ঢাকা: বছরজুড়ে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিল চরম অস্থিরতা। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের বেপরোয়া আচরণ, হত্যা, চাঁদাবাজি ও মারামারির ঘটনায় ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়াই ছিল ২০১০ সালের সার্বিক চিত্র।
চলতি বছর কোনো কোনো ছাত্র সংগঠন সিন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। সরকারের উপর মহল থেকে তাদের এ বেপরোয়া কর্মকাণ্ড থামানো ও বন্ধের একাধিকবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সে চেষ্টা প্রতিবারই ব্যর্থ হয়।
দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো নতুন করে ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু উশৃঙ্খল নেতা-কর্মীরা একের পর এক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় সেই কমিটি আর ঘোষণা করা হয়নি।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে ছাত্রলীগের কর্মীরা এ বছর টেন্ডারবাজি ও হল দখল করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হয়। বছরের প্রথম দিকে ১ ফেব্রুয়ারি দুই গ্রুপের সংর্ঘষে মারা যান এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র আবু বকর।
ঢাকার পাশেই জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মীদের নিজেদের মারামারিতে সারাবছরই ক্যাম্পাস ছিল উত্তপ্ত। ঘটে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। গুলিবিদ্ধ হন তিন ছাত্র। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নেয়। চলতি বছরের ৫ জুলাই ক্যাম্পাস শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর সমর্থকদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। এমিল নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে পায়ে গুলি করে তাকে আবাসিক হলের ছাদ থেকে ফেলে দেয় প্রতিপক্ষরা। এই ঘটনায় ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়।
পাহাড়বেষ্টিত ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। মৌলবাদী সংগঠন শিবিরের একক আধিপত্য বিস্তার দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসটিকে ‘এক ঘরে’ করে রেখেছে। পট পরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীরা আশা করেছিলেন ক্যাম্পাসের দীর্ঘ দিনের দখলদারিত্বের কিছুটা হলেও অবসান ঘটবে। কিন্তু দেখা যায় বিপরীত চিত্র। ছাত্রলীগ কর্মীরা নিজেরাই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
গত এক বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন জন মেধাবী ছাত্র খুন হয়েছেন। এরা হলেন- মহিউদ্দিন মাসুম, হারুনুর রশীদ ও আসাদুজ্জামান। এই তিন ছাত্রকে অবশ্য শিবির ও ছাত্রলীগ দুই দলই তাদের কর্মী বলে দাবি করে।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মীদের দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিলো। ছাত্রলীগ কর্মীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে। পরে এ ঘটনায় তারা ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালালে ছাত্রলীগের ৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনায় উপাচার্য ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথকে সরিয়ে সেখানে নতুন উপাচার্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
শিবির দখলদারিত্বের আরেক ক্যাম্পাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। গত এক বছরে এ ক্যাম্পাসে ছোট বড় মিলিয়ে ১০টিরও বেশি বড় ধরনের সংর্ঘষ হয়েছে। এ বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের তিনতলা থেকে ছুড়ে ফেললে প্রতিপক্ষের হাতে মারা যান ছাত্রলীগ কর্মী নাসিরুল্লাহ। এরপর বিভিন্ন সংঘর্ষে মারা যান-ফারুক ও শরিফুজ্জামান নোমানী নামের আরও দুই ছাত্র।
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটও ছিল এ বছর চরম অস্থিতিশীল। দু’টি ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষে নিহত হন ছাত্র মৈত্রীর রেজওয়ানুল ইসলাম চৌধুরী সানি।
ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা চাই শিক্ষার্থীরা সারা বছর পড়াশোনা করবে। তাদের হাতে অস্ত্র ও লাঠিসোটা কখনোই মানায় না। আসলে দুই একজন উশৃঙ্খল ছাত্রের কারণে সব ছাত্রদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে সরকারের ওপরের মহল থেকে আমাদের কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১০