ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বছরের অনন্য চমক: মিষ্টি হাসিতে হৃদয় জয়

রমেন দাশগুপ্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১০
বছরের অনন্য চমক: মিষ্টি হাসিতে হৃদয় জয়

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের নগরপিতা এম মনজুর আলম। ১৭ বছরের প্রভাবশালী মেয়র ও রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেশজুড়ে সৃষ্টি করেছেন বছরের অনন্য চমক।



চট্টগ্রামের আপামর সাধারণ মানুষের মতে, মিষ্টি হাসিতে চট্টগ্রামবাসীর হৃদয় জয় করে বছরের সেরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন একেবারে তৃণমূল থেকে উঠে আসা এক শিল্পপতি এম মনজুর আলম।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘অনভিপ্রেত আচরণের বিপরীতে মনজু সাহেবের মিষ্টি হাসি মানুষ লুফে নিয়েছেন। তাকে দিয়ে চট্টগ্রামবাসী সময়ের চাহিদা পূরণ করেছেন। এটা মাথায় রেখেই তাকে সামনে এগুতে হবে। ’

‘মিষ্টি হাসি দিয়ে চমক সৃষ্টি’র বিষয়ে বাংলানিউজের প থেকে প্রশ্ন করা হলে স্বভাবসুলভ হাসিতেই এম মনজুর আলম বলেন, ‘আমার হাসি তো আমি নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছিনা, তুমি আমাকে একটা বড় আয়না এনে দাও। সেই আয়নায় আমি চট্টগ্রামের মানুষের হাসি দেখব। ’

বাংলানিউজকে মেয়র আরও বলেন, ‘আমি রাজনীতি বুঝিনা, শুধু বুঝি মানুষের পাশে থাকতে হবে। আমি কোন ণস্থায়ী চমক চাইনা, চট্টগ্রামের মানুষের জনজীবনের সংকটের সমাধান করে চিরস্থায়ী চমক সৃষ্টি করতে চাই। ’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত নগরীর দণি কাট্টলী ওয়ার্ড থেকে পরপর তিনবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এক সময়ের আওয়ামীলীগ নেতা এম মনজুর আলম। দীর্ঘ ১৭ বছরে সাবেক মেয়রের অনুপস্থিতিতে সর্বাধিক সংখ্যক অর্থাৎ ৩২ বার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করে রেকর্ড সৃষ্টি করেন মনজু।

ওয়ান ইলেভেনের পর মহিউদ্দিন চৌধুরী কারাগারে গেলে তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্তাবধায়ক সরকারের আস্থাভাজন হিসেবেও টানা দু’বছর তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় সিটি কর্পোরেশনে মহিউদ্দিন বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারণে দু’জনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। জেল থেকে বের হওয়ার পর মহিউদ্দিন চৌধুরী এসব বিষয়ে প্রকাশ্যে মনজুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর দোর্দন্ড প্রতাপের কাছে টিকতে না পেরে এক পর্যায়ে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মনজুর বিএনপিতে যোগ দেওয়ার এবং মনোনয়ন লাভের চেষ্টা চালান। তবে সেটি ছিল পুরোটাই অন্তরালে। আওয়ামীলীগের তৃণমূল পর্যায়ের এ ত্যাগী নেতার সেই ভুমিকা তখন খোদ আওয়ামীলীগ কর্মীরাই বিশ্বাস করেননি।

কিন্তু এ বছর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগ মুহুর্তে আওয়ামীলীগের এ ত্যাগী নেতা বিএনপিতে যোগ দিয়ে যুগপৎ আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করেন। তবে বিএনপিতে যোগ দিয়েই নিজের একক ক্যারিশমায় চট্টগ্রামের বিএনপির বিবদমান নেতাদের তার সঙ্গে এক কাতারে আনতে সম হন।

এরপর আওয়ামীলীগ তো বটেই, খোদ বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর অবিশ্বাস, সন্দেহের মুখে ছাই দিয়ে তিনি ১৭ জুন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রায় ৯৫ হাজার ভোটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সৃষ্টি করেন বছরের অনন্য চমক।

নির্বাচনে জিতে এম মনজুর আলম এবং ১৭ বছরের মতার চেয়ার হারিয়ে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী উভয়ই চট্টগ্রামবাসীসহ সারাদেশের মানুষের কাছে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ান।

এম মনজুর আলম প্রসঙ্গে মূল্যায়ন করতে গিয়ে শিক্ষাবিদ ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ সিকান্দার খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘মনজু সাহেব সম্ভবত এখনও বড় কোন সঙ্কটে পড়েননি। সেজন্য নির্বাচনে জেতার জন্য যে বিচণতা তিনি দেখিয়েছিলেন সেটা পরবর্তীতেও ধরে রাখতে পেরেছেন কিনা বোঝা যাচ্ছেনা। ভবিষ্যতে তার দল যদি মতায় আসে তখনই বোঝা যাবে তিনি দলীয় আনুগত্যের সেবক নাকি জাতির সেবক। ’
 
বাংলাদেশ সময় ১৩১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।