ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিকল্প বাজেট প্রস্তাবে খালেদা

শেয়ারবাজারের অর্থ বিদেশে পাচারে টাকার মান কমছে

পবন আহমেদ/আসাদ জামান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১০
শেয়ারবাজারের অর্থ বিদেশে পাচারে টাকার মান কমছে

ঢাকা: শেয়ারবাজার থেকে টাকা বিদেশে পাচারের কারণে টাকার মান কমছে বলে মন্তব্য করেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন,বিগত দুই দশকের মধ্যে বাংলাদেশ এবারই সবচাইতে সংকটজনক অবস্থায় পড়েছে।



বুধবার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাজেট নিয়ে বিএনপির বিকল্প প্রস্তাবে এ কথা বলেন। রাজধানীর রূপসী বাংলা ( সাবেক শেরাটন) হোটেলে  তিনি বাজেট প্রস্তাবের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

খালেদা বলেন, ‘সারা বিশ্বে যেখানে মার্কিন ডলারের মূল্যমান কমছে, সেখানে বাংলাদেশে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যমান বাড়ছে। ’

খালেদা বলেন, ‘শেয়ারবাজারের বিপর্যয় থেকে ফায়দা লুটকারীগোষ্ঠী কর্তৃক ডলার পাচার, ওভার ইনভয়েসিং-আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ডলার পাচার মূলতঃ ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমার অন্যতম কারণ। ’

সংসদে জাতীয় বাজেট পেশের আগের দিন সংসদে না গিয়ে খালেদা জিয়া এ নিয়ে দ্বিতীয় দফা বিকল্প বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করলেন। গতবছর তিনি প্রথমবারের মতো সংসদের বাইরে এভাবে দলের বাজেট ভাবনার কথা জানান।  

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১১-২০১২ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমান অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় প্রত্যেকটি সূচক নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মূলতঃ ভোগতাড়িত হওয়ায় ভঙ্গুরতায় ভুগছে। ’

তিনি বলেন, ‘মূল্যস্তর, বিনিয়োগ, সঞ্চয়, বাজেট ঘাটতি, শিল্পোৎপাদন, বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে টাকার বিনিময় হার, বিদেশি মুদ্রার মজুত এবং কর্মসংস্থান সবই নেতিবাচক।

প্রস্তাবে ব্যক্তি আয়কর সীমা ১ লাখ ৬৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘মনে রাখা দরকার করের হার বেশি হলেই বেশি কর আদায় হয় না। মূল্যস্ফীতি ও বর্তমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের নিরিখে করমুক্ত আয়ের সীমা বার্ষিক ৩০০,০০০ টাকা নির্ধারণ করা সমীচীন বলে আমরা মনে করছি। ’

বাজেট প্রস্তাবের শুরুতে খালেদা জিয়া বলেন, ‘দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতির সামনে একটি দিক-দর্শন তুলে ধরা আমরা দায়িত্ব বলে মনে করি। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা গত বছর বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার আমাদের ধারণাগুলোকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি। এর ফলে আজ সামষ্টিক অর্থনীতির সকল সূচক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এক কথায় দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। ’

খালেদা বলেন, ‘বিগত দুই দশকেও একই অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকসমূহ এমন বিপর্যয়ে পড়েনি। ’

‘বিদায়ী অর্থছরের মতো আমরা এবারও একই আঙ্গিকে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী অর্থবছরের উপর বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপন করছি’ বলেন খালেদা।

তিনি বলেন, ‘বাজেট হবে মানুষের জন্য, উন্নয়নের জন্য, উৎপাদনের জন্য। আর বাজেট বরাদ্দের নীতি হবে সামাজিক উৎপাদনশীলতার নিরিখে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা। বর্তমান বাস্তব অবস্থার নিরিখে বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ণয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্যখাত এবং ভৌত-অবকাঠামো খাত বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার।

বিএনপির দেওয়া গত বছরের প্রস্তাব সরকার গুরুত্ব না দেওয়ায় এবছরও সেসব প্রস্তাব আবারও পেশ করেন খালেদা।

