চট্টগ্রাম: ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি জাহান মণির নাবিকদের উদ্ধারে সোমালি জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে জাহাজটির মালিকপক্ষ। তবে তারা বলছে,বিষয়টি খোলাখুলিভাবে প্রকাশ না করার জোরালো শর্ত দিয়েছে জলদস্যুরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে বাংলানিউজের কাছে প্রকারান্তরে একথা স্বীকার করে নেন জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান এমভি জাহান মণির মালিক প্রতিষ্ঠান ব্রেভ রয়্যাল শিপিং ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মেহেরুল করীম।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘মুক্তিপণ দিয়ে হোক অথবা অন্য কোনো উপায়ে হোক আমরা আলোচনার মাধ্যমে আমাদের নাবিকদের উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একবার যখন আলোচনা শুরু করেছি, সবাই দোয়া করেন, নাবিকদের মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনবোই। ’
‘জলদস্যুরা কত টাকা মুক্তিপণ চেয়েছে—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এত স্পর্শকাতর আর আমরা ওই পক্ষ থেকে এতটাই চাপ আর শর্তের মধ্যে আছি যে, এনিয়ে আমাদের পে খোলাখুলি কিছু বলা সম্ভব নয়। ’
মুক্তিপণের টাকা পৌঁছে দিতে বা আলোচনা চালিয়ে যেতে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যা করছি নিজেরাই করছি। লবিস্টের প্রয়োজন হয়নি। ’
মালিকপক্ষের লুকোচুরিতে নাবিকদের পরিবারের মধ্যে বিভ্রান্তি ও হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে --এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘নাবিকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই আমরা খোলাখুলি কিছু বলতে পারছি না। এতে বিভ্রান্ত হলে আমাদের দু:খ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। এখন আমরা চাই সবার সহযোগিতা। ’
এর আগে শুক্রবার সকালে মেহেরুল করীম বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন, জলদস্যুদের সঙ্গে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের কথা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে মুক্তিপণ নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি।
এমভি জাহান মণি’র নাবিকদের উদ্ধারে প্রধানন্ত্রীর হস্তপে কামনা করে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম প্রেসকাবের সামনে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। এতে অংশ নেন জিম্মি ১২ নাবিকের পরিবারের সদস্যরা।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়ার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে জিম্মি জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট শাহরিয়ার রাব্বীর মা বিলকিস রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘সোমালিয়ান জলদস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করেছে কিনা, জাহাজে জিম্মি আমাদের সন্তানরা কেমন আছে এসব বিষয়ে জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান কিছুই আমাদের জানাচ্ছেন না। ’
মালিকপক্ষ মুক্তিপণের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিলকিস রহমান বলেন, ‘তারা কিছুই বলতে চাইছেন না। ’
উল্লেখ্য, গত পাঁচ ডিসেম্বর ছিনতাইয়ের পর জাহাজটি শুক্রবার রাত ১টা ২৩ মিনিটে সোমালিয়ায় পৌঁছে। জাহাজটি যে স্থানে নোঙ্গর ফেলেছে সেই গারাকাদ অঞ্চলটি ‘সোমালিয়ান জলদস্যুদের মুক্তাঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত। জাহাজটিতে ২৫ নাবিক ও এক নাবিকের স্ত্রীকে জিম্মি করে রেখেছে জলদস্যুরা।
নোঙ্গর করার পর ১১ ডিসেম্বর রাতে এমভি জাহান মণির স্যাটেলাইট ফোন সচল করে জলদস্যুরা। পরদিন দুপুর আড়াইটায় এবং সন্ধ্যা সাতটায় দু’দফা জাহাজ মালিকের সঙ্গে জলদস্যুরা স্যাটেলাইট ফোনে যোগাযোগ করে। পরদিন ১২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় জাহাজের মালিকপরে সঙ্গে জলদস্যুদের যোগাযোগ।
এর মধ্যে কয়েক দফা যোগাযোগ করে নাবিকদের পরিবারের মাধ্যমে ১০৫ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে জলদস্যুরা।
কিন্তু জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান ব্রেভ রয়্যাল শিপিং ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প থেকে মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি বরাবর অস্বীকার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১০