ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মৃত পুলিশ সদস্যদের ‘স্বীকৃতি স্মারক প্রদান’ অনুষ্ঠানে কান্না, বিলাপ আর আহাজারি

মহিবুব জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১১
মৃত পুলিশ সদস্যদের ‘স্বীকৃতি স্মারক প্রদান’ অনুষ্ঠানে কান্না, বিলাপ আর আহাজারি

ঢাকা: মৃত পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল জলিলের স্ত্রী ছোমেদা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে আকুতি জানান, ‘আমি সরকারের কাছে টাকা-পয়সা কিচ্ছু চাই না, আমার ছেলেডারে একটা চাকরি দিলেই বেঁইচে যাতাম। ছেলেটা ইন্টারমিডিয়েট পড়িছে, মেয়েটা ম্যাট্রিক পর্যন্ত-তাগোর আর পড়াশোনা চালানোর ক্ষ্যামতা আমার নাই।



দায়িত্ব পালনকালে নিহত অপর একজন পুলিশ কনস্টেবল নুর মোহাম্মদের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, ‘মেয়েটা ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। জামাইর জন্য একটা চাকরির নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে মেয়েকে ভাল ঘরে বিয়ে দিতে পারতাম। ’

নিহত পুলিশ সার্জেন্ট মনিরুজ্জামানের ষাটোর্ধ্ব বয়সী পিতা আব্দুল মালেকের কান্নায় উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের চোখেও পানি চলে আসে। চোখের পানি মুছতে মুছতেই আব্দুল মালেক জানান, মাত্র আড়াই বছর চাকরির পর কর্তব্য পালনরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সার্জেন্ট মনিরুজ্জামান। একমাত্র ছেলে মনিরুজ্জামান, তিনি ছিলেন পরিবারেরও একমাত্র উপার্জনক্ষম।

তার অনুপস্থিতিতে অনার্স পড়–য়া মেয়েকে নিয়ে বড়ই বিপাকে আছেন আব্দুল মালেক। নিজেদের দু’মুঠো ভাত জোটানোই যেখানে দুঃসাধ্য, সেখানে মেয়েকে পড়ানো, বিয়ে দেওয়ার ঝামেলা কিভাবে পোহাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। তাই বার বার আব্দুল মালেকের কন্ঠে বিনীত আকুতি ঝরে.. যদি মেয়েটারে একটা চাকরি দিতো কেউ... ’
 
কর্তব্যরত অবস্থায় ২০১০ সালে নিহত পুলিশ সদস্যদের গৌরবোজ্জল অবদানের জন্য তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরকে ‘স্বীকৃতি স্মারক প্রদান’ অনুষ্ঠানটি এমন আকুতি, আহাজারি আর বিলাপ কান্নায় ভারি হয়ে উঠে। পুলিশ সপ্তাহ-২০১১ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনের টেলিকম ভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

নিহত পুলিশ পরিবারের সদস্যদের আকুতি ছিল একই ধরনের। এসব কষ্ট-কান্না তারা কাকে জানাবেন, কে তাদের পাশে দাঁড়াবে- এর কিছুই জানা ছিল না তাদের। তাই অনুষ্ঠানের পরও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর পাওয়ার জন্য তাদেরকে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়।

পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার নিহতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে স্মারক ও উপহার তুলে দেয়া শেষে তার বক্তব্যে বলেন,‘এই ধরনের অনুষ্ঠানে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলা আমার হয়ে উঠে না। এখানে যে সমস্ত পরিবারের লোকজন এসেছেন তারা তাদের নিজের লোকদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন জনগনের সেবায়। ’

তিনি এ নিহত পুলিশ সদস্যদের ‘বীর’ আখ্যা দেন এবং তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন,‘আপনাদের ক্ষতির তুলনায় এই উপহার কিছুই নয়। আপনারা যাদের হারিয়েছেন তারা যেমন পুলিশ পরিবারের সদস্য ছিল, তেমনি আজীবন মর্যাদার সাথেই থাকবে। ’

তিনি আরও বলেন,‘আপনাদের সমস্যার কথা আমাদেরকে জানাবেন। আমরা আপনাদের পাশে থাকবো। ’

এই সব পরিবারের সদস্যদের যে কোনো প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানোর জন্য পুলিশ সুপার, ডিআইজিসহ সকল কর্মকর্তাদের আহবান জানান আইজিপি।

বাংলাদেশ সময় : ২২১০ ঘন্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