ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ঢাবি ছাত্র বেলালের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাস মালিকের গড়িমসি

তানিন মেহেদি, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১০
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ঢাবি ছাত্র বেলালের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাস মালিকের গড়িমসি

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র বেলাল হোসেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার দুই মাস পার হলেও তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়নি ঘাতক বাসের মালিক।

গত ২৬ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গোলচক্করের সামনে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন বেলাল।



মাগুরা সদর উপজেলার সাংদাহ লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা শামসুদ্দিন আলমের ৬ সন্তানের মধ্যে বেলাল ছিলেন মেজ। বড়ভাই বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন, তিন বোনের বিয়ে হয়েছে ছোট বোনটি স্থানীয় কলেজের সম্মান শ্রেণীর ছাত্রী।

মধ্যবিত্ত অসচ্ছল পরিবারের সবার কাছে বেলাল ছিলেন কষ্টিপাথর। সড়ক দুর্ঘটনায় এমন অমূল্য রত্ম হারিয়ে বেলালের মা পাগলপ্রায়। শোকে বিহ্বল হয়ে বাড়ির পুকুরে ঝাঁপ দিতে চেয়েছিলেন বেলালের ছোট বোন।

বেলালের মৃত্যুর পরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন-বিক্ষোভ করে। ঘাতক বাস চালকের ফাঁসি এবং বেলালের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে বেশ কিছুদিন মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রতিবাদ সমাবেশও করে তারা।

এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বেলালের পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

গত ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক প্রতিশ্রুত অর্থ বেলালের বাবার হাতে তুলে দেন। এ সময় উপাচার্য বেলালের ছোট বোনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেও বেলালকে চাপা দেওয়া বাস মালিক বেলালের পরিবারকে এখনও ক্ষতিপূরণ দেয়নি।

বেলাল নিহত হওয়ার পরে বিমানবন্দর থানা পুলিশ গাড়ির চালককে আটক করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কোর্টে জামিন নিয়ে মালিকপক্ষ তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

মালিকপক্ষের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত মাসের শেষে উত্তরা জোন পুলিশের ডিসি মিসারুল আরিফের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি সমঝোতা বৈঠক হয়।

বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আমজাদ হোসেন, তুরাগ পরিবহনের মালিক এবং শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন।

তখনকার বৈঠকে মালিকপক্ষ বেলালের পরিবারকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা জানায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এতে রাজি না হলে তখনকার আলোচনা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়।

পরবর্তী সময়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আর দু’দফা বৈঠক হলে তারা ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা জানায়।

কিন্তু তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ উপযুক্ত নয় বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আমজাদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বেলালের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আমরা কয়েকবার আলোচনায় বসেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে তারা আশানুরূপ সাড়া দিচ্ছে না। ’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের টাকা আদায়ের জন্য আমরা উপরমহলেও বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই আমরা ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করতে পারব। ’

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বেলালকে চাপা দেওয়া বাসের মালিককে আমরা দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রচলিত আইনে সড়ক দুর্ঘটনার শাস্তি সামান্য হওয়ায় মালিকপক্ষ ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে গড়িমসি করছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।