ঢাকা: হাসি-আনন্দ আর বেদনার সম্মিলনে পার হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০ সাল। ঘটেছে অনেক উত্থান-পতন।
অস্থিতিশীল ছাত্ররাজনীতি:
বছরের শুরুতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির অঙ্গন। প্রধান বিরোধী দল ছাত্রদলের নবনির্বাচিত কমিটি ক্যাম্পাসে আসলে জানুয়ারির ১৮ তারিখ ছাত্রদলের বিদ্রোহী গ্রুপের হামলায় ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দীন টুকুসহ ২৫ জন আহত হয়।
দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস শান্ত থাকার পর অস্ত্রের গর্জনে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা এক ভীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।
ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেক কলঙ্কজনক ঘটনার সৃষ্টি হয়। এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন ইসলামের ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু বকর। এ ঘটনায় হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফারুক হোসেনসহ ৭ কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি হল শাখার কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে।
মে মাসে মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয় ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ওবায়দুল হক নাসিরসহ ১৫ জন ছাত্রদল কর্মী।
এ ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতি না থাকলেও ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বের জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগের ২৫ কর্মীকে বহিস্কার করে ছাত্রলীগ।
ছাত্র আন্দোলন:
আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সাল আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স চালু করার কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
সাধারণ ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফেডারেশন এসময় আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে। ছাত্রদের দুর্বার আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শেষ পর্যন্ত সান্ধ্য কোর্স খোলার সিদ্ধান্ত বাতিল করে।
প্রযুক্তির উত্তরণ:
সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশেষ করে সম্মান শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষায় অনলাইনের ব্যবহার সারা দেশের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদেরকে বাড়তি সহায়তা দিয়েছে।
অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন এবং ফরম জমাদানে ভর্তিচ্ছুদের আর্থিক সাশ্রয় এবং অযথা হয়রানি থেকে শিক্ষার্থীরা রেহাই পেয়েছে।
বছরের শেষের দিকে ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ওয়াইফাই সুবিধা দেওয়ায় প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে।
একটি অকাল মৃত্যু:
২০১০ এর ২৬ অক্টোবর বিমানবন্দর এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র বেলাল হোসেন।
বেলালের মৃত্যুতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শোকে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। ঘাতক বাস চালকের শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আন্দোলনমুখর হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১০