তিনি বলেন, ‘বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটের ওপর আমরা বেশ কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছিলাম। আমাদের দিক-দর্শন এবং প্রস্তাবনা এ বছরেও পুরনো হয়ে যায় নি। এ কারণে বিদায়ী অর্থবছরের প্রস্তাবনাগুলোও সংক্ষিপ্তরূপে আপনাদের নজরে আনা হলো। ’

বিএনপি তাই শিক্ষা, গবেষণা, কৃৎ-কৌশল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং গবেষণা ও উন্নয়নের প্রতি যথাসাধ্য রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রদানের নীতিতে বিশ্বাস করে বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির অব্যাহত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে খাদ্যে স্বয়ম্ভর হওয়ার কোনো বিকল্প জনবহুল বাংলাদেশের নেই। ’

জাতীয় অর্থনীতিকে সর্বোত্তমভাবে সংগঠিত করতে ব্যক্তি মালিকানা, সমবায়ভিত্তিক মালিকানা এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানার পারস্পরিক পরিপূরকতায় বিশ্বাসী বিএনপি।

খালেদা বলেন, ‘শিক্ষার বিস্তার, স্বাস্থ্যসেবা, আয়বর্ধন, সামাজিক বৈষম্য নিরসন প্রভৃতি নানামুখি কর্মসূচির বাস্তবায়ন করে সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠীগুলোকে সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসার নীতিতে বিশ্বাস করে বিএনপি। ’

‘নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারী পুরুষকে সমভাবে দেশ গড়ার সৈনিকে পরিণত করতে চায় বিএনপি’ বলেন তিনি।

কৃষিখাতের উন্নয়নে মূল্য শৃঙ্খল বজায় রাখতে বিআরডিবিকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া।

আইলা বিধ্বস্ত এলাকায় পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসন এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনগণের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে বহুমুখি প্রকল্প গ্রহণ ও এখাতে একশত পঞ্চাশ (১৫০) কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন তিনি।

উপকূলীয় এলাকার জমি উদ্ধারের জন্যও সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বলেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘পানিবিজ্ঞানীরা মনে করেন উপকূলীয় অঞ্চলে ক্রস ড্যাম নির্মাণ করে নদীবাহিত পলি সঞ্চয়ণ নিয়ন্ত্রণ করে সমুদ্রগর্ভ থেকে বিপুল ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব। এর ফলে আবাদী জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং সমুদ্রের স্ফীত জলরাশির চাপও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। আমরা এই ধরণের একটি প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক এবং অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করছি। ’

বিচিত্র ধরণের বৃত্তি ও পেশায় নিয়োজিতদের প্রশিক্ষণ ও মৌলিক সুবিধা দিতেও সরকারের কাছে প্রস্তাব করেন খালেদা।

তিনি বলেন, ‘হকার, ফেরিওয়ালা, রিক্সা চালক, ভ্যানগাড়ী চালক, যানবাহনের হেলপার, কুলি-মজুর, রিক্সা-ভ্যানগাড়ী ও যন্ত্রচালিত শকটের মিস্ত্রি, নির্মাণ শ্রমিক, পৌরবর্জ্য সংগ্রাহক, জুতো সেলাইকারী, প্লাম্বার, নরসুন্দর, গৃহ পরিচারিকা ও গৃহভৃত্য, বাবুর্চি, বাগানের মালীসহ টোকাই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত বালক বালিকা ও কিশোর কিশোরীরা এরকম অসংখ্য কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত। এদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসুবিধা এবং কায়িক শ্রমের কষ্ট লাঘবের জন্য একটি সৃজনধর্র্মী প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করছি। ’

বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য গমনকারী শ্রমিকদের কষ্ট লাঘবের জন্য বিনা সুদে “বিদেশে কর্মসংস্থান ঋণ” দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।

পেনশনভোগীদের জীবনযাত্রাকে কিছুটা মসৃণ করার জন্য মূল্যস্ফীতির সাথে সমন্বয় করে পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদ এবং অন্যান্য সঞ্চয়পত্রের সুদ যৌক্তিকভাবে ধার্য করার প্রস্তাব করেন খালেদা।

