ঢাকা: সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও হতদরিদ্র মানুষকে বহুমুখী উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসকাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘প্রান্তিক মানুষের খাদ্য ও কাজ: প্রেক্ষিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে উপস্থিত বক্তারা এ দাবি জানান।
সেমিনারের আয়োজন করে ১১টি সংগঠনের প্লাটফরম ‘প্রান্তিক মানুষের সংহতি’।
বক্তারা বলেন, অতিদরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য এবং জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সামজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রাজনৈতিক বিবেচনা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি দূর করতে হবে। নইলে অনেক প্রকৃত দরিদ্র এ কর্মসূচির বাইরে থেকে যাবে।
ইনসিডিন বাংলাদেশ- এর নির্বাহী পরিচালক রতন সরকারের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রান্তিক মানুষের সংহতির আহ্বায়ক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী।
প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্যদের মধ্যে হাসানুল হক ইনু ও মো. ইসরাফিল আলম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির প্রমুখ।
সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং এমডিজিতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে ২০১৫ সালের মধ্যে দারিদ্রের হার ৫০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং বাংলাদেশ সরকারের জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউট পরিচালিত ২০০৯ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশের শতকরা ২৫ ভাগ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, সারাদেশে পরিবারগুলো তাদের আয়ের ৬২ ভাগ ব্যয় করছে খাদ্য ক্রয়ে। এরমধ্যে খেটে খাওয়া বা প্রান্তিক মানুষ প্রধান খাদ্য চাল ক্রয়ে তাদের আয়ের ৭৬ ভাগ ব্যয় করে এবং শতকরা ৫৮ ভাগ পরিবার পর্যাপ্ত খাবার পায় না। এর জন্য এ মুহূর্তে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির প্রকৃত বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।
এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অতিদরিদ্রদের অন্তর্ভুক্ত করার নীতি ও প্রক্রিয়া থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন হয় না। ২০০৮ সালে সিপিডির গবেষণায় বলা হয়েছে, ভিজিডি কর্মসূচির অধীনে প্রকৃত দরিদ্র নয় এমন শতকরা ২৭ ভাগ মানুষ উপকার পেয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে সরকারের কার্যক্রমগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই; নেই প্রকৃত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও। ফলে সব ক্ষেত্রে প্রকৃত উপকারভোগী নির্বাচিত হয় না এবং এর মাধ্যমে কত জনের দারিদ্র্য দূর হলো তারও কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথি এনামুল হক মোস্তফা শহীদ বলেন, ‘বর্তমান সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় যে সব কার্যক্রমের পরিধি বিস্তৃত করেছে, তা এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে নেই। ’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২৫ লাখ মানুষকে বয়স্ক ভাতা দিচ্ছে। ’
তিনি জানান, তবে গ্রামীণ দারিদ্র্যের পাশাপাশি নগর দারিদ্র্যের অবস্থাও অত্যন্ত করুণ।
বিশেষ অতিথি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, ‘এ কর্মসূচির মাধ্যমে দারিদ্র্য সম্পূর্ণ দূর করা সম্ভব নয়। সে জন্য নীতি পরিবর্তনের প্রয়োজন। ’
দরিদ্র মানুষের সম্পদ, মানব উন্নয়ন, বাজার ও মতা কাঠামোয় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত না করলে এর সমাধান সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে সংবেদনশীল বলেও জানান তিনি।
অর্থনীতিবিদ ড. পিয়াস করিম বলেন, ‘প্রান্তিক মানুষের সমস্যা দূর করার জন্য রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের কাঠামোকে পাল্টাতে হবে। ’
বাংলাদেশ সময় : ১৭২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১০