ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সুনামগঞ্জে সুরমা নদীতে ট্রলার দুর্ঘটনা: ৩৭ লাশ উদ্ধার

শাহজাহান চৌধুরী, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১০

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার আলীপুর থেকে: সুনামগঞ্জের সুরমা নদীতে শনিবার রাতে দুটি ট্রলারের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় রোববার সকালে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।



এছাড়া এ ঘটনায় ২জন আহত ও ১ জন নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত দুজ’ন হলেন কিশেঅরগঞ্জের ইটনা থঅনার পূর্ব গ্রামের আবুল হাশেম(৩৫) ও গিয়াস উদ্দিন (২০)। তাদের দু’জনেরই পা ভেঙ্গে গেছে।

নিখোঁজ ব্যক্তি হচ্ছেন ইটনা থানার উদিয়ারপাড় গ্রামের আতাউর রহমান (২৩)। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত আতাউর রহমানের ভাই আলাল উদ্দিন।

উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে ২০ জন নারী ও ১৭ জন শিশু বলে জানিয়েছেন জামালগঞ্জের থানার ওসি ।

শনিবার দিনগত রাত ১১টা পর্যন্ত ৩৫টি এবং রোববার সকালে ২টি লাশ উদ্ধার করা হয়।

জামালগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম রোববার সকালে দুটি লাশ উদ্ধার করার কথা বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন।

ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত জামালগঞ্জ থানার এএসআই সিরাজুল ইসলাম ও র‌্যাব-৯ এর এএসআই গোলাম নেওয়াজ দুপুর ১২টা ২০মিনিটে বাংলানিউজকে জানান, সকাল পর্যন্ত উদ্ধার করা ৩৭টি লাশের মধ্যে নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে ৩৬জনের। একটি লাশের পরিচয় এখনও শনাক্ত হয়নি।

এর মধ্যে সর্বশেষ দুপুর সাড়ে ১টার দিকে ৬টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এদের একজন হলেন, গুলেশা বেগম(৬৫), স্বামী আবুল মিয়া, থান ইটনা, গ্রাম এলংজুড়ি, জেলা কিশোরগঞ্জ। তাকে শনাক্ত করেছেন তার মেয়ে মঞ্জুরা বেগম। দুর্ঘটনার খবর শুনে পাশ্ববর্তী নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের মান্দারবাড়ি গ্রাম থেকে তিনি ছুটে এসেছেন।

বাকি লাশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে মঞ্জুরা বেগমের বোনের মেয়ে শিশু কলি’র (১০)। তার পিতার নাম দুলাল মিয়া। গ্রাম মোহনগঞ্জের মান্দারবাড়ি।

পরিচয় পাওয়া বাকি ৪ লাশের ৩টি হচ্ছে একই পরিবারের এক মা ও দুই শিশুর। তারা হচ্ছেন, ইটনা থানার জয়সুদ্দি গ্রামের রাজা মিয়া’র স্ত্রী বেদানা বেগম(৪০) এবং খোদেজা বেগম (১২) ও তকদির হোসেন (১০)। তাদের শনাক্ত করেছেন  রাজা মিয়ার মেয়ের জামাই ইটনা থানার এলংজুড়ি গ্রামের ফারুক হোসেন।

অপর লাশটি হচ্ছে জয়সুদ্দি গ্রামের আমির হোসেনের স্ত্রী রাবেয়ার (৩০)।     

বাকি ১টি লাশের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।

এর আগে স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন স্থানীয় নেতাকর্মী ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্ধৃতি দিয়ে ৩৫টি লাশ উদ্ধার করার কথা নিশ্চিত করেন। প্রাথমিকভাবে স্থানীয়রাই উদ্ধার তৎপরতা চালান বলে জানান তিনি।

শনিবার রাত ১১টার দিকে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানও বাংলানিউজকে ৩৫ টি লাশ উদ্ধার করার কথা জানান।