মূল্য সংযোজন কর কমানোরও প্রস্তাব দেন খালেদা।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান মূল্যস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে থেকে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ শতকরা ২৫ ভাগ কমানো এবং এরই সংগে জনজীবনে দুর্ভোগ লাঘবের লক্ষ্যে পরবর্তী অর্থবছরে ভ্যাটের আওতা আর সম্প্রসারণ না করারও প্রস্তাব করছি। অধিকন্তু আমরা ডাক্তারের ফি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি, বাড়ি ভাড়া/স্থাপনা ও যাত্রীভাড়ার উপর মূল্যসংযোজন কর প্রত্যাহারের দাবি করছি। ’

প্রবীণদের জন্য প্রতি উপজেলায় প্রাথমিকভাবে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি করে বয়স্কনিবাস নির্মাণের প্রস্তাব দেন তিনি।

এছাড়া দরিদ্র নারীরা একটি মাত্র সন্তান জন্ম দিলে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য মাসে ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করেন খালেদা।

রাজধানী ঢাকার সংগে সকল বিভাগীয় শহরের ঘন্টায় ২৫০ কিমি থেকে ৩০০ কিমি গতিসম্পন্ন হাইস্পিড ট্রেন চালু করা, ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে ছয় লেন সড়ক নির্মাণ, ২য় পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং রেল যোগাযোগসহ দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রেল যোগাযোগসহ দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করছি। ’

বস্ত্র ও তাঁত শিল্পের উন্নয়নে গুচ্ছ প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘ স্পিনিং ও বস্ত্রখাতে ভারতডাম্পিং করছে কিনা তা পরীক্ষা নিরিক্ষা করে বিষয়টি যথাযথ আন্তর্জাতিক সংস্থায় উত্থাপনের পরামর্শ দিচ্ছি। বস্ত্রখাতে নগদ সহায়তা ৫%’র পরিবর্তে ৮% করতে হবে। টেক্সটাইল রিহ্যাবিলিটেশন ফান্ড গঠন করতে হবে। টেক্সটাইল ও স্পিনিং সেক্টরের জন্য সুদের হার কমাতে হবে। তাঁত শিল্পের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। ’

সরকারের ঘোষিত প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘সরকারি মহল দাবি করছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রাক্কলন অনুযায়ী এই প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি নয়। দেশীয় একটি থিংকট্যাঙ্ক ও বিশ্বব্যাংকও প্রায় একই ধরণের প্রাক্কলন করেছে। ’

খালেদা বলেন, ‘জিডিপির প্রবৃদ্ধির হিসাব বার বার সংশোধন, তথ্যের অসামঞ্জস্যতা ও হিসাব প্রক্রিয়ার উপর নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ’

‘প্রবৃদ্ধির হারেরও রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করে তিনি জানতে চান, ‘আমাদের প্রশ্ন হলো, যে প্রবৃদ্ধি দেখানো হচ্ছে তার গুণগত মান কী। ’

তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে, সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধিতো দূরের কথা, সরকার যে প্রবৃদ্ধির হার দাবি করছে সেটাও পরিসংখ্যানে কারচুপির ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। ’

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হতাশাব্যঞ্জক। সরকারি বিনিয়োগ কমে আসায় সামগ্রিক বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ’

বৈদেশিক মুদ্রার খরচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থেও (রেমিটেন্স) নামমাত্র প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি হিসাবে জুন মাসের শেষে ঘাটতি দেখা দেবে, লেনদেনের ভারসাম্যেও ঘাটতি দেখা দেবে। ’

তিনি জানান, গত ৬ জুন দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিমাণ ছিল এক হাজার তেতাল্লিশ কোটি ১২ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।

খালেদা বলেন, ‘সরকারের ব্যয় বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বেতন-ভাতা ও দেশি-বিদেশি ঋণের উপর সুদ প্রদান করেই সরকারের রাজস্ব আয়ের বড় অংশ চলে যায়। অধিকন্তু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উপর ক্রমবর্ধমান ভর্তুকির চাপ বেড়ে গেলে রাষ্ট্র ভয়াবহ রাজস্ব আয়ের সংকটে পড়বে। ফলে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি মোকাবিলা করতে হবে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। বেসরকারী খাত ঋণ-দুর্ভিক্ষে নিক্ষিপ্ত হবে, সামগ্রিক উৎপাদন ব্যাহত হবে। ’

খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে নিয়ে বিএনপির ভাবনার কথা জানান। ‘কী রকম বাংলাদেশ দেখতে চাই’ শিরোনামে খালেদা বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও লক্ষ্য হচ্ছে, পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবিলায় সক্ষম এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে ক্ষুধা, অপুষ্টি, অশিক্ষা, সামাজিক অবিচার, মানবাধিকার লঙঘন এবং শোষণ, বঞ্চনা ও কোনো ধরণের বৈষম্য থাকবে না। ’  

তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী দশকের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় সম্মান ও মর্যাদার আসনে আসীন দেখতে চাই। ‘

খালেদা বলেন, ‘সেই লক্ষ্য ও স্বপ্ন বাস্তবায়নকল্পে বিশ্বাসযোগ্য এবং পক্ষপাতহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা, কার্যকর এবং জবাবদিহিতামূলক সংসদের নিশ্চয়তা, একটি স্বাধীন, দক্ষ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বিবর্জিত এবং দুর্নীতিমুক্ত বিচার ব্যবস্থা, মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং আইনের শাসনের নিশ্চয়তা, দক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত এবং দল-নিরপেক্ষ গণ এবং পুলিশ প্রশাসন গড়ে তোলা প্রয়োজন। ’

প্রশাসন সম্পর্কে খালেদা তার বাজেট প্রস্তাবনায় বলেন, ‘আমরা একটি দক্ষ, গতিশীল, যুগোপযোগী ও গণমুখি প্রশাসন গড়ে তুলতে চাই। ’

তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতামূলক নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া চালু করা, স্বচ্ছ এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, সকল পর্যায়ে ই-গভর্নেন্স চালু করা, স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনকে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার প্রস্তাব করছি। ’

অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে খালেদা বলেন, ‘আমরা এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও নীতি কাঠামো গড়ে তুলতে চাই যার মাধ্যমে ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দ্রুত দারিদ্র্যমুক্ত একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবার পথে এগিয়ে যাবে। ’

তিনি বলেন, ‘কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিকীকরণ এবং বহুমুখিকরণ, শিল্পখাতে অধিকতর প্রবৃদ্ধি অর্জন, সেবা খাতকে দরিদ্র মানুষের নিছক টিকে থাকার আশ্রয়স্থল থেকে সর্বাত্মক সমৃদ্ধির বাহনে রূপান্তরিত করা, রপ্তানি খাতের বহুমুখিকরণ, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের চাহিদার নিরিখে বিশ্বায়নের বাস্তবতার সংগে সঙ্গতি রেখে দেশীয় বাজারমুখি শিল্পায়ন করার প্রস্তাব করছি। ’

খালেদা জিয়ার এ বিকল্প বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করে। এছাড়া নিজস্ব ওয়েবসাইটেও সরাসরি দেখানোর ব্যবস্থা করে বিএনপি।

খালেদা জিয়ার এ বাজেট প্রস্তাবনা অনুষ্ঠানে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাবেক আমলা, বিভিন্ন পত্রিকার প্রবীণ সাংবাদিকরা উপস্থিত হন।

এরই মধ্যে যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ্, ড. আর এ গণি, এমকে আনোয়ার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, রাবেয়া ফয়েজ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোর্শেদ খান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, শফিক রেহমান, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ঈব্রাহীম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেক শওকত হোসেন নীলু, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল অফিসার এনরিক রোডরিগো গ্যালিগো, ডেনমার্ক দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জন মোলার হানসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিন লয়েন, ইন্দোনেশিয়ার কাউন্সিলর মুতোহারুল দিজানান,  ইউএসএইড’র সিনিয়র গভর্নেন্স অ্যাডভাইজার জেফরি নোয়েল ভেনাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহম্মেদ, অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান মিঞা, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, বিশিষ্ট সাংবাদিক এবিএম মুসা, দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।