরা নিজেদের উন্নতি করতে আসিনি। জনগণের উন্নতিই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পার হয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। কিন্তু তারপরও শক্ত হাতে হাল ধরে রেখেছি। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে ুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়বো এটাই আজকের দিনে শপথ।
বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি একে আজাদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১১