ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাজশাহী মুক্ত দিবস আজ

শরীফ সুমন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১০
রাজশাহী মুক্ত দিবস আজ

রাজশাহী: আজ ১৮ ডিসেম্বর। রাজশাহীবাসীর স্মৃতিপটে আঁচর কেটে যাওয়া একটি উল্লেখযোগ্য দিন।

আজ রাজশাহী মুক্ত দিবস। ৩৯ বছর আগে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর এসেছিল বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল বিজয়। তবে রাজশাহীতে স্বাধীনতার সেই সূর্য কিরণের ছোয়া লাগে আজকের দিনে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী অঞ্চলকে নেওয়া হয় ৭ নং সেক্টরে। বিদেশি প্রতিনিধিদের পরিস্থিতি জানাতে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত পার হয়ে আসে। ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা রাজশাহী শহরে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শুরু করে তাদের অ্যাকশন অপারেশন। পাকিস্তানি সৈন্য ও দোসরদের নির্যাতন হতাযজ্ঞ বাড়তে থাকে। রাজশাহীর নারীরাও অংশ নিলেন মুক্তিযুদ্ধে।

পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্য ভূমিতে হত্যা করলো চার হাজার মানুষকে। নারীরাও তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাননি। পাকিস্তানি সৈন্যরা দোসরদের মদদে বিভিন্ন কায়দায় লোকজনকে হত্যা করে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা ঢুকে পড়তে থাকলো রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলে। ২৫ নভেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর চরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জীবন্ত অবস্থায় বালির মধ্যে পুঁতে হত্যা করলো। সবকিছু সহ্য করে স্বাধীনতার দিনগুণতে থাকে রাজশাহীর মানুষ। মিত্র বাহিনীর বিমানকে স্বাগত জানাতে সবাই তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। সে সময় পাক সেনাদের বিমান বোমা ফেলতে থাকলো রাজশাহীতে।

লালগোলা সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও সেখ পাড়া সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর রশিদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাক সেনাদের সাথে লড়াই করে মুক্ত করে ফেলে রাজশাহীর গ্রাম অঞ্চল। মহদিপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর রাজশাহী শহরে এগোনোর পরিকল্পনা নিলেন। তিনি ১৪ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেহায় চরে শহীদ হলেন। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী রাজশাহীর দিকে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর পরাজয় বরণের পর যৌথ বাহিনীর এই অগ্রগামী দল পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছ থেকে সাদা পাগড়ী ও আত্ম সমর্পনের চিঠি নিয়ে রাজশাহী শহরে বীর দর্পে প্রবেশ করে। তাদের চা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় নগরীর সোনাদিঘীর মোড়ে সাংবাদিক মঞ্জুরুল হকের বাড়িতে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হল, জেলখানা ও বিভিন্ন বন্দীশালা থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে নির্যাতিত মানুষেরা। স্বজন হারানোর কষ্ট আর স্বাধীনতার উল্লাসে গোলাপ পানি ফুলের পাপড়ী দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা-মিত্র বাহিনীকে বরণ করে নিলো রাজশাহীর মানুষ। ১৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয়ে গেলো রাজশাহী।

বাংলাদেশ সময়: ০২২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।