ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করার বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলাকেই নিজের বর্তমান পরিণতির জন্য দুষলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী)।
তার ভাষ্য, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করার বিষয়টি প্রকাশ্যে বলে দেওয়াটাই হয়তো আমার অপরাধ।
বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেপ্তারের পর ফারুক হত্যা মামলায় ৫ দিন রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জিজ্ঞাসাবাদে এভাবেই আক্ষেপ করেন বিএনপির এই নেতা।
সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার একজন ডিবি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে একথা জানিয়েছেন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত সাকা চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ডিবি’র ওই কর্মকর্তা আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সাকা চৌধুরী ঘন ঘন বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ টানছিলেন এবং তাদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কের নানা বিষয় তুলে ধরারও চেষ্টা করেন। শুরু থেকেই বেশ মুষঢ়ে পড়ার কারণে ঘন ঘন বিষয় পরিবর্তন করে নানা কথা বলারও চেষ্টা করেন।
ডিবি’র উপ-পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে দু’জন সহকারী কমিশনার, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ আরও একজন ডিবি পরিদর্শক জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেন।
জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ট সূত্রটি জানায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সাকা চৌধুরী ঠাণ্ডাজনিত কারণে কিছুটা শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এ সময় ইনহেলার ব্যবহার করে পুরোপুরি সুস্থবোধের পর তিনি ১০টায় রাতের খাবার শেষ করেন। ১০/১২ মিনিট পরেই সাকা চৌধুরীকে ডিবি’র (দক্ষিণ) সহকারী কমিশনার শহীদুল্লাহ’র কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডিবি’র ৫ সদস্যের একটি টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
রমনা থানায় দায়ের করা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে ফারুককে পুড়িয়ে হত্যা করা সংক্রান্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পরিদর্শক ফজলুর রহমান জানান, হরতালে গাড়ি পোড়ানোসহ নানা বিশৃংখলা সৃষ্টির জন্য আগাম নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে সাকা চৌধুরীর কি ভূমিকা ছিল সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সাকা চৌধুরী ডিবি কর্মকর্তাদের জানান, হরতাল সফল করার জন্যই অতি উৎসাহী কিছু কর্মী-সমর্থকরা জ্বালাও পোড়াও, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের সুনির্দ্দিষ্টভাবে কোনো নির্দেশ দিতে হয় না।
জিজ্ঞাসাবাদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ওআইসি মহাসচিব পদে নির্বাচন করে পরাজিত হওয়ার পর দেশে ফিরে বিমানবন্দরেই তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল মন্তব্য করার প্রসঙ্গটি তোলা হয়।
ওআইসি’র নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ক্ষোভ ও ক্রোধের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএস কিবরিয়াকে গ্রেনেড হামলায় হত্যার কোনো যোগসূত্র আছে কি না- সে ব্যাপারেও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সাকা চৌধুরীর কাছে জানতে চান।
জবাবে সাকা চৌধুরী গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানান, ঐতিহ্যবাহী রাজনীতিবিদ পরিবারের সদস্য হিসেবে এমন জঘন্য কোনো কর্মকাণ্ডে তার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
জিজ্ঞাসাবাদকারী গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রশ্ন করেন, চট্টগ্রামের কাফকো জেটিতে ১০ ট্রাক অস্ত্র খালাসের সময় সাকা চৌধুরীর মাদার ভেঁসেল ‘কিউ সি’ এর অবস্থান কোথায় ছিল? বিপুল পরিমাণ এ অস্ত্রশস্ত্র খালাস, আটক ও মামলার আগে-পরে সাকা চৌধুরীর ভূমিকা কি ছিল, সে ব্যাপারেও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিস্তারিত জানতে চান।
রাত সাড়ে ১২ টার দিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকলে তাকে পুনরায় ইনহেলার ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। রাত ১টার পর পরই সাকা চৌধুরীকে ডিবি দক্ষিণের হাজতখানায় পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে গভীর রাতে ডিসি ডিবি মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘সুনির্দ্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়েই সাকা চৌধুরীকে শুক্রবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ’
তবে গোপনীয়তার স্বার্থে সেসব বিষয় ও সাকার দেওয়া বক্তব্যের কোনো কিছু তিনি প্রকাশ করতে রাজি হননি।
ডিসি ডিবি বলেন, ‘স্বচ্ছতার সার্থে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবেই মিডিয়ার সামনে ব্রিফিং করা হবে। ’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একজন সম্মানিত সংসদ সদস্য হিসেবে তার প্রতি কোনোরকম অমর্যাদাকর আচরণ বা মানবাধিকার লংঘনের মতো কোনো কিছু ডিবি দপ্তরে হবে না- সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে পারি। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৩২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১০