এদিকে, ঢাকা থেকে দমকলের ১১ সদস্যের একটি ডুবুরি দল রোববার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে বাংলানিউজকে জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ডুবুরি দল ঢাকা থেকে রাতেই ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন। ডুবুরি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন স্টেশন অফিসার আমজাদ হোসেন।

দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের প থেকে ১ হাজার ও প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। সকালেই সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফয়জুর রহমান নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে তাদের পরিবারের হাতে সহযোগিতার টাকা তুলে দেন।

শনিবার রাত ৮টার দিকে জেলার জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলার মাঝামাঝি আলীপুর এলাকায় একটি বালুবাহী ও একটি যাত্রীবাহী ট্রলারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। যাত্রীবাহী ট্রলারটি জামালগঞ্জ ধর্মপাশার দিকে যাচ্ছিল বলে জানা গেছে।

এদিকে ট্রলার দুর্ঘটনার খবরে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয়  নেতা খালেদা জিয়া। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তারা দু’জনই।

এদিকে, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারটিতে মোট কত জন যাত্রী ছিলেন রোববার সকাল ১১টা পর্যন্ত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, এ ধরনের যাত্রীবাহী ট্রলারে ঠিক কতোজন যাত্রী থাকে তা নিশ্চিত করে বলা অসম্ভব। তবে এর সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ জনের বেশি হয় না।

স্থানীয় সেনারবাগ ইউপি সদস্য নূর মিয়া ঘটনাস্থল থেকে বাংলানিউজকে জানান, মালবাহী একটি ট্রলারের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ট্রলারটি ডুবে গেলে কেউ কেউ সাঁতরে তীরে উঠতে সম হয়। তবে নারী ও শিশুসহ অনেকেই ডুবে মারা যায়।

এদিকে, রাত পৌনে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ফেনারবাক ইউপি’র সদস্য মতিউর রহমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে নিহতের স্বজনদের কাছ থেকে তাদের পরিচয় পাওয়া গেছে।

এরা হলো মিঠামইন থানার গুলদিঘী গ্রামের ফাতেমা বেগমের ছেলে তকবির হোসেন (৭) ও সফিকুল (৪), ইটনা থানার বড়হাটি গ্রামের সফর আলীর স্ত্রী জামেলা খাতুন (৫০), ভাতিজা বউ রিপন বেগম (৩০), নাতিন নাছিমা (১০), ভাইয়ের স্ত্রী হেলেনা খাতুন (৪০), নাতি রফিকুর (৮), নিশা আক্তার (৭), জয়সুদ্ধি গ্রামের খুশিদের ছেলে কাকন মিয়া (৮) ও  তৌহিদ(৬), মিঠামইন থানার ভরা গ্রামের বোধাই মিয়ার ছেলে সাকিব (৬) এবং মিঠামইন থানার বড়া গাওয়ের ছফাত মিয়ার মেয়ে স্মৃতি (৫) ও ইতি (১)।

স্থানীয় হোসেনপুর গ্রামের আলম বাংলানিউজকে জানান, তার শাশুড়ি আছিয়া খাতুন (৪৭), শ্যালকের ছেলে জাহেদুল (৭) নৌকা ডুবিতে নিহত হয়েছে।

ইটনা থানার বড়হাটি গ্রামের সফর আলী ঘটনাস্থল থেকে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করে জানান, যাত্রীদের অধিকাংশই কিশোরগঞ্জ জেলার অধিবাসী। তারা ভোলাগঞ্জ থেকে কাজ করে বাড়ি ফিরছিলেন।

এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত দিরাই সাকেলের এএসপি গণিউজ্জামান লস্কর দুপুর সোয়া ১টার দিকে বাংলানিউজকে জানান, আপাতত আর কোনও লাশ উদ্ধারের সম্ভাবনা তেমন নেই। উদ্ধার হওয়া ৩৭টি লাশ ছাড়া দু’জন আহত ও ১জন নিখোঁজ থাকার সংবাদ জানা গেছে।

তবে নিখাঁজ দু’একটি লাশ স্রোতে ভেসে গিয়েও থাকতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।  

বাংলাদেশ সময় ১০১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।