শেরপুর: শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্ত এলাকার গারো পাহাড় এলাকায় বসবাসরত সাধারণ আদিবাসী ও বাঙালিরা এখন বেশ অস্বস্তির মধ্যে দিন পার করছেন।
পাতলা শাল-গজাড়ি বাগান আর ফাকে ফাকে আকাশছোঁয়া ইউক্যালিপ্টাসসহ হরেক পদের দেশি-বিদেশী গাছের বাগানের এখানে সেখানে চোখে পড়ে কিছু বাড়ি-ঘর।
গুচ্ছগ্রামটি পরবর্তীতে ‘বাকাকূড়া গুচ্ছগ্রাম’, ‘বাকাকূড়া আদর্শ গ্রাম’ নামে পরিচিত লাভ করে। সর্বশেষ এর পরিচিতি হয় ‘বাকাকূড়া আশ্রায়ন প্রকল্প’ নামে। এ প্রকল্পটিতে ২০ একর জায়গায় ৭৫ টি পরিবারের জন্য আবাসন বরাদ্দ করা হলেও বর্তমানে এখানে সবাই থাকেন না। কাজের সন্ধানে অনেকেই গ্রামের বাইরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন। তবে এ ধরনের প্রবাসীরা ছুটিছাটায় মাঝেমধ্যে এখানে এসে অবস্থান করেন।
গত শনিবার এই গ্রামের বাসিন্দা অশীতিপর অছির উদ্দিনের বাড়ি থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় প্রায় ১৪ হাজার রাউন্ড গুলি উদ্ধারের পর থেকে এ গ্রামসহ আশাপাশের পাহাড়ি এলাকায় এক অজানা আতংক বিরাজ করছে। বিশেষ করে গুচ্ছগ্রামের সবার মুখে যেন এখন কুলুপ আঁটা রয়েছে।
রোববার সকালে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামবাসীর চোখে-মুুখে অজানা আতংক বিরাজ করছে। অপরিচিত লোক দেখলেই তারা সরে যাচ্ছেন। যে ঘরটিতে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা গুলিগুলো রেখে যায়, সে ঘরের মালিক ৯০ বছর বয়সের নূয়ে পরা অশীতিপর অছির উদ্দিন ওই ঘরের পাশেই টিনশেড আর বাঁশের বেড়া ঘেরা ঘরে একাই বসবাস করেন। তিনি নিজেই রান্নাবান্ন করেন আর এ বাড়ি ও বাড়ি চেয়ে চিন্তে দিন গুজরান করেন বলে এলাকাবাসী জানান।
তার বাড়ির কাছেই তার এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। মাঝে মধ্যে ওই মেয়ে এসে তার খোঁজ-খবর নেয়।
বারবার প্রশ্ন করার পর অছির উদ্দিন ভীতসন্ত্রস্ত নিয়ে বলেন, ‘আমি রাইতে ভালো মতো চোহে দেহিনা। শুক্কুরবার রাইতে যহন চোখে ঘুম ঘম ভাব হইছে তহন পাশের ঘরে শব্দ পাইয়া আমি একাই উইঠা যাইয়া দেহি কয়ডা মানুষ কিয়ের বস্তা যেন রাইখা চইলা যাইতাছে। তহন আমি তাগরে জিজ্ঞাস করতেই আমারে লম্বা ছুরি দেহাইয়া চইলা যায়। তার পর আমগোরে চেয়ারম্যান আর এই গেরামের মুক্তিযোদ্ধা হারুনকে (ইউছুফ হারুন) ঘটনা বলি। তারপর আমি আর কিছু জানি না স্যার। পরদিন সহালে দেহি পুলিশ আইসা ওই ঘর থাইকা কয়ডা বস্তা বাইর কইরা নিয়া গেল। ’
এ ব্যাপারে গ্রামের কোন মানুষই কথা বলতে রাজি হননি। অজানা অতংকে অছির উদ্দিন তার মেয়েকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। কাংশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনারুল্লাহ বলেন, ‘শুক্রবার রাতে মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ হারুনের কাছে বিষয়টি জেনে সাথে সাথেই পুলিশকে জানাই। এরপর শনিবার রাতে পুলিশ এসে বস্তা ও গুলিগুলো উদ্ধার করেন। ’
কিন্তু গুলিগুলো কারা রেখে গিয়েছে সে ব্যাপারে কোনও কিচূই জানা যাচ্ছে না বেল তিনি জানান।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গারো পাহাড়ের ওইসব গ্রামে ও তার আশপাশে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিডিআর ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ব্যাপক অভিযান চালিয়ে গ্রেনেডসহ অসংখ্য গোলা-বারুদ উদ্ধার করেছে। ওইসব গ্রেনেড ও গোলা বারুদ ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার ছিল বলে স্থানীয়দের ধারণা।
সম্প্রতি আওয়ামীলীগ সরকার মতায় আসার পর নিরাপত্তা বাহিনী গারো পাহাড় এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালিয়ে উলফার প্রধান নেতা রঞ্জু চৌধুরীসহ কয়েকজন উলফা সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর ওই এলাকায় তাদের আস্তানা ও কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে উদ্ধার করা গুলিগুলোর ব্যাপারে শেরপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তদন্ত চলছে। আপাতত গুলিগুলো সদর থানার মালখানায় রাখা হয়েছে।
এদিকেবাকাকূড়া গুচ্ছগ্রামসহ আশপাশের গ্রামে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের সমাগমে পাহাড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এখন।
বাংলাদশে সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১০