ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘তদন্তের আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না’

শেরপুরে ১৪ হাজার রাউন্ড গুলি উদ্ধার, থানায় মামলা

আব্দুর রফিক মজিদ, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১০
শেরপুরে ১৪ হাজার রাউন্ড গুলি উদ্ধার, থানায় মামলা

শেরপুর: শনিবার সকালে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী বাকাকূড়া গুচ্ছগ্রাম থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১৩ হাজার ৬৮০ রাউন্ড রাইফেলের গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ঝিনাইগাতী থানার এসআই তাজুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একই থানার এসআই গিয়াছ উদ্দিনকে।

এদিকে দুপুর ২টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের উদ্ধার করা গুলিগুলো দেখানো হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারপ্রাপ্ত পলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সকাল ৭ টার দিকে পুলিশের একটি বিশেষ দল জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাকাকূড়া গুচ্ছগ্রামের একটি পরিত্যক্ত ঘরে তল্লাশি চালিয়ে ৮টি ছেঁড়া প্লাস্টিক ব্যাগে ছোট ছোট আকারের ৫৭টি প্যাকেটে মোড়ানো ১৩ হাজার ৬৮০ রাউন্ড চাইনিজ রাইফেল/এসএমজি’র তাজা গুলি উদ্ধার করে। ’

তিনি জানান, গুলিগুলোর গায়ে ৮৮১১৯৩/৯৪ নম্বর লেখা রয়েছে। তবে  গুলিগুলো কোন দেশের তৈরি তা লেখা নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকেদের বলেন, ‘গুলিগুলো কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন বা সন্ত্রাসী গ্র“প নাশকতামূলক কাজে ব্যবহারের জন্য এনেছিল কি না তা তদন্তের পূর্বে বলা যাচ্ছে না। ’

এদিকে পুলিশের দায়ের করা ওই মামলায় বাকাকূড়া গুচ্ছগ্রামের ওই বাড়ির মালিক অশীতিপর আছির উদ্দিনকে (৯০) সাী করা হতে পারে বলে পুলিশ জানায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, উলফা কমান্ডার জেম্স গুচ্ছগ্রামের ওই বাড়িটি থেকে অছির উদ্দিনকে উচ্ছেদ করে সেখানে আস্তানা গেড়েছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে উলফার গোপন আস্তানাগুলোতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযানের মুখে জেম্সসহ উলফা সদস্যরা পালিয়ে যান।

গুলিগুলো তাদেরই ফেলে যাওয়া বলে সূত্রটি ধারণা করছে।  

অপরদিকে সীমান্ত এলাকার একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, উলফারা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে আছির উদ্দিন মাঝেমধ্যে ওই বাড়িতে এসে থাকতেন। শুক্রবার রাতে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েক ব্যক্তি তার বাড়ির পরিত্যক্ত ওই ঘরটিতে গুলিভর্তি বস্তাগুলো রেখে যায়। এসময় তিনি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা তাকে ছুরি বের করে ভয় দেখায়।

পরে আছির উদ্দিন বিষয়টি গ্রামের বাসিন্দা ঝিনাইগাতী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইউছুফ হারুনকে জানালে তিনি পুলিশকে খবর দেন।

এদিকে উদ্ধার হওয়া গুলিগুলো ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী উলফার বলে সীমান্ত এলাকায় গুঞ্জন থাকলেও পুলিশ বা কোনও গোয়েন্দা সংস্থা তা নিশ্চিত করেনি।

তবে গত কয়েক বছরে ঝিনাইগাতীর সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকায় সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও বিডিআরের অভিযানে অসংখ্যবার গোলা-বারুদ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে।  

এদিকে কাংশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনারুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘গুলি উদ্ধারের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু গুলিগুলো কার বা কারা রেখেছে এ ব্যাপারে আমার কোনও ধারণা নেই। ’

গুচ্ছগ্রামের অশীতিপর আছির উদ্দিনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তিনি এখানে একাই থাকেন। বার্ধ্যকের কারণে কাজ-কর্ম করতে পারেন না। স্থানীয়দের দান-খয়রাতে তার জীবন চলে। এছাড়া তার এক ছেলে উপজেলার নলকূড়া ইউনিয়নের ভালুকা গ্রামে বসবাস করেন। সে সূত্রে মাঝে মধ্যে তিনি সেখানেও থাকেন।

উলফার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আগে তাদেরকে আমরা প্রায়ই স্থানীয় গ্রামে ও হাটবাজারে দেখতাম। কিন্তু কয়েকদিন আগে অভিযানের পর তাদেরকে আর দেখছি না। ’

গুলি উদ্ধারের পর র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘটনাস্থলে পরিদর্শন ও তদন্তে নেমেছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি গোয়েন্দা সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছে। উচ্চ পদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানায়, গুচ্ছগ্রামের আছিরউদ্দিনের বাড়িটি ছাড়াও আশপাশের আরও কয়েকটি বাড়ি পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে। সেসব স্থানে অভিযান চালানো হলে আরও গোলা-বারুদ, অস্ত্র এমনকি রকেট লাঞ্চারসহ রকেট শেলও উদ্ধার হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